বিশেষ প্রতিবেদন

রাজনীতির সঙ্গে প্রযুক্তির জ্ঞানও থাকতে হবে

মোস্তাফা জব্বার। মন্ত্রী, তথ্য ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয়। ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্নযাত্রায় একজন সারথি। মহাজোট সরকারের তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে কাজ করছেন শুরু থেকেই।

Advertisement

প্রযুক্তির উন্নয়ন ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে মুখোমুখি হন জাগো নিউজ’র। কথা হয় প্রযুক্তি আইন, ফেসবুক গুজব, মোবাইল অপারেটরগুলোর কলরেটসহ নানা বিষয়ে।

দীর্ঘ আলোচনায় রাজনীতির প্রসঙ্গও উঠে আসে। উন্নয়ন প্রশ্নে শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশ নিরাপদ বলে মত দেন। দুই পর্বের সাক্ষাৎকারের আজ থাকছে প্রথমটি।

সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সায়েম সাবু ও আদনান রহমান।

Advertisement

জাগো নিউজ : অক্টোবরেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা। নির্বাচনকালীন সরকারে থাকার সম্ভাবনা আছে কিনা?

মোস্তাফা জব্বার : নির্বাচনকালীন সরকারে কে থাকবেন, তা প্রধানমন্ত্রী জানেন। শেখ হাসিনা ছাড়া ওই সরকারে কে থাকবেন, তা কেউ জানেন না।

আরও পড়ুন >> আলোচনায় বসলেই সমাধান কিন্তু তারা বসবেন না

আমি প্রথাগত পদ্ধতিতে মন্ত্রী হইনি। শেখ হাসিনা আমাকে রাস্তা থেকে তুলে এনে মন্ত্রী বানিয়েছেন। তিনি যদি মনে করেন আমাকে রাখবেন, তাহলে থাকতে হবে। তিনি বাদ দিলে, চলে যেতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্য আমি অনেক আগে থেকেই কাজ করে আসছি। কাজের এই ধারা অব্যাহত রাখবো।

Advertisement

মন্ত্রী হিসেবে বাড়তি দায়িত্ব পেয়েছি মাত্র। এজন্য আমি প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ জানাই। বাংলাদেশের ইতিহাসে এমন কোনো নজির নেই যে, কাউকে না জানিয়ে মন্ত্রী বানানো। যতটুকু জানি, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এই নম্বরে ফোন দিয়ে মোস্তাফা জব্বারকে বলেন, আগামীকাল গিয়ে যেন শপথ নেন। আর কেউ জানতেন না। আস্থা আর বিশ্বাসের জায়গায় এটি ছিল আমার জন্য মিরাক্কেল।

জাগো নিউজ : আস্থা-বিশ্বাসের প্রশ্নে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে টিকিট প্রত্যাশা করছেন কিনা?

মোস্তাফা জব্বার : ২০০৫ সালে শেখ হাসিনা আমাকে সরাসরি নির্বাচন করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আমি নেত্রীকে বলেছিলাম, আমার এমপি হওয়ার চেয়ে আপনার প্রধানমন্ত্রী হওয়া জরুরি। আমি এমপি না হয়ে আপনাকে যতটুকু সহযোগিতা করতে পারবো, এমপি হলে হয়তো তা পারবো না।

জাগো নিউজ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যদি ফের নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তাব দেন…

মোস্তাফা জব্বার : প্রধানমন্ত্রী চাইলে নির্বাচন করবো। এটি সম্পূর্ণ তার এখতিয়ার।

জাগো নিউজ : নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে কতটুকু আশাবাদী?

মোস্তাফা জব্বার : আমি শতভাগ আশাবাদী। ১৯৭০ সাল থেকে রাজনীতি করে আসছি। আমার এলাকার এমন কোনো বাড়ি নেই, যেখানে আমি যাইনি। কারো না কারো নির্বাচনের কাজেই প্রতিটি গ্রামে আমাকে ঘুরতে হয়েছে।

জাগো নিউজ : আপনি কম্পিউটার জগতের মানুষ। কম্পিউটারের মাউস নিয়ে খেলা আর ভোটের মাঠে খেলার মধ্যে তো তফাৎ আছে…

মোস্তাফা জব্বার : রাজনীতি আর প্রচলিত ধারায় নেই। ৪০ বছরের রাজনীতি আর আজকের রাজনীতির মধ্যে পার্থক্য আছে।

ভোটারদের ৪০ শতাংশ তরুণ। এই প্রজন্ম আপনাকে শুধু ফিজিক্যালিই চেনে না, তারা ডিজিটালিও চেনে। ডিজিটাল দুনিয়ার মানুষ হওয়ার কারণে আশা রাখি এই ৪০ শতাংশ ভোটারের কাছে আমি বাড়তি সুবিধা পাবো। ডিজিটাল বাংলাদেশ গত সাড়ে নয় বছরে মানুষকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছে যে, প্রযুক্তির এই অগ্রযাত্রাকে অস্বীকার করে বিজয়ী হওয়ার সুযোগ নেই। এ কারণেই আত্মবিশ্বাস থেকে বলছি, প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করতে বললে অংশ নেবো। তবে প্রধানমন্ত্রী না চাইলে আমার নিজের কোনো ইচ্ছা নেই।

আরও পড়ুন >> ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আওয়ামী লীগই

জাগো নিউজ : নির্বাচন ঘিরে ফের আলোচনা, আছে শঙ্কাও। যে শঙ্কা ২০১৪ সালের নির্বাচন ঘিরে তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে কী বলবেন?

