মুসলিম যুবক-যুবতির মাঝে ইজাব-কবুলের মাধ্যমে যে সম্পর্কের সূচনা হয় তাহলো বিয়ে। ইসলাম এ বিয়ের মাধ্যমেই দুই পরিবারের দুইজন যুবক-যুবতির মাঝে আজীবনের জন্য সেতুবন্ধন তৈরি করে দেয়। বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর নারী-পুরুষ উভয়ের সুসম্পর্ক বজায় রাখতে প্রত্যেকেরই রয়েছে আলাদা আলাদা দায়িত্ব ও কর্তব্য। যা পালনে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে শান্তি সুনিশ্চিত হয়।
Advertisement
ব্যক্তি ও পারিবারিক জীবনের শান্তি ও স্বস্থি বজায় রাখতে স্বামী-স্ত্রীর পারস্পরিক অধিকারগুলো যথাযথ আদায় করা জরুরি। আর তাহলো-
স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর করণীয়
> স্ত্রীর সাথে সবসময় ভালো আচরণ করা।> স্ত্রীর কোনো কথায় বা কাজে কষ্ট পেলে ধৈর্য্য ধারণ করা।> স্ত্রী উচ্ছৃঙ্খল, বেপর্দা চলাফেরা করতে থাকলে নম্র ভাষায় তাকে বোঝানো।> সামান্য বিষয় নিয়ে স্ত্রীর সাথে ঝগড়া-বিবাদ না করা; কথায় কথায় ধমক না দেয়া এবং রাগ না করা।> স্ত্রীর আত্মমর্যাদায় আঘাত আসে এমন বিষয়ে কথা না বলা এবং সংযত থাকা।> সন্দেহবশতঃ শুধু শুধু স্ত্রীর প্রতি কুধারণা না করা।> স্ত্রীর সম্পর্কে উদাসীন না থাকা।> সামর্থ্যানুযায়ী স্ত্রীর খোরপোষ দেয়া। তবে খোরপোষের নামে অযথা অপচয় যেন না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখা।> স্ত্রীকে নামাজ পড়া এবং দ্বীনের আহকাম মেনে চলার জন্য উৎসাহ দিতে থাকা।> স্ত্রীদেরকে হায়েয-নেফাসের মাসআলাগুলো ভালোভাবে শিক্ষা দেয়া। ইসলামি শরীয়তের পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করা।> একের অধিক স্ত্রী থাকলে সবার মাঝে সমতা রক্ষা করা জরুরি।> স্ত্রীদের চাহিদানুযায়ী তাদের সাঙ্গে মেলামেশা করা। তাদের চাহিদার প্রতি সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া। তাদের কল্যাণকর মতামতের ব্যাপারে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া।> স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া আজল না করা। অর্থাৎ মেলামেশার সময় শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত স্বাভাবিক স্থান ত্যাগ না করা।> একান্ত নিরুপায় না হলে স্ত্রীকে তালাক না দেয়া। কেননা ইসলামে সবচেয়ে নিকৃষ্ট বৈধ কাজ হলো তালাক। যদি তালাক দিতেই হয় তবে ইসলামি শরিয়তের আলোকে তালাক প্রদান করা।> স্ত্রীর স্বাভাবিক চাহিদা অনুযায়ী থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা।> স্ত্রীকে নিয়ে মাঝে মাঝে নিকটাত্মীয়দের সাথে দেখা-সাক্ষাত করা। স্বামী সময় না পেলে অন্তত স্ত্রীদেরকে আত্মীয়দের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের সুযোগ করে দেয়া।> কোনোভাবেই স্ত্রীর সঙ্গে মেলামেশা বর্ণনা বা চিত্র অন্যের কাছে প্রকাশ না করা।> স্ত্রীর অধিকারের প্রতি সর্বোচ্চ সতর্ক থাকার পরও যদি স্ত্রী বেপরোয়া হয় তবে প্রয়োজনে স্ত্রীকে প্রথমে বারবার সতর্ক করা। অতঃপর শাসন করা। তবে ইসলামি শরীয়ত যতটুকু অনুমতি দিয়েছে তার চেয়ে বেশি শাসন না করা।
Advertisement
আরও পড়ুন > যেসব ক্ষেত্রে সাময়িকভাবে বিয়ে করা নিষিদ্ধ
স্বামীর সঙ্গে স্ত্রীর করণীয়
> সব সময় স্বামীর মন জয় করার চেষ্টা করা।> স্বামীর সাথে অসংযত আচরণ না করা। স্বামীকে কষ্ট না দেয়া।> শরীয়তসম্মত প্রত্যেক কাজে স্বামীর আনুগত্য করা। গুনাহ এবং শরীয়ত বিরোধী কাজে অপারগতা তুলে ধরা এবং স্বামীকে নরম ভাষায় বোঝানো।> প্রয়োজনাতিরিক্ত ভরণ-পোষণ দাবি না করা।> পরপুরুষের সাথে কোনো ধরনের সম্পর্ক না রাখা।> স্বামীর অনুমতি ছাড়া কাউকে ঘরে ঢোকার অনুমিত না দেয়া।> অনুমতি ছাড়া ঘর থেকে বের না হওয়া।> স্বামীর সম্পদ হেফাযত করা। অনুমতি ছাড়া সেখান থেকে কাউকে কোনো কিছু না দেয়া।> স্বামীকে অসন্তুষ্ট করে অতিরিক্ত নফল নামাযে মশগুল না থাকা। অতিরিক্ত নফল রোযা না রাখা।> স্বামী মেলামেশার জন্য আহবান করলে শরীয়তসম্মত কোনো ওযর না থাকলে আপত্তি না করা।> স্বামীর আমানত হিসেবে নিজের ইজ্জত-আব্রু হেফাযত করা। কোনো ধরনের খেয়ানত না করা।> স্বামী দরিদ্র কিংবা অসুন্দর হওয়ার কারণে তাকে তুচ্ছ না করা।> স্বামীকে কোনো গুনাহের কাজ করতে দেখলে আদবের সাথে তাকে বিরত রাখা।> স্বামীর নাম ধরে না ডাকাই উত্তম।> কারো কাছে স্বামীর বদনাম, দোষ-ত্রুটি বর্ণনা না করা।> শ্বশুর-শাশুড়িকে সম্মানের পাত্র মনে করা। তাদেরকে ভক্তি-শ্রদ্ধা করা। ঝগড়া-বিবাদ কিংবা অন্য কোনো উপায়ে তাদের মনে কষ্ট না দেয়া।> সন্তানদের লালন-পালনে অবহেলা না করা।
সুখী দাম্পত্য জীবন গঠনে স্বামী-স্ত্রীকে তাদের পারস্পরিক দায়িত্ব ও অধিকারগুলোর প্রতি যথাযথ ভূমিকা পালন করা জরুরি।
Advertisement
আল্লাহ তআলা মুসলিম উম্মাহর সব স্বামী-স্ত্রীকে তাদের দায়িত্বগুলো যথাযথ পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/আরআইপি