অর্থনীতি

রেকর্ড গড়লো এমএল ডাইং

শেয়ারবাজারে লেনদেনের প্রথমদিনেই অভিহিত মূল্যে বা মাত্র ১০ টাকায় লেনদেনের মাধ্যমে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে এমএল ডাইং। এমএল ডাইংয়ের আগে দেশের শেয়ারবাজারে লেনদেনের প্রথমদিন মাত্র ১০ টাকায় আর কোনো কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হয়নি বলে জাগো নিউজকে জানিয়েছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।

Advertisement

যন্ত্রপাতি ও কলকব্জা ক্রয়, স্থাপন এবং প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের খরচ মেটাতে পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা উত্তোল করা এমএল ডাইংয়ের শেয়ার সোমবার থেকে শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হয়েছে।

লেনদেনের প্রথমদিন কোম্পানিটির শেয়ার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) ১০ টাকা থেকে ৩১ টাকা ৯০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এদিন কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরুর দাম ছিল ১০ টাকা। একপর্যায়ে তা বেড়ে ৩১ টাকা ৯০ পয়সা হয়। তবে লেনদেন শেষে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৪ টাকা ২০ পয়সা।

লেনদেন শুরুর আগে রোববার কোম্পানিটি ২০১৭ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই প্রতিবেদনে দেখা যায়, কোম্পানিটির আর্থিক অবস্থার অবনতি হয়েছে।

Advertisement

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের শেয়ারবাজারের ইতিহাসে এমএল ডাইং ছাড়া লেনদেনের প্রথম দিন আর কোনো কোম্পানির শেয়ার ১০ টাকায় লেনদেন হয়নি। দুর্বল মৌলভিত্তির কোম্পানি হওয়ার কারণে এমন ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, লেনদেনের প্রথমদিন আমি কোনো কোম্পানির শেয়ার ১০ টাকায় লেনদেন হতে দেখিনি। দেশের শেয়ারবাজারে এটাই প্রথম ঘটনা। বিনিয়োগকারীরা এখন বুঝতে পারছেন, তারা সচেতন হচ্ছেন। আমরা এটাই চাচ্ছি।

তিনি বলেন, এটা দুর্বল কোম্পানি। লেনদেনের আগে তারা আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে তাদের মুনাফা কমে গেছে। এর অর্থ হলো- এটা দুই নম্বরি মাল। পুঁজিবাজারে আসতে আসতে মুনাফা কমে গেছে।

ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ডিবিএ) সভাপতি মোস্তাক আহমেদ সাদেক জাগো নিউজকে বলেন, লেনদেনের প্রথমদিন শেয়ারের দাম ১০ টাকা, এমন ঘটনা আমার দীর্ঘ অভিজ্ঞতায় আগে কখনো দেখিনি। এমন কোম্পানি কীভাবে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন পায়, তা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (ডিএসই) ভেবে দেখা উচিত। এ ধরনের কোম্পানি পুঁজিবাজারের জন্য ক্ষতিকর।

Advertisement

চলতি বছরের ১৪ মে এমএল ডাইংকে আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলনের অনুমোদন দেয় পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। বিএসইসির অনুমোদন নিয়ে আইপও’র মাধ্যমে ১০ টাকা মূল্যে ২ কোটি শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা উত্তোল করে প্রতিষ্ঠানটি।

এরপর ডিএসইর অনুমোদন নিয়ে সোমবার শেয়ারবাজারে কোম্পানিটির শেয়ার লেনদেন শুরু হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী, লেনদেনের আগের দিন রোববার কোম্পানিটি তিন প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে ব্যবসা করে প্রতিষ্ঠানটির কর পরবর্তী মুনাফা হয়েছে ৬ কোটি ১৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে এই মুনাফার পরিমাণ ৪৪ পয়সা।

আগের বছরের একই সময়ে প্রতিষ্ঠানটি কর পরবর্তী মুনাফা করে ৬ কোটি ৫৫ লাখ ৩০ হাজার টাকা। আর শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ৪৭ পয়সা। সে হিসাবে আগের বছরের তুলনায় কোম্পানিটির মোট মুনাফা কমেছে ৪১ লাখ ৯০ হাজার টাকা এবং শেয়ারপ্রতি মুনাফা কমেছে ৩ পয়সা।

চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকের মতো ২০১৭ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত নয় মাসের হিসাবেও কোম্পানিটির মুনাফা কমেছে। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত ব্যবসা করে কোম্পানিটি মুনাফা করেছে ১৬ কোটি ৭৫ লাখ ৮০ হাজার টাকা। এতে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয়েছে ১ টাকা ১৯ পয়সা।

আগের হিসাব বছরের একই সময়ে কোম্পানিটি মোট মুনাফা করে ১৬ কোটি ৭৮ লাখ টাকা। এতে শেয়ারপ্রতি মুনাফা হয় ১ টাকা ২০ পয়সা। এ হিসাবে আগের বছরের তুলনায় এমএল ডাইংয়ের মোট মুনাফা কমেছে ২ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর প্রতিটি শেয়ারের বিপরীতে মুনাফা কমেছে ১ পয়সা।

এমএএস/জেডএ/এমএস