লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমদ বলেছেন, ‘আগামী দিনগুলো খুবই কঠিন। আমি বার বার দেশবাসীকে সাবধান করে দিচ্ছি। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দলের প্রতি আমি সাবধান বাণী উচ্চারণ করছি। যতই দিন যাবে, ততই বিশৃঙ্খলা হবে। যতই দিন যাবে, রক্তপাত বৃদ্ধি পাবে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘বিরোধী দলগুলোকেও সংযত হতে হবে, সরকারকেও নমনীয় হতে হবে। সরকারকে আলোচনার জন্য এগিয়ে আসতে হবে। কেউ যদি মনে করে, আমরা একাই দেশ চালাবো, এটা হবে না। দেশ চালাতে হলে প্রত্যেকের অংশগ্রহণের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কেউ বিরোধী দলে থাকবে, কেউ সরকার পরিচালনা করবে এটাই নিয়ম। কিন্তু এটার সিদ্ধান্ত নেয়ার মালিক হলো জনগণ।’
সন্ধ্যায় রাজধানীর তেজগাঁওয়ে এলডিপি কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এক যোগদান অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন অলি আহমদ।
তিনি বলেন, ‘সৎ রাজনীতি চায় মানুষ, সুন্দর রাজনীতি চায় মানুষ, জনগণের প্রতিনিধির মাধ্যমে সংসদ গঠন করতে চায়, সরকার গঠন করতে চায়। মানুষের সেই আশা পূরণ হচ্ছে না। আমরা যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম, আমাদের সামনে যে লক্ষ্য ছিল সেই লক্ষ্য আজও পূরণ হয়নি। আমাদের সংগ্রাম অব্যাহত আছে।’
Advertisement
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কয়েকটা সময় কঠিন ছিল, তার মধ্যে অন্যতম কঠিন সময় হলো ২০১৮ সাল। রাজনৈতিকভাবে কঠিন, অর্থনৈতিকভাবেও খুবই কঠিন। আপনারা নিশ্চয়ই পত্র-পত্রিকা পড়েন। বাংলাদেশে এমন কোনো ব্যাংক নেই যেখানে তারল্য সংকট নেই। অনেক ব্যাংক তাদের মূলধন পর্যন্ত দুর্নীতির মাধ্যমে পাচার করেছে। লক্ষ লক্ষ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে।
বিগত ২০ বছরে যারা বিদেশে টাকা পাচার করেছে, যারা দ্বিতীয় হোম করেছে মালয়েশিয়া এবং অন্যান্য দেশে তাদের বিচারের আওতায় আনা হয়নি। কারণ যে যখন সরকারে থাকে তাদের মদদপুষ্টরাই বিদেশে সেকেন্ড হোম বানায়।’
পররাষ্ট্র সচিবের কারণে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান হচ্ছে না অভিযোগ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ‘কারণ তিনি একটা আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনে ১৭ বছর চাকরি করেছেন। সেই আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনের প্রায় ২০০ লোক চাকরি নিয়ে বর্তমানে কক্সবাজারে অবস্থান করছে।
আজকে যদি রোহিঙ্গারা ফেরত যায়, তাহলে ২০০ লোক চাকরি হারা হবে এবং পররাষ্ট্র সচিব চাকরি থেকে রিটায়ার্ড হওয়ার পরে আবার আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশনে তার চাকরি হবে। সুতরাং এই কারণগুলোর জন্য বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, সরকারকে এটা বুঝতে হবে।’
Advertisement
অলি বলেন, ‘সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আমি বঙ্গবন্ধু কন্যাকে অনুরোধ করবো রক্তপাত এড়ান। গালি দিয়ে, শাসিয়ে, সমালোচনা করে সমস্যার সমাধান হবে না। বসেন, আলোচনা করেন কিভাবে সুন্দর নির্বাচন হবে। প্রত্যেকটা রাজনৈতিক দল কীভাবে অংশগ্রহণ করবে। সকলের জন্য সমান সুযোগ কিভাবে হবে এইগুলো নিয়ে কথা বলেন।’
শুধু রাষ্ট্রপতি ব্যতীত সবাইকে দুর্নীতি দমন কমিশন ডাকতে পারবে এমন আইন প্রণয়নের দাবি জানিয়ে এলডিপি সভাপতি বলেন, ‘দলীয়ভিত্তিতে বিচারকার্য চলছে। আমি তো মনে করি এই সরকার যখন ক্ষমতা থেকে যাবে তখন এই জাজেরা তাদের ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলাবেন।
যাবজ্জীবন জেল দেবে, ১০ বছর জেল দেবে, ৫ বছর জেল দেবে। এখন যারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টুঙ্গিপাড়ায় যান তারাই একসময় মোড় দেবেন। তাই এখনও সময় আছে জাতীয় সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সমাধান করেন, সকলের অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত করেন।’
অনুষ্ঠানে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব শাহাদাৎ হোসেন সেলিম বলেন, ‘২০ দল সংস্কার করুন। যাদের নিবন্ধন আছে, তাদের সামনে এনে সুন্দর ঐক্য করুন।’
অন্যদের মধ্যে এলডিপি মহাসচিব ড. রোদোয়ান আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যাপক মো. আব্দুল্লাহ, প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন মোস্তফা প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
কেএইচ/এসএইচএস/পিআর