বিশেষ প্রতিবেদন

রাজধানীর গতি বাড়াতে বিস্তৃত হচ্ছে উন্নয়ন

>> মেট্রোরেল ছাড়া চলমান রয়েছে ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ>> ঢাকার বাইরে যাতায়াত সহজে বেশ কয়েকটি চারলেন প্রকল্প>> প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হলে বদলে যাবে ঢাকার সার্বিক চিত্র

Advertisement

ঢাকা মহানগরীর অভ্যন্তরীণ সড়ক নেটওয়ার্কের উন্নয়ন, প্রবেশ ও নির্গমন, মহাসড়কের যানজট নিরসন এবং ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার জন্য পরিকল্পিত ও সমন্বিত আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে সরকার। পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে পাঁচটি মাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প (এমআরটি), দুটি বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প (বিআরটি), তিনস্তর বিশিষ্ট লিংক রোড, আটটি রেডিয়াল সড়ক, ছয়টি এক্সপ্রেসওয়ে এবং ২১টি ট্রান্সপোর্টেশন হাব নির্মাণ। এছাড়া অবকাঠামোগত উন্নয়নের অংশ হিসেবে মেট্রোরেলের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।

যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনে বর্তমান সরকারের নেয়া এসব প্রকল্পের ওপর জাগো নিউজ'র ধারাবাহিক তিন পর্বের প্রতিবেদনের প্রথমটি থাকছে আজ।

দিন যত যাচ্ছে রাজধানীর গতি তত কমছে। ঢাকা মহানগরীর অচলাবস্থায় জনজীবনও স্থবির হয়ে পড়ছে। মানুষ আর যানবাহনে ভিড়ে তিল ধারণের ঠাঁই নেই কোথাও। উন্নয়নের স্পন্দন যেখানে সচল থাকার কথা, সেই রাজধানীই দিনদিন থমকে যাচ্ছে। অচল এ রাজধানীকে সচল করতে এবার নেয়া হচ্ছে মহাপরিকল্পনা। উন্নয়নের শাখা প্রসারিত করে আধুনিক রাজধানী গড়ার প্রত্যয়ে কাজ শুরু করেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার।

Advertisement

আরও পড়ুন >> ঢাকার মৃত্যু ঘটিয়েছে ফ্লাইওভারগুলো

এরই অংশ হিসেবে বাস্তবায়ন হয়েছে বেশ কয়েকটি উন্নয়ন প্রকল্প। স্বপ্নের পদ্মা সেতুও রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থায় মাইলফলক হবে। এর বাইরে পরিকল্পনায় রয়েছে বড় বরাদ্দের একাধিক এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়ন। এসব প্রকল্পের কাজ শেষ হলে শুধু কথায় নয়, বাস্তবেই বদলে যাবে রাজধানীর চিত্র।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত ও গতিশীল করতে এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম, ঢাকা-সিলেট, ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, নবীনগর ডিইপিজেড-চন্দ্রা-যাত্রাবাড়ি-কাচঁপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ, মিরপুর ফ্লাইওভার, হাতিরঝিল, হানিফ ফ্লাইওভার, মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার, কুড়িল ফ্লাইওভার, বনানী ফ্লাইওভারসহ বিভিন্ন অবকাঠামোর উন্নয়ন হয়েছে।

চলমান এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে সড়ক পথে চাপ কমবে। এর মাধ্যমে যেমন যানজট কমবে, তেমনি এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণে জ্বালানি ও সময়- উভয়ই সাশ্রয় হবে। কম সময়ে পণ্য পৌঁছানোয় অর্থনৈতিকভাবেও দেশ লাভবান হবে। উন্নত সড়কে উন্নত যানবাহনের প্রচলন বাড়বে। ফলে সড়ক দুর্ঘটনার হারও অনেকাংশে লাঘব হবে।

Advertisement

বিশ্ব ব্যাংকের এক প্রতিবেদন অনুসারে, ঢাকায় যানজটের কারণে গত ১০ বছরে গাড়ির গড় গতি ঘণ্টায় ২১ কিলোমিটার থেকে কমে সাত কিলোমিটারে নেমে এসেছে। যেখানে হেঁটে চলার গড় গতি প্রতি ঘণ্টায় পাঁচ কিলোমিটার। শুধু যানজটের কারণেই ঢাকায় দিনে ৩২ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে।

