সংশয়ের একটা কালো মেঘ আকাশে উঁকি দিয়েছিল আগেই। ১১ সেপ্টেম্বর শেরে বাংলায় ব্যাটিং প্র্যাকটিসের সময় বাঁ হাতের অনামিকায় ব্যথা অনুভব করেছিলেন তামিম ইকবাল। মঙ্গলবার দিবাগত মধ্য রাতে দুবাইয়ের উদ্দেশে যাত্রা করার আগে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে তেমনটাই জানিয়েছিলেন তামিম।
Advertisement
বলেছিলেন, ‘কদিন পর ব্যাটিংয়ের কারণেই হোক কিংবা যে কোনো কারণেই হোক ব্যাটিংয়ের সময় আঙুলে ব্যথা অনুভব করেছি। খানিক ফুলেও গেছে।’
তারপর দুবাইতে কেটে গেছে ৭২ ঘণ্টা। কিন্তু দেশ সেরা ওপেনারের আঙুলের সমস্যা পুরো মেটেনি। আজ (শনিবার) দুবাইতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে দেশসেরা ওপেনারের খেলা নিয়ে সংশয় থেকেই গেছে। কাল মধ্য রাতে দুবাইয়ের উদ্দেশে যাত্রা শুরুর আগে প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু এমনটাই জানিয়েছেন।
মুঠোফোনে হযরত শাহজালাল বিমান বন্দর থেকে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে নান্নু জানিয়ে যান, ‘একাদশের রূপরেখা একরকম চূড়ান্ত। তবে এক নম্বর ওপেনার তামিম ইকবালের খেলা নিয়ে আছে সংশয়। আমরা শনিবার প্রথম ম্যাচে তাকেই পাবোই এমন নিশ্চয়তা নেই।’
Advertisement
প্রধান নির্বাচক যখন খেলার ২৪ ঘণ্টা আগে এমন কথা বলেন, তখন বুঝেই নিতে হবে তামিমের আঙুলের ব্যথা পুরোপুরি সারেনি। তার খেলার পথে খানিক বাঁধা বিপত্তি আছে। যে কারণে প্রধান নির্বাচকের মুখে সংশয়মূলক কথাবার্তা। ‘তামিম খেলবেই’- নিশ্চিত করে এমন কথা বলতে পারেননি। উল্টো বলেন, ‘তামিমের খেলা নিয়ে ডাউট আছে।’
এখন কথা দুটো- তামিম খেলবেন, তামিম খেলবেন না। হ্যাঁ, তামিম খেললে এক কথা। আর তামিম না খেললে কথা ভিন্ন। তামিম খেললে দল সাজানো নিয়ে কোনই জটিলতা থাকবেনা। কারণ একাদশের সম্ভাব্য রুপরেখা তৈরি। সব্যসাচী ক্রিকেটার ও বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানকে ধরে ব্যাটসম্যান সাতজন (তামিম, লিটন, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, মিঠুন ও মোসাদ্দেক)। সঙ্গে তিন পেসার অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, বাঁ-হাতি মোস্তাফিজ আর রুবেল। ১০ জন হয়ে গেল। রইলো বাকি এক।
সেই এক কে? বাড়তি ব্যাটসম্যান কাম অকেশনাল জেন্টল মিডিয়াম পেসার আরিফুল, আরেক পেসার আবু হায়দার রনি নাকি বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল অপু? প্রধান নির্বাচকের দেয়া তথ্য অনুযায়ী বাঁ-হাতি স্পিনার নাজমুল অপুর খেলার কোনো সম্ভাবনাই নেই। সাকিবের সঙ্গে দ্বিতীয় স্পিনার হিসেবে খেলানো হবে অফস্পিনার মেহেদি হাসান মিরাজকে।
তার মানে তামিম খেললে একাদশ হবে এমন- তামিম, লিটন, সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, মিঠুন, মোসাদ্দেক, মিরাজ, মাশরাফি, মোস্তাফিজ ও রুবেল।
