সদ্য অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইন যাত্রীদের সুরক্ষা কিংবা কল্যাণে করা হয়নি বরং তা মালিক-শ্রমিকদের রক্ষার মাধ্যমে তাদের স্বার্থরক্ষার দলিলে পরিণত হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন যাত্রীকল্যাণ সমিতি ও নাগরিক সমাজ।
Advertisement
দেশের সড়ক যোগাযোগ সেক্টরের স্টেক হোল্ডার যাত্রী সাধারণ উল্লেখ করে যাত্রীকল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কিন্তু যাত্রী সাধারনের প্রতিনিধিত্ব না রেখে সংসদে অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইন পাশ করার মধ্য দিয়ে সরকারের অসহায়ত্বই ফুটে উঠেছে।
শনিবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে মুক্তি ভবনের প্রগতি মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী।
‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ যাত্রী ও নাগরিক সমাজের প্রতিক্রিয়া বিষয়ে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে যাত্রীকল্যাণ সমিতি।
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা টিআইবি ও নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে এই আইন সংসদে পাশ হবার আগেই জনসাধারণের মতামতের ভিত্তিতে ও তাদের জানার জন্য আইনের খসড়া উন্মুক্ত করে দেয়ার দাবি করেছিলাম। কিন্তু সেটা না করে সরকার শুরু থেকে আইনটি তৈরি ও প্রণয়ন করার ক্ষেত্রে অনেক গোপনীয়তা রক্ষা করেছে।
তিনি অভিযোগ করেন এই আইনে যাত্রী নয় বরং মালিক-শ্রমিকদের স্বার্থের প্রতিফলনই স্পষ্ট হয়েছে। সরকারের অংশীদার প্রভাবশালী পরিবহন মালিক-শ্রমিক সংগঠন এই আইন প্রণয়নে জড়িত ছিল। যে কারণে এই আইন তৈরিতে মালিক ও শ্রমিকদের স্বার্থই রক্ষা করা হয়েছে। দেশের ১৬ কোটি যাত্রী সাধারণকে বঞ্চিত করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যাত্রী হয়রানি, ভাড়া নৈরাজ্য, ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল, গণপরিবহনে নানা অনিয়ম, দুর্নীতি বন্ধ এবং বিআরটিএ ও ট্রাফিক বিভাগকে দুর্নীতিমুক্ত করার মতো সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা আমরা এই আইনে দেখতে পাইনি।
মোজাম্মেল হক বলেন, আমরা সড়ক দুর্ঘটনার মামলা তদন্তের জন্য আলাদা তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিলাম, আইনে সেটা উপেক্ষা করা হয়েছে। বেপরোয়া ও নিয়ন্ত্রণহীন গাড়ি চালনার ফলে দুর্ঘটনায় কোনো ব্যক্তি মারা গেলে ৭ বছর সাজা রাখার হাইকোর্টের নির্দেশনা উপেক্ষা করে ৫ বছর করা হয়েছে।
Advertisement
তিনি বলেন, দেশের সড়ক যোগাযোগ খাতে প্রধানতম অংশীদার যাত্রীরা। এরপর পরিবহন মালিক, শ্রমিক ও সরকার। দেশে সরকার নিবন্ধিত শক্তিশালী যাত্রী সংগঠন থাকার পরও অনুমোদিত সড়ক পরিবহন আইনে নিজেদের প্রতিনিধিত্ব না রাখায় সাধারণ যাত্রীরা বঞ্চিত হয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, আমরা গণপরিবহন পরিচালনা, ভাড়া নির্ধারণ, আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি, সড়ক নিরাপত্তা কমিটি, সড়ক দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণের জন্য বীমার বাইরে আলাদা তহবিল গঠনের দাবি জানিয়েছিলাম। সরকার তা উপেক্ষা করে তহবিল গঠনকে ঐচ্ছিক করেছে এবং ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের বিষয় সংযুক্ত করেছে। সেই ট্রাস্ট্রি বোর্ডেও যাত্রীদের প্রতিনিধিত্ব না থাকায় মালিক-শ্রমিকদের লুটপাটের বৈধতা দেয়া হয়েছে।
এ সময় বাংলাদেশ সংগঠনের সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেলের সমন্বয়ক মহিউদ্দিন আহমেদ, রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি এম এ হামিদ শরিফ, নাগরিক সমাজের অ্যাডভোকেট আবু বকর সিদ্দিক ও সমিতির সদস্য কাজী আমানুল্লাহ মাহফুজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
জেইউ/এমএমজেড/এমএস