সময়ের যৌক্তিক দাবি ও সংকট সমাধানে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের পর্ষদ সভায় আজ মঙ্গলবার বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হতে পারে। কার্যতালিকায় থাকা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়ের মধ্যে রয়েছে কোম্পানির জনবল কাঠামো (অর্গানোগ্রাম) পুনর্গঠন ও পরিচালকদের একাধিক শূন্যপদ পূরণ। কার্যতালিকায় আরও বিষয়াদি থাকলেও উল্লেখিত দুটি বিষয়ের প্রতি নজর সকলের। আজ সন্ধ্যায় বিমান পরিচালনা পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করা হবে বিষয়গুলো।
Advertisement
বিমানের কার্যপরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় দৈনন্দিন কাজে গতি আনতেই নতুন জনবল কাঠামো অনুমোদনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। পর্ষদ সভায় অনুমোদনের পর শিগগিরই সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করা হবে বলে জানিয়েছেন বিমানের একজন পরিচালনা পর্ষদ সদস্য।
নাম গোপন রাখার শর্তে বিমানের ওই পর্ষদ সদস্য জাগো নিউজকে জানান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক, চিফ কমার্শিয়াল অফিসার ও চিফ ফিন্যান্স অফিসারের মতো নতুন কয়েকটি পদসহ বিভিন্ন বিভাগে তিন হাজারের বেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীর পদ সৃষ্টি করা হয়েছে প্রস্তাবিত নতুন অর্গানোগ্রামে। আজ সন্ধ্যায় বিমান পরিচালনা পর্ষদ সভায় উপস্থাপন করা হবে এসব বিষয়। বোর্ড সভায় অনুমোদনের পর শিগগিরই বাস্তবায়ন করা হবে নতুন জনবল কাঠামো।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, বিমানের প্রধান কার্যালয়ে বিমান পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হবে। বিমানের বিগত পরিচালনা পর্ষদে জনবল কাঠামো পুনর্গঠনের চূড়ান্ত উদ্যোগ নেয়া হয়। এর মধ্যে বিমান পরিচালনা পর্ষদের সাবেক সদস্য এ কে আজাদের সাব-কমিটি প্রস্তাব করেছে পাঁচ হাজার ২১৯ জন জনবলের। বিমানের বর্তমান অর্গানোগ্রামের জনবল কাঠামোয় রয়েছে তিন হাজার ৪০০ জন। যদিও ক্যাজুয়াল কর্মীসহ মোট ছয় হাজার ৫৩২ জন।
Advertisement
সর্বশেষ পরিচালনা পর্ষদ সদস্য সুরাইয়া বেগমের নেতৃত্বাধীন সাব-কমিটি প্রস্তাব করেছে ৯ হাজার ৭৩৮ জন। তবে এ কে আজাদ সাব-কমিটিতে মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস, অ্যাডমিন সাপোর্ট স্টাফ, মোটর ট্রান্সপোর্ট, ডমেস্টিক স্টেশন, ফরেন স্টেশন ও পে গ্রুপ-১ এর জনবল যুক্ত ছিল না। এ দুটি সাব-কমিটির প্রস্তাব অর্গানোগ্রামে তুলে ধরা হবে।
জনবল চার হাজার ৪০০-এ নামিয়ে আনাসহ চারটি শর্তে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সকে ২০০৭ সালে কোম্পানি করা হয়। ওই সময় স্বেচ্ছা-অবসর স্কিমের আওতায় মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অনুযায়ী বিমানের জনবল কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটির কোনো কার্যকর জনবল কাঠামো তৈরি করা যায়নি।
উল্লেখ্য, বর্তমান পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০০৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত স্থায়ী জনবল ছিল চার হাজার ৫৯৯ ও অস্থায়ী (ক্যাজুয়াল) ৭৫৬ জনসহ সর্বমোট পাঁচ হাজার ৩৫৫ জন। একই বছর ৩১ ডিসেম্বর তা দাঁড়ায় স্থায়ী জনবল দুই হাজার ৭৯২ জন, অস্থায়ী এক হাজার ৪২৩ জনসহ সর্বমোট চার হাজার ২১৫ জনে। আবার ২০০৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরে স্থায়ী জনবল দুই হাজার ৮৭৪ জন, অস্থায়ী এক হাজার ৮০৯ জনসহ সর্বমোট চার হাজার ৬৮৩ জন হয়। বর্তমানে বিমানের জনবল ছয় হাজার ৫৩২ জন। এর মধ্যে স্থায়ী জনবল তিন হাজার ৪০০ জন এবং দুই হাজার ৩৪৮ জন অস্থায়ী পদ। এছাড়া বিএফসিসিতে ৬৯৪ এবং পোল্ট্রি কমপ্লেক্সে ৯০ জন কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছেন।
এদিকে বিমানের দুই হাজার ৩৪৮ জন অস্থায়ী শ্রমিকের পক্ষে দীর্ঘদিন থেকে জোরালো অবস্থান নিয়েছে বিমান শ্রমিক লীগ-সিবিএ।
Advertisement
এ বিষয়ে বিমান শ্রমিক লীগের (সিবিএ) সভাপতি মশিকুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, ‘বিমানে ক্যাজুয়াল শ্রমিকদের জন্য পদ ছিল না। তারা বিমানের জন্য কঠোর শ্রম দিলেও মূল্যায়ন পাননি। বিদায়বেলায় শূন্য হাতে বাড়ি ফিরেছেন। নতুন অর্গানোগ্রামের মাধ্যমে ক্যাজুয়াল শ্রমিক ও কর্মচারীদের মানবিক ও যৌক্তিক কারণে স্থায়ী করা উচিত বলে আমি মনে করি।’
আজকের সভায় ক্যাজুয়াল শ্রমিক ও কর্মচারীদের স্থায়ী না করা হলে বিমান শ্রমিক লীগ কী ভূমিকা নেবে- এমন প্রশ্নের জবাবে মশিকুর রহমান বলেন, ‘বিমান শ্রমিক লীগ নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে বিশ্বাসী। তবে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বর্তমান পর্ষদ শ্রমিকবান্ধব। ইতোপূর্বে পর্ষদ চেয়ারম্যান শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবি পূরণে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছেন।’
আরএম/এসআর/জেআইএম