মোস্তাফা জব্বার : ২০১৪ সালের ঘটনা পুনরাবৃত্তি হবে বলে আমি মনে করি না। ২০১৪ সালে বিএনপির নির্বাচনে অংশ না নেয়া ছিল আত্মহত্যার শামিল।

জাগো নিউজ : নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে তো প্রশ্ন ছিল?

মোস্তাফা জব্বার : ১৯৭০ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়ার শর্ত ছিল পাকিস্তানের অখণ্ডতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না। বঙ্গবন্ধু ওই নির্বাচনে অংশ নিলেন। জনগণ নির্বাচনে অংশ নিয়ে পাকিস্তান ভাঙার স্লোগান দিলেন। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পরই পাকিস্তান ভাঙা ত্বরান্বিত হলো।

বঙ্গবন্ধু দেখিয়ে দিয়েছেন, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে রাজনীতি করতে হলে নির্বাচন বয়কট করা যাবে না।

জাগো নিউজ : ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে আওয়ামী লীগও অংশ নেয়নি?

মোস্তাফা জব্বার : ওই নির্বাচনে অংশ না নিয়ে আওয়ামী লীগ বিএনপি সরকারের পতন ঘটাতে পেরেছে। বিএনপি কিন্তু সেটা পারেনি।

জাগো নিউজ : বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, বিএনপি নির্বাচনে না গিয়ে আওয়ামী লীগের কপালে এমন কালিমা এঁকে দিল, যা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যায় না…

মোস্তাফা জব্বার : আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয়ী হয়ে যে সাফল্য অর্জন করেছে, তাতে বিএনপি আর উঠে দাঁড়াতে পারছে না। যদি আওয়ামী লীগ বাংলাদেশকে আজকের জায়গায় নিতে না পারতো, তাহলে বলতে পারতেন, আওয়ামী লীগ নির্বাচন করে ভুল করেছে। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে যে অসহযোগ আন্দোলন হয়েছিল, ১৯৯৬ সালেও তাই হয়েছে। তার মানে আওয়ামী লীগের সঙ্গে জনগণের সমর্থন আছে। বিএনপি অনেক বড় দল, কিন্তু জনগণকে পাশে পায় না।

জাগো নিউজ : অভিযোগ, সরকার পুলিশি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এমন পরিস্থিতিতে আন্দোলনে কি ফল আসে?

আরও পড়ুন >> ময়লা পরিষ্কার করতে জোটে এসেছি, গায়ে তো লাগবেই

মোস্তাফা জব্বার : পুলিশি রাষ্ট্র কেন, সরকার জননিরাপত্তায় প্রয়োজনে আণবিক বোমা ব্যবহার করতে পারে। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে নিরস্ত্র বাঙালি লড়েছে। বিএনপির কৌশলে ভুল ছিল।

তথ্যপ্রযুক্তির এই দিনে যা ইচ্ছা তাই করা যায় না। ইচ্ছা করলেই নির্বাচনের ফল নিজের পক্ষে নেয়া যায় না। মোবাইল ক্যামেরাতেই ছবি তুলে ফেসবুকে দেয়া হচ্ছে। জিয়াউর রহমানের হ্যাঁ-না ভোট করা যায় না এখন।

জাগো নিউজ : অভিযোগ তো এখনও কম নয়। স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ব্যাপক জালিয়াতি হলো। কেন্দ্র দখল, এজেন্টদের বের করে দেয়া, ব্যালট ছিনতাই। এসব প্রকাশও পেলো। সরকার তো আমলে নেয় না এমন অভিযোগ!

মোস্তাফা জব্বার : নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ আগে থেকেই ছিল। মুসলিম লীগের আমল থেকেও নির্বাচনে জালিয়াতি হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচন নিয়েও অভিযোগ রয়েছে। অর্থাৎ জালিয়াতির অভিযোগও নির্বাচনের পার্ট।

জাগো নিউজ : এগিয়ে যাওয়ার কথা শোনাচ্ছেন। তাহলে জালিয়াতির উদাহরণ আবশ্যক করে তুলছেন কেন?

মোস্তাফা জব্বার : অভিযোগ থাকবেই। তবে আমরা যদি ডিজিটালাইজেশন করতে পারি, এই জায়গায় অভিযোগ থাকবে না। কিন্তু তাও তো করতে দেয়া হচ্ছে না। ইভিএম-এর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু এই পদ্ধতিতেও অভিযোগের প্রশ্ন তুলে বিরোধিতা করা হচ্ছে। তাহলে পরিবর্তন কিসে আসবে?