আরও পড়ুন >> সড়ক ব্যবস্থাপনায় বড় ধরনের ব্যর্থতা আছে

এই স্থবিরতা থেকে উদ্ধারে বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, সড়ক অবকাঠামো উন্নয়নে বেশকিছু মেগা প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ২০৩০ সাল নাগাদ মধ্যম আয়ের দেশ গড়ার যে অঙ্গীকার সরকার করেছে, সেটার পথে এগিয়ে যেতেই আমাদের এসব প্রয়াস।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, ‘রাজধানী ঢাকা হবে সিঙ্গাপুর নগরীর মতো উন্নত। এ নিয়ে যথেষ্ট পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। আগামীতে ক্ষমতায় আসলে এসব পরিকল্পনা যথাযথভাবে বাস্তবায়ন সহজ হবে।’

ঢাকার সড়ককে গতিশীল করতে নেয়া পরিকল্পনাগুলো হলো –

মেট্রোরেল প্রকল্প : ২০৩৫ সালের মধ্যে সরকারের পাঁচটি মেট্রোরেল নির্মাণকাজের পরিকল্পনা রয়েছে। পাঁচটি মেট্রোরেলের মধ্যে চারটি হবে আন্ডারগ্রাউন্ড এবং একটি হবে এলিভেটেড মেট্রোরেল। পাঁচটি মেট্রোরেলের মধ্যে প্রথমটি এলিভেটেড মেট্রোরেল, যার কাজ চলমান। এর একটি পর্ব ২০১৯ সালে এবং আরেকটি পর্ব ২০২০ সালে শেষ হবে। অন্য চারটি আন্ডারগ্রাউন্ড মেট্রোরেলের মধ্যে দুটির কাজ আগামী ২০২০ সালের মধ্যে শুরুর জন্য সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার একটি ২০২৫ এবং অপরটি ২০২৮ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। এছাড়া অপর দুটোর কারিগরি সম্ভাব্যতা যাচাই হয়েছে এবং চুক্তি সাপেক্ষে ২০৩৫ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। মেট্রোরেল প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে সড়ক পথে যানজটসহ ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পাবে।

ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে (মাওয়া হয়ে) : ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়েটি ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং চারলেন বিশিষ্ট, যা দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যুক্ত হবে। এক্সপ্রেসওয়েটি যাত্রাবাড়ি থেকে মাওয়া পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার এবং বাবুবাজার থেকে ইকুরিয়া পর্যন্ত তিন কিলোমিটার এবং পাচ্ছার-শিবচার-ভাঙ্গা (ফরিদপুর) পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার বিস্তৃত থাকবে।

ঢাকা থেকে মাওয়া এবং পাচ্ছার থেকে ভাঙ্গার মধ্যে পদ্মাসেতু অতিক্রম করে নদীর অপর প্রান্তে যুক্ত হবে। প্রথম পর্বে ৩৫ কিলেমিটিার এবং পরবর্তীতে আরো ২০ কিলোমিটার পথ তৈরি হবে।

এ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৭০০ কোটি টাকা, যা বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অ্যান্ড হাইওয়েজ ডিভিশনের তত্ত্বাবধানে হবে। প্রথম পর্ব ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে এবং দ্বিতীয় পর্ব ২০১৯ সালের এপ্রিলের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে বর্তমান আট ঘণ্টার জায়গায় সময় লাগবে মাত্র ৪৫ মিনিট।

ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (বিমানবন্দর-কুতুবখালী) : হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নারায়ণগঞ্জের কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৭ কিলোমিটার সবচেয়ে দীর্ঘ ও চারলেন বিশিষ্ট প্রথম ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে তৈরি হচ্ছে। এ এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি বর্তমান ঢাকার রেলপথের পাশাপাশি ট্রাকে তৈরি হচ্ছে। এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি তিনটি পর্বে তৈরি হচ্ছে। প্রথম পর্বের কাজ হাতে নেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন >> উন্নয়নের সঙ্গে অপচয়ও হচ্ছে

প্রথম পর্বে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে শুরু করে কুড়িল-ক্যান্টনমেন্ট-বনানী-মহাখালী হয়ে তেজগাঁওতে গিয়ে শেষ হবে। ২১ কিলোমিটার দীর্ঘ এ পথ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। দ্বিতীয় পর্বে তেজগাঁও হতে মগবাজার পর্যন্ত কাজ ২০২০ সালের অক্টোবরের মধ্যে শেষ হবে। তৃতীয় পর্বে মগবাজার থেকে কমলাপুর -সায়েদাবাদ- যাত্রাবাড়ি হয়ে-কুতুবখালী (নারায়ণগঞ্জ) পর্যন্ত অংশের কাজ ২০২১ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে।

