আশ্বিনের মধ্য দুপুরে রোদের তেজ বাড়তি থাকে। এদিনও ছিল তাই। সূর্য যেন মাথার উপরে খাড়া। দারুণ আলসে সময়। আঙ্গিনা বলতে যা বোঝায়, ঠিক তা নেই সিরাজগঞ্জ উল্লাপাড়ার শহীদুল ইসলামের বাড়িতে। বাড়ির সামনে বাঁশঝাড়। এমন জায়গায় বাঁশঝাড় একেবারে বেমানান ঠেকত, যদি না সারি সারি গরুগুলো বাঁধা না থাকত।
Advertisement
আরও পড়ুন >> হাজার কৃষকের সফল গল্পের কারিগর প্রাণ এ্যাগ্রো
অলস সময়ে গাভীগুলোর কোনোটি শুয়ে শুয়ে জাবর কাটছে, কোনোটি আবার দাঁড়িয়ে। বাছুরগুলো বিশেষ দূরত্বে বাঁধা বাঁশের সঙ্গে। পানির পাত্রও দেয়া আছে খানিক দূরে। বাঁশঝাড়ের পাশেই দোচালা টিনের ঘর। সেখানেও কয়েকটি গরু বাঁধা। চাল বেশ উঁচুতে। ঘরের চারদিক খোলামেলা। সহসাই আলো-বাতাস প্রবেশ করতে পারছে খামারে। টিনের চাল উঁচুতে থাকায় রোদের উত্তাপও কম। দেখতে অগোছালো হলেও একটি আদর্শ খামারের সবই মিলছে শহীদুল ইসলামের বাড়িতে।
বিশাল আকৃতির এতগুলো গাভী দেখে যে কেউ গরুর বাথান বলে মনে করতে পারেন। একটি সফল মানুষের সফল খামারের চিত্র এটি।
Advertisement
শহীদুল ইসলামের স্ত্রী হাওয়া বেগমই মূলত খামারটি দেখভাল করেন। প্রতিটি গরুই হাওয়া বেগমের কাছে সন্তানের মতো। দিন-রাত খামারের যত্নে কাটে তার।
১৩ বছর আগে একটিমাত্র গাভী দিয়ে যাত্রা শুরু। যে গাভী দিয়ে খামারের শুরু সেটি এখনও আছে। বর্তমানে ছোট-বড় মিলে ১৪টি গাভী এবং একটি ষাঁড় রয়েছে হাওয়া বেগমের খামারে। এই সময়ে বিক্রি করেছেন বেশ কয়েকটি বাছুর।
আরও পড়ুন >> বর্তমানে বিশ্বের ১৪০ দেশে যাচ্ছে প্রাণ-এর পণ্য : আহসান খান চৌধুরী
দুই বছর আগেও খামারের চিত্র ঠিক এমন ছিল না। নির্দিষ্ট জায়গায় তথাকথিত পদ্ধতিতে গরুগুলো বেঁধে রাখা হতো। ঘরের চাল ছিল প্রায় মাথার উপরে। শাহাজাদপুরে প্রাণ ডেইরি প্রতিষ্ঠার পরই খামার নিয়ে ধারণা পাল্টে যায় শহীদুল আর হাওয়া বেগমের। প্রাণ ডেইরির পক্ষ থেকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয় সিরাজগঞ্জের খামারিদের। খামার তৈরি, পশু ভালো রাখা আর অধিক উৎপাদনের জন্য কী কী করণীয় তা হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়া হয় চাষীদের। পাল্টে যায় খামারের চিত্র। ফলনও ভালো পেতে থাকেন তারা।
Advertisement
এখন আর কোনো নির্দিষ্ট জায়গায় গরু বেঁধে রাখেন না হাওয়া বেগম। খড়, খৈল, ভুসিসহ প্রাকৃতিক খাবারই পরিবেশন করেন। নির্দিষ্ট সময় ধরে নয়, পরিষ্কার পানির পাত্র দেয়া আছে, সেখান থেকে ইচ্ছামতো পানি পান করছে গাভীগুলো। মিলের ফিড পরিবেশন করা হয় না বিধায় গাভীগুলোর স্বাস্থ্যঝুঁকিও কম। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন প্রাণ ডেইরির পশু চিকিৎকরা।
খামার দেখতে গিয়ে কথা হয় হাওয়া বেগমের সঙ্গে। শোনান সফলতার গল্প। বলেন, মানুষের জানার শেষ নেই। ১৩ বছর আগে একটি গাভী দিয়ে শুরু করি। এখন ১৫টি। এর মধ্যে পাঁচটি থেকে এখন দুধ পাচ্ছি। ছয়টি গাভী বাছুর দেবে অল্পদিনের মধ্যে। এ কারণে আমাদের ব্যস্ততাও অনেক বেশি।
আরও পড়ুন >> নেদারল্যান্ডসে ৫০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করবে প্রাণ
হাওয়া বেগম বলেন, প্রাণ ডেইরির কর্মকর্তারা এখানে নিয়মিত আসেন। খামার নিয়ে আমাদের আগে যে ধারণা ছিল তা পাল্টে দিয়েছেন তারা। প্রশিক্ষণ ও পরিচর্যার ব্যাপারে নতুন ধারণা পেয়ে অধিক লাভের দেখা মিলছে।
‘যে গাভী আগে ২০ লিটার দুধ দিত, এখন সেটি ২১ বা ২২ লিটার করে দুধ দেয়। এক লিটার দুধ বেশি পাওয়া একজন খামারির জন্য অনেক কিছু। এছাড়া নিয়মিত পরিচর্যার কারণে গরুর স্বাস্থ্যঝুঁকিও আগের থেকে কমেছে।’
খামারি শহীদুল ইসলাম বলেন, আগে অন্য কোম্পানিতে দুধ দিতাম। কিন্তু তারা নিয়মিত নিত না। ফলে দুধ বিক্রি নিয়ে সমস্যায় পড়তে হতো। প্রাণ কোম্পানি আসার পর আমাদের আর দুধ বিক্রি নিয়ে চিন্তা করতে হয় না। এখন সব দুধ প্রাণকেই দেই। বাড়ির পাশেই বিক্রয় কেন্দ্র। দামও যাচাই করে নিতে পারছি।
‘বলতে পারেন, দুই বছর আগে প্রাণ ডেইরি আসার পর এই অঞ্চলের খামারিদের মধ্যে প্রতিযোগিতা বেড়েছে। দুধ বিক্রি নিয়ে দরকষাকষিও বেড়েছে। ফলে স্থানীয় খামারিরা বেশি লাভবান হচ্ছেন’- যোগ করেন তিনি।
এএসএস/এমএআর/আরআইপি