কক্সবাজারে ১০ লাখ রোহিঙ্গার অবস্থানের কারণে পর্যটন শিল্পের ওপর কোনো প্রভাব পড়েছে কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তর দিতে মাইক অন করলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামাল। বললেন, ‘দেশীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের কারণে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে। আমরা তাদের কেন আশ্রয় দিয়েছি? মানবতার জননী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে জায়গা দিয়েছেন। তাদের জন্য চলতি অর্থবছরে বাজেট রেখেছেন। ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে বিশ্ব নেতাদের উদ্দেশে দেয়া ভাষণে এ বিষয়টি উঠে আসবে।’
Advertisement
পাশ থেকে সাংবাদিকরা আবারও প্রশ্ন করলেন- দেশীয় ষড়যন্ত্রে কারা কারা জড়িত? তবে সেই প্রশ্নের উত্তর দিলেন না মন্ত্রী। কক্সবাজারের পর্যটন শিল্পে রোহিঙ্গাদের কোনো প্রভাব আসলেই আছে কিনা- সেই উত্তরও দেননি তিনি।
মঙ্গলবার বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনের প্রধান বক্তা ছিলেন বিমানমন্ত্রী। নিজের লিখিত বক্তব্য পাঠ করার পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি।
সাংবাদিকদের হাতে ধরিয়ে দেয়া একটি প্রেস নোটে পর্যটন বিষয়ে সরকারের ‘মহাপরিকল্পনা’র কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে এক সাংবাদিক মন্ত্রীকে প্রশ্ন করলেন- পর্যটন নিয়ে সরকার কী মহাপরিকল্পনা নিয়েছে, উদ্যোগ গুলো কী কী?
Advertisement
উত্তরে মন্ত্রী বললেন, ‘আমি তো লিখিত বক্তব্য পড়লাম, পর্যটন দিবসের কর্মসূচির প্রচারের বিষয়ে আপনাদের (মিডিয়ার) সহযোগিতা চাইলাম।’
এই প্রশ্নের উত্তরেই তিনি আরও বলেন, ‘পর্যটনের বিকাশে ও বাংলাদেশকে পরিচয় করিয়ে দিতে আমি মন্ত্রী হওয়ার পর ইতালির মিলানে গিয়েছি। যা আগে কোনো মন্ত্রী যাননি। দুবাই গিয়েছি, কলকাতা গিয়েছি। ঈদের দিন দিল্লি গিয়েছি। আমার ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে ঈদ না করে আমি পর্যটনের জন্য দিল্লি যাই, মুম্বাই যাই। উন্নত দেশগুলো কীভাবে ট্যুরিজম সেক্টরকে প্রমোট করছে তা কল্পনাই করা যায় না। তারপরও আমি বলবো- ২৭ বছর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে দেশের মান-সম্মান ফিরিয়ে এনেছেন।
প্রধানমন্ত্রীর ফ্লাইট পরিচালনার আগে নারী ক্রু সৈয়দা মাসুমা মুফতির ডোপ টেস্ট পজিটিভ হওয়ায় অভিযুক্ত তাকে ভিভিআইপি ফ্লাইট থেকে বহিষ্কার করা হয়। দায়িত্বে অবহেলা এবং ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টার অভিযোগে বিমানের কাস্টমার সার্ভিসের ডিজিএম নুরুজ্জামান রঞ্জুকেও গ্রাউন্ডেড করা হয় সোমবার। মঙ্গলবার তাকে আবারও ডিউটি দেয়া হয়েছে।
এত বড় অপরাধের পর কীভাবে তাকে ডিউটি দেয়া হল? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘তাকে (ক্রু) সাসপেন্ড করা হয়েছে জানি। তদন্ত হচ্ছে। তার বস রঞ্জুকে ডিউটি দেয়া হয়েছে- তা আমি জানি না। আমি এখনি ফোন করে এমডিকে বিষয়টা জিজ্ঞেস করবো।’
Advertisement
দক্ষিণ এশিয় দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের গ্রোথ সবচেয়ে কম। এটা গুলশানের হলি আর্টিসানের হামলার কোনো প্রভাব কিনা? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আইএস নামে একটি প্রতিষ্ঠান (সংগঠন হবে) হলি আর্টিসানে হামলা চালায়। ওরা এখনও তৎপর। এর পেছনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার শত্রুরা দায়ী। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, এটা তাদের কাজ। এখন আমরা ঘুরে দাঁড়াচ্ছি।’
মন্ত্রীর বক্তব্যে ট্যুরিজম বোর্ডের নানা কর্মসূচির বিষয় থাকলেও ট্যুর অপারেটরস অব বাংলাদেশের (টোয়াব) দিনব্যাপী কর্মসূচির কথা উল্লেখ করা হয়নি পর্যটন বোর্ডের কর্মসূচিতে। এমন কেন হল? টোয়াবের এক নেতার এই প্রশ্নে জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাকে যে লিখিত বক্তব্য দেয়া হয়েছে সেটা আমি সকালে পেয়েছি, সেটাই পড়েছি। ঠিকমতো দেখতে পারিনি। দেখেন, বোধয় লেখার মধ্যে কোনো ভুল হয়েছে।’
সাংবাদিকদের অনেক প্রশ্ন এড়িয়ে ট্যুরিজম বোর্ডের সিইওকে উত্তর দিতে বলেন মন্ত্রী। এ ছাড়া লিখিত বক্তব্যে পাঠের সময়ও মন্ত্রীকে অনেকটা অপ্রস্তুত মনে হচ্ছিল। বক্তব্যের সময় পর্যটন শিল্প প্রত্যক্ষ ১,১৭৮টি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করলেও তিনি এই সংখ্যা ১১৮৭ উল্লেখ করেন। এ ছাড়াও ট্যুরিজম বোর্ড টেকনাফে ‘এক্সক্লুসিভ’ ট্যুরিস্ট জোন করার কথা উল্লেখ করলেও মন্ত্রী সেখানে ‘এক্সিকিউটিভ’ ট্যুরিস্ট জোন করার পরিকল্পনার কথা জানান।
এর আগেও নিজের কর্মকাণ্ডের কারণে বেশ কয়েকবার সমালোচিত হয়েছেন বিমানমন্ত্রী। চলতি বছরের ১৩ মার্চ নেপালে ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের পরদিন কাঠমান্ডু গিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীনদের দেখতে না গিয়ে ৭ ঘণ্টা হোটেলে অবস্থান করে সমালোচিত হন মন্ত্রী। পরে তার হোটেলে বাংলাদেশি সাংবাদিকরা উপস্থিত হলে তিনি তাদের সঙ্গে নিয়ে হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান।
এ ছাড়া কাঠমান্ডু হাসপাতালের আইসিইউতে বাংলাদেশের সাংবাদিকদে নিয়ে ঢোকার কারণে নেপালি সাংবাদিক ও চিকিৎসকদের সমালোচনার মুখে পড়েন তিনি।
এআর/এমবিআর/পিআর