Advertisement
আর তামিম না খেললেই হিসেব যাবে পাল্টে। আঙুলের ব্যথায় তামিম শেষ পর্যন্ত খেলতে না পারলে অতি অবশ্যই ইনিংসের সূচনা করতে দরকার পড়বে আরেকজন বিকল্প ওপেনারের। দলে বিকল্প বা ব্যাকআপ ওপেনার আছেন মোটে একজন; নাজমুল হোসেন শান্ত।
স্বাভাবিক হিসেবে তামিম খেলতে না পারলে শান্ত আর লিটনকে দিয়েই উদ্বোধনী জুটি গড়ার কথা। কিন্তু ওই বাঁ-হাতি শান্তরও তো সমস্যা। তারও যে আঙুলে ব্যথা। সে কারণেই শেষ মুহূর্তে দলে অন্তর্ভুক্ত করা হয় আরেক বাঁ-হাতি মুমিনুলকে। কাজেই তামিম না খেললে শান্তই খেলবেন- এমন নিশ্চয়তাও নেই। তাই তামিম না খেলার অর্থ ওপেনিং জুটি ঠিক করতেই নানা হিসেব নিকেশ আছে। ভিন্ন পথে হাটতে হতে পারে টিম ম্যানেজমেন্টকে।
দুবাই গিয়ে গত চার দিনের প্র্যাকটিস সেশনে ব্যথামুক্ত হয়ে প্র্যাকটিস করতে পারলেই শুধু খেলার প্রশ্ন শান্তর। যতদূর জানা গেছে, তা পারেননি এ বাঁ-হাতি টপ অর্ডার। তাই তামিমের বিকল্প হিসেবে তার খেলা নিয়েও আছে সংশয়। সেক্ষেত্রে ভাগ্য খুলে যেতে পারে মুুমিনুলের।
তামিমের প্রথম ম্যাচ খেলার মত অবস্থা না থাকলে শান্তকে টপকে মুুমিনুল একাদশে ঢুকে যেতে পারেন। তাতেও অবাক হবার কিছু থাকবেনা।
আরও একটা সমীকরণ আছে। তামিম না খেললে মোহাম্মদ মিঠুনকেও মিডল অর্ডার থেকে ওপেনিংয়ে পাঠানো হতে পারে। এই সপ্তাহ তিনেক আগে আয়ারল্যান্ডের মাটিতে আইরিশ ‘এ’ দলের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ম্যাচে ১৮৩ রানের বড়সড় স্কোর তাড়া করতে গিয়ে ব্যাট হাতে ওপেনিংয়ে নেমে পড়েন মিঠুন। তার ব্যাট থেকে আসা ৩৯ বলে (সাত ছক্কা ও ছয় বাউন্ডারিতে) ৮০ রানের ঝড়ো ইনিংসেই জয় পায় বাংলাদেশ ‘এ’ দল। সিরিজও জেতে।
কাজেই এক তামিমের খেলার ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। তামিম খেললে একাদশ সাজানো নিয়ে তেমন বড় ধরনের চিন্তা করতে হবেনা। আর তামিম খেলতে না পারলেই যত চিন্তা ও বিকল্প পথে হাটতে হবে। শেষ কথা হলো তামিম খেললে মুমিনুল আর শান্তকে ড্রেসিং রুম ও ডাগ আউটে বসে থাকা আর পানি টানার সম্ভাবনাই থাকবে বেশি।
আর তামিম আঙুলের ব্যথায় খেলতে না পারলে এদের দুজনের যে কোনো একজনের ভাগ্য খুলে যেতে পারে। কিংবা শান্ত-মুমিনুলকে বসিয়ে আরিফুলকে মিডল অর্ডারে অন্তর্ভুক্ত করে লিটন দাসের সঙ্গে মিঠুনকেও ওপেনিংয়ে পাঠানো হতে পারে। তবে একটি ক্রিকেটীয় টেকনিক্যাল ও ট্যাকটিক্সের কারনে মিঠুনের লিটন সঙ্গে ওপেন করার সম্ভাবনা কম।
কারণ লিটনও ডান হাতি, মিঠুনও ডান হাতি। ওপেনিং জুটিটা বাঁ-হাতি ও ডানহাতির মিশেলে গড়ার বাড়তি কার্যকরিতা আছে। তাতে প্রতিপক্ষ বোলারদের লাইন পাল্টাতে হয়। আর দুজন ডানহাতি হয়ে গেলে এক ফর্মুলা অনুসরণ করলেই চলে। কাজেই তামিম খেলতে না পারলে শেষ পর্যন্ত লিটন দাসের সাথে শান্ত আর মুমিনুলের কারো খেলার সম্ভাবনাই বেশি।
এআরবি/এসএএস/এমএস