এ প্রকল্প বাস্তবায়নে ১৩ হাজার ৮২৫ কোটি টাকা ব্যয় হবে। এছাড়া তেজগাঁও থেকে মানিকমিয়া অ্যাভিনিউ পর্যন্ত এলিভেটেড লিংক-১ এবং মগবাজার থেকে পলাশী পর্যন্ত এলিভেটেড লিংক-২ পরবর্তীতে সংযুক্ত হবে। এ প্রকল্পের কাজ পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় ইটালিয়ান-থাই ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন বাস্তবায়ন করবে।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে সরাসরি যাত্রীরা হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী হয়ে অত্যন্ত কম সময় ও কম খরচে ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে অথবা ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে অথবা ঢাকা- মাওয়া দিয়ে পদ্মাসেতু হয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ প্রায় ৩০টি জেলায় যেতে পারবেন।

ঢাকা-আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে (বিমানবন্দর-আশুলিয়া হয়ে চন্দ্রা) : হয়রত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আশুলিয়া হয়ে চন্দ্রা (গাজীপুর) পর্যন্ত ইস্টওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি ৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং চারলেন বিশিষ্ট, যা ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ের চারলেনের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। এক্সপ্রেসওয়েটি আশুলিয়াকে কেন্দ্র করে পূর্ব থেকে বিমানবন্দর-আব্দুল্লাহপুর-তুরাগ-আশুলিয়া পর্যন্ত এবং পশ্চিম দিক থেকে গাজীপুর চন্দ্রা থেকে জিরানি-বাইপাইল-ডিইপিজেড-জিরাবো হয়ে আশুলিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত থাকবে। ওই সড়ক পথের সঙ্গে সাভার জাতীয় শহীদ স্মৃতিসৌধ-নবীনগর হয়ে ডিইপিজেড সংযোগস্থলের মাধ্যমে আশুলিয়া এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে সংযুক্ত হবে।

আরও পড়ুন >> এশিয়ায় সবচেয়ে বেশি ‘মানসিক চাপে’ ঢাকাবাসী

এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৯০১ কোটি টাকা এবং প্রকল্পটি ২০২২ সালের জুনের মধ্যে সম্পন্ন হবে। প্রকল্পের কাজ চায়না মেশিনারিজ করপোরেশনের মাধ্যমে বাস্তবায়ন চলছে। এটি বাস্তবায়িত হলে কম খরচ ও কম সময়ে শিল্পনগরী সাভার, গাজীপুর ও আশুলিয়ায় বহুসংখ্যক যাত্রী সরাসরি চন্দ্রা থেকে বিমানবন্দর এবং বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালীর ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে অথবা ঢাকা-সিলেট হাইওয়ে অথবা ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ের মাধ্যমে প্রায় ৩০টি জেলায় যেতে পারবেন।

সাভারের হেমায়েতপুর-নারায়ণগঞ্জ মদনপুর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : সাভারের হেমায়েতপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের মদনপুর পর্যন্ত ইস্টওয়েস্ট এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং চারলেনের হবে। পশ্চিম দিক থেকে ঢাকা-আরিচা হাইওয়ে বরাবর সাভারের হেমায়েতপুর থেকে নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা এবং পূর্বদিক থেকে ঢাকা-মাওয়া হাইওয়ে বরাবর নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে হাজিগঞ্জ বন্দর ও ফতুল্লা পর্যন্ত সংযুক্ত হবে।

ফলে সাভারের চামড়া শিল্পনগরীসহ অন্য লোকজন সাভার থেকে সরাসরি নারায়ণগঞ্জের মদনপুর সংলগ্ন ঢাকা-চট্টগ্রাম হাইওয়ে অথবা ঢাকা সিলেট হাইওয়ে অথবা ঢাকা-মাওয়া হয়ে পদ্মা সেতুর মাধ্যমে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যেতে পারবেন।

এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৬ হাজার ৩৮৮ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে কাজ শুরু হয়ে ২০২৪ সালের মধ্যে এটি শেষ হবে। বাংলাদেশ ব্রিজ অথোরিটি ও পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।

বিআরটি প্রকল্প : বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট প্রকল্প (বিআরটি-৩ ও বিআরটি-১) তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। বিআরটি-৩ এর ৪২ কিলোমিটার দীর্ঘ পথের কাজ ইতোমধ্যে হাতে নেয়া হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিআরটি-৩ এ দুটি পর্ব থাকবে। প্রথম পর্বে গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার সড়ক এবং দ্বিতীয় পর্বে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার সড়ক।

