কুরআন মানব জাতির জন্য হেদায়েত গ্রন্থ। এ কথা সুরা বাকারার শুরুতেই আল্লাহ ঘোষণা করেছেন। অতঃপর দীর্ঘ আলোচনা, বিধান ও নসিহতের মাধ্যমে তা শেষ হয়েছে। তারপরই মানুষকে সতর্কতার বর্ণনা দিয়ে শুরু হয়েছে সুরা আল-ইমরান। এ সুরার শুরুতেই শুধু তারই ইবাদত ও তার নিজের গুণ বর্ণনা করেছেন।
Advertisement
আসমানি কিতাব নাজিলের বর্ণনা করেছেন। সর্বশেষ কুরআন নাজিলের কথা বলে তাতে উল্লেখিত নির্দশনসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের কথা বলেছেন। যারা এ বিধানের বিপরীত করবে তাদের প্রতিবিধানই বা কী হবে তা বর্ণনা করেছেন।
মানুষের কর্মের ব্যাপারে আল্লাহর অজানা কোনো কিছুই নেই। তা বর্ণনা করে আল্লাহ তাআলা বলেন-
الم - اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ - نَزَّلَ عَلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ وَأَنزَلَ التَّوْرَاةَ وَالْإِنجِيلَ - مِن قَبْلُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَأَنزَلَ الْفُرْقَانَ إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِ اللَّهِ لَهُمْ عَذَابٌ شَدِيدٌ وَاللَّهُ عَزِيزٌ ذُو انتِقَامٍ - إِنَّ اللَّهَ لَا يَخْفَىٰ عَلَيْهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ -
Advertisement
অনুবাদ১. আলিফ লাম মীম।
২. আল্লাহ ব্যতিত কোনো মাবুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সদা বিরাজমান।
৩. (হে রাসুল) তিনি আপনার কাছে কিতাব (কুরআন) নাজিল করেছেন, যা আগে নাজিলকৃত কিতাবসমূহের সত্যতা প্রমাণকারী এবং তিনি ইতিপূর্বে মানব জাতির পথ-প্রদর্শক হিসেবে তাওরাত ও ইঞ্জিল নাজিল করেছেন এবং তিনিই ফোরকান (কুরআন) নাজিল করেছেন।
৪. নিশ্চয় যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অবিশ্বাস করে তাদের জন্য কঠিন শাস্তি রয়েছে এবং আল্লাহ অত্যন্ত পরাক্রমশালী, প্রতিশোধ গ্রহণকারী।
Advertisement
৫. নিশ্চয় আল্লাহ (সেই সত্ত্বা) যার কাছে আসমান এবং জমিনের কোনো বিষয়ই গোপন নেই।
আয়াত নাজিলের কারণসুরা আল-ইমরানের প্রথম পাঁচ আয়াত থেকে জানা যায়, আল্লাহ তাআলা প্রথমেই বান্দাকে তার ইবাদত করার নির্দেশ দিয়ে তার শ্রেষ্ঠ নিদর্শনসমূহের (আসমানি কিতাব) সঙ্গে নিজেদের সম্পর্ক তৈরি করার ইঙ্গিত এভাবে দিয়েছেন যে, যার এর বিরপরীত করবে তাদের শাস্তি হবে কঠোর। কেননা আল্লাহর কাছে মানুষের কোনো আমলই গোপন নেই। আমল অনুযায়ী তিনি সুফল, শাস্তি ও প্রতিশোধ আদান-প্রদান করবেন।
সুরা আল-ইমরানের শুরুতেও আল্লাহ তাআলা তার নিজস্ব ভঙ্গিতে এমন শব্দ ব্যবহার করেছেন। যার অর্থ ও ভাব একমাত্র আল্লাহ-ই ভালো জানেন।
পরবর্তী আয়াতে আল্লাহ তাআলা খ্রিস্টানদের ভ্রান্ত আকিদা ও মতবাদের নিষ্প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। আল্লাহ নিজেই বলেন, আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত কোনো মাবুদ নেই। আর তিনি চিরঞ্জীব অর্থাৎ তার মৃত্যু নেই এবং তিনি সদা বিরাজমান।
খ্রিস্টানরা ৩ জনের উপাসনা করে। হজরত ঈসা আলাইহিস সালামকে আল্লাহর পুত্র মনে করে। এ আয়াতে আল্লাহ তাআলা তাদের সে কথা জবাব দিয়ে দিয়েছেন যে, খ্রিস্টানদের কথা চরম ভিত্তিহীন। আল্লাহ ব্যতিত কোনো মাবুদ নেই। এটাই চিরন্তন সত্য কথা।
আর আল্লাহ বৈশষ্টি হলো তিনি সদা বিরাজমান অর্থাৎ তিনি আগেও জীবিত ছিলেন এখনও জীবিত আছেন এবং সর্বদা জীবিত থাকবে। মৃত্যুর কোনো কল্পনাও তাঁর সম্পর্কে করা যায় না। আর এ ঘোষণাই তিনি সুরার শুরুতে পেশ করেছেন।
অতঃপর আল্লাহ তাআলা কুরআনের আগে নাজিলকৃত সে সব কিতাব তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুরসহ অন্যান্য সহিফগুলোর সত্যায়ন করেছেন। যা যুগে যুগে মানব জাতির হেদায়েতের জন্য নাজিল করা হয়েছিল। আর সে সব কিতাবেও পবিত্র কুরআন ও বিশ্বনবির আগমনের সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল।
আরও পড়ুন > আরশের ধনভাণ্ডার থেকে নাজিল হয়েছে যে দোয়া
কুরআনসহ সব আসমানি কিতাবই আল্লাহর অন্যতম নির্দশন। যারা এ সবে বিশ্বাস করবে না, আল্লাহ তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করবেন। আল্লাহ যত বড় তার শাস্তি ও প্রতিশোধও তত বড়।
আল্লাহ তাআলা মানুষকে বিশেষভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন যে, মানুষ যা করে কিংবা মনে মনে কোনো সংকল্প করলে আল্লাহ হয়তো জানবেন না। কিন্তু না, বিষয়টি যে তেমন নয়; আল্লাহ তাআলা আয়াত নাজিল করে মানুষকে সতর্ক করতে শুরুর প্রথম দিকেই বলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ (সেই সত্ত্বা) যার কাছে আসমান এবং জমিনের কোনো বিষয়ই গোপন নেই।’
সুতরাং এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন এবং তার নিদর্শনসমূহে বিশ্বাস স্থাপনসহ তার বিধি-নিষেধগুলো যথাযথভাবে পালন করা জরুরি। আর এতেই রয়েছে চূড়ান্ত কল্যাণ ও সফলতা। মানুষের প্রতি আল্লাহর সে বিধি-নিষেধ এবং চূরান্ত সফলতার কথাগুলো ধারাবাহিকভাবে আলোচিত হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কুরআনের ধারাবাহিক বর্ণনার সঙ্গে সঙ্গে সে বিধানগুলো বাস্তবজীবনে পালন করার তাওফিক দান করুন। দুনিয়া ও পরকালের চূরান্ত সফলতা দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস