এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গু আক্রান্ত হওয়ার সর্বোচ্চ রেকর্ড ছুঁয়েছে দেশ। চলতি বছর অর্থাৎ ২০১৮ সাল শেষ হতে এখনও আড়াই মাসের বেশি বাকি থাকলেও ইতোমধ্যেই সাত সহস্রাধিক নারী, পুরুষ ও শিশুর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার নতুন রেকর্ড হয়েছে।
Advertisement
এর আগে ২০০২ সালে সর্বোচ্চ ৬ হাজার ২৩২ জনের আক্রান্ত হওয়ার রেকর্ড ছিল। তবে ডেঙ্গুজনিত মৃতের সংখ্যায় এখনও ২০০০ সালের ৯৩ জনের মৃত্যুর রেকর্ডই সর্বাধিক। চলতি মৌসুমে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।
ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হওয়ার সর্বোচ্চ রেকর্ডের ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. সানিয়া তহমিনা ঝরা নতুন রেকর্ডের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ২০০০ সালে ডেঙ্গু রোগ শনাক্ত করার জন্য তেমন যন্ত্রপাতি ছিল না, চিকিৎসকদের মধ্যেই রোগ কিংবা এর সুচিকিৎসা সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা ও জ্ঞান ছিল না। তাছাড়া মানুষের মধ্যেও রোগ শনাক্তকরণের ব্যাপারে তেমন সচেতনতা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে সবার মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধির ফলে পরিসংখ্যান অনুসারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যার নতুন রেকর্ড হয়েছে। তবে আগের তুলনায় মৃতের সংখ্যা কমেছে।
তিনি বলেন, জুন-জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত ডেঙ্গু মৌসুম। এ হিসেবে চলতি মাসে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ধীরে ধীরে কমে আসবে। তবে এখন সারা বছরই ডেঙ্গু রোগী পাওয়া যাচ্ছে।
Advertisement
ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসার বিষয়ে নতুন গাইডলাইন প্রণয়ন, ডেঙ্গু রোগীর ফ্লুইড ম্যানেজমেন্ট তথা আধুনিক চিকিৎসা সম্পর্কে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞদের প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে। রাজধানীর বড় সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে ডেঙ্গু শনাক্তকরণ পরীক্ষা করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানীতে এডিস মশাবাহিত ডেঙ্গুর প্রকোপ কমছে না। চলতি মাসের প্রথম ১০ দিনেই রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ৯২৮ জন নারী, পুরুষ ও শিশু ভর্তি হয়েছেন।
তাদের মধ্যে ২২৪ জন এখনও বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। গত ২৪ ঘণ্টায় (১০ অক্টোবর) ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা ৫২ জন। সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। তবে চলতি মাসে এখনও পর্যন্ত মৃত্যুর তথ্য পাওয়া যায়নি।
স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বছরওয়ারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০০০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের সংখ্যা যথাক্রমে ৫৫৫১ জন, ২৪৩০ জন, ৬২৩২ জন, ৪৮৬ জন, ৩৪৩৪ জন, ১০৪৮ জন, ২২০০ জন, ৪৬৬ জন, ১১৫৩ জন, ৪৭৪ জন, ৪০৯ জন, ১৩৫৯ জন, ৬৭১ জন, ১৭৪৯ জন, ৩৭৫ জন, ৩১৬২ জন, ৬০৬০ জন, ২৭৬৯ জন এবং ৭১৮৩ জন (১০ অক্টোবর পর্যন্ত)।
Advertisement
এই সময়ে মৃতের সংখ্যা যথাক্রমে- ৯৩ জন, ৪৪ জন, ৫৮ জন, ১০ জন, ১৩ জন, ৪ জন, ১১ জন, ০, ০, ০, ০, ৬ জন, ১ জন, ২ জন, ০, ৬ জন, ১৪ জন, ৮ জন এবং ১৭ জন।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক দশক পরপর ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ে। ২০০০ থেকে ২০০২ সাল- এই তিন বছরে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ছিল সর্বাধিক। ২০০৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্তের সংখ্যা এবং এর ফলে মৃতের সংখ্যা ছিল তুলনামূলক কম। এরপর ২০১৫ সাল থেকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়তে থাকে। গত চার বছরে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা বেড়েছে।
এমইউ/বিএ/জেআইএম