গাজীপুর থেকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পর্যন্ত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪০ কোটি টাকা এবং হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে কেরানীগঞ্জ পর্যন্ত ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার ৭৪৭ কোটি টাকা। মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৭৮৭ কোটি টাকা। প্রথম পর্বের ২০ কিলোমিটার রাস্তার মধ্যে ১৬ কিলোমিটার আন্ডারগ্রাউন্ড এবং চার কিলোমিটার এলিভেটেড হবে। ইতোমধ্যে আরএইচডি এবং বিদেশি কোম্পানি গেঝুবারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে।

আরও পড়ুন >> মৃত্যুর ঝুঁকি নেবেন, তবু ওভারব্রিজে উঠবেন না

চুক্তি অনুযায়ী প্রথম পর্বের কাজ ২০১৯ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে। ওই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে প্রতি ঘণ্টায় দুই দিক থেকে প্রায় ২৫ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। এমআরটি থেকে বিআরটি'র ভাড়া কম হবে। ওই পথে মোট ২৫টি স্টেশন থাকবে এবং প্রতিটি স্টেশনে ৩-৫ মিনিট যাত্রাবিরতি থাকবে। গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত সময় লাগবে মাত্র ৫০ মিনিট যা আগের সময়ের চেয়ে অর্ধেক। এছাড়া বিআরটি-১ প্রকল্প বিআরটি-৩ সমাপ্ত হওয়ার পর শুরু হবে। পরিকল্পনা অনুযায়ী বিআরটি-১ পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ পূর্বাচল থেকে কুড়িল হয়ে সায়েদাবাদে শেষ হবে।

ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে : ঢাকা-চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি ২২০ কিলোমিটার দীর্ঘ এবং ছয় লেন বিশিষ্ট। নতুন এক্সপ্রেসওয়েটি বর্তমান চারলেন বিশিষ্ট ঢাকা-চট্টগ্রাম লাইনের পাশাপাশি তৈরি হবে। প্রকল্পটি বাংলাদেশ রোড অ্যান্ড হাইওয়ে ডিপার্টমেন্ট (আরএইচডি) এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) মাধ্যমে জাপানের গ্লোয়ি মাউন্টেন্স ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন ও ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্টের মাধ্যমে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। প্রকল্পটির সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা। এটি ২০২০ সালে শুরু হয়ে ২০২৪ সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা।

প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যেতে যেখানে সাত ঘণ্টা সময় লাগে সেখানে মাত্র আড়াই ঘণ্টায় পৌঁছানো সম্ভব হবে।

লিংক রোড ও ইউলুপ নির্মাণ : রাজধানীর যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে এবং যানজট নিরসনে ঢাকা ঘিরে একটি এলিভেটেড লিংক রোড নির্মাণের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ঢাকা মহানগরের যানজট নিরসনে ২০ বছর মেয়াদে কৌশলগত পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন >> নেই খোলা জায়গা-মাঠ, বাড়ছে অসহিষ্ণুতা

এ প্রকল্পের অংশ হিসেবে তিনটি লিংক রোড তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ইনার লিংক রোডটি হবে বালুনদী ও বুড়িগঙ্গা নদীর পাশ দিয়ে ৭৩ কিলোমিটার বিস্তৃত। মিডল লিংক রোডটি হবে ঢাকা বাইপাস রোড হয়ে ১০৮ কিলোমিটার পথ। আউটার লিংক রোডটি হবে হেমায়েতপুর-কালাকান্দি-মদনপুর-দাঙ্গা-বাইপাইল-গাজীপুর পর্যন্ত ১২৯ কিলোমিটার পথ। প্রকল্পগুলোর কাজ হাতে নেয়া হলে অর্থনৈতিক কার্যক্রম আরো বেগবান হবে।

গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে হাতিরঝিল প্রকল্প এলাকায় রামপুরা-বাড্ডা-প্রগতি সরণি ইউলুপ গত জুলাইয়ে চালু হয়েছে। ৫৫৮.৫০ মিটার এ ইউলুপ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৩ কোটি টাকা। নবনির্মিত এই ইউলুপের কারণে এ এলাকার যানজট অনেকাংশে কমে গেছে।

এমএ/এনডিএস/এমএআর/আরএস/জেআইএম