জাগো নিউজ : প্রযুক্তির মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শত শত কোটি টাকা চুরি হয়ে গেলো। তাহলে ইভিএম-এ আমার ভোট চুরি হবে না, তার নিশ্চয়তা কী?

মোস্তাফা জব্বার : হ্যাঁ, হতেই পারে। তবে ইভিএম করার পরে বিএনপিকে বলেছিলাম, আপনারা দেখিয়ে দিন কোথায় ভুল আছে? তারা পারেনি। এত বড় একটি সংগঠনে একজন লোকও নেই যে, ইভিএম-এর ত্রুটি বের করতে পারলো না। তাহলে ডিজিটাল বাংলাদেশ পরিচালনা করার যোগ্যতা নেই তাদের।

বিএনপি ক্ষমতায় আসলে ডিজিটাল বাংলাদেশকে সামনে রেখেই দেশ পরিচালনা করতে হবে। রাস্তায় স্লোগান দিলেই আর রাজনীতি হবে না। প্রযুক্তির জ্ঞানও থাকতে হবে। কোন সময় পার করছি, তা আমাদের জানতে হবে।

জাগো নিউজ : জাতীয় ঐক্য গঠনের আলোচনা রাজনীতির মাঠে। কীভাবে দেখছেন?

মোস্তাফা জব্বার : যারা জাতীয় ঐক্য করার কথা বলছেন, তাদের যোগ্যতা আমাদের কাছে দৃশ্যমান নয়। বাংলাদেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুটি পক্ষ, এটি অস্বীকারের কোনো সুযোগ নেই। বাকি যারা তাদের সঙ্গে আছেন, তাদের প্রত্যেকের রাজনৈতিক ইতিহাস আমাদের জানা। যারা জাতীয় ঐক্যের কথা বলছেন, তাদের সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পর্ক নেই।

আরও পড়ুন >> গণতন্ত্রের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন শেখ হাসিনা

জাগো নিউজ : ড. কামাল হোসেনদের সঙ্গে ২০০৭ সালে জোট করেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে। এখন অযোগ্য বলছেন কেন?

মোস্তাফা জব্বার : আওয়ামী লীগ জোটে এসেছিল বলেই বিজয় আসে। ড. কামাল হোসেনরা নেতা হয়েছিলেন। যাদের কথা বলছেন, তাদের সঙ্গে জনগণ নেই।

জাগো নিউজ : যদি বিএনপির সঙ্গে ঐক্য হয়?

মোস্তাফা জব্বার : তাহলে বিএনপিই মূল দলে থাকবে। তারা খুচরা হিসেবে থাকবে।

জাগো নিউজ : ঐক্যকে স্বাগত জানাবেন কিনা?

মোস্তাফা জব্বার : অবশ্যই। বিএনপি গণতান্ত্রিক ধারায় ফিরে এসে জোট করবে, ঐক্য করবে- এটি বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য ইতিবাচক বলে মনে করি। সংবিধানের চার নীতি মেনে বিএনপি রাজনীতি করলে অবশ্যই সাধুবাদ জানাবো। কিন্তু বিএনপি তো জামায়াতকে ছাড়বে না। আর জামায়াত তো বাংলাদেশের সংবিধানকেই স্বীকার করে না।

জাগো নিউজ : অন্য ইসলামি দলগুলোর সঙ্গে আওয়ামী লীগের জোট রয়েছে, যাদের নীতি সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক…

মোস্তাফা জব্বার : তারা নির্বাচনে এসেছে বলে আমার জানা নেই। বাংলাদেশে রাজনীতি করতে হলে সংবিধান মানতেই হবে। আমি মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছি সংবিধান মেনেই।

জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে বাংলাদেশ সৃষ্টি হয়েছে। পাকিস্তান এখন বুঝেছে যে, ইসলামি রিপাবলিক রাষ্ট্র করলেই সমস্যার সমাধান হয় না। তারা এখন বাংলাদেশের উন্নয়নকে অনুসরণ করতে চায়। অনেক ক্ষেত্রে আমরা ভারতকেও পেছনে ফেলেছি। শেখ হাসিনা বাংলাদেশকে কোথায় নিয়ে গেছে, তা বুঝতে হবে।

যখন কেউ বলেন, খালেদা জিয়া ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন, তখন আমার মাথার চুল ছিঁড়তে ইচ্ছা করে। যে মহিলা (খালেদা জিয়া) ১৯৯২ সালে সাবমেরিন ক্যাবল ফিরিয়ে দিয়েছিলেন। ২০০৩ সালে জ্ঞানভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞা করে এসেছিলেন জেনেভায় গিয়ে। কিন্তু তিনি একটি শব্দও ডিজিটালাইজেশন করতে পারেননি।

আমি যদি রাজনীতির বাইরেও বলি, তাহলে বলতে হবে; শেখ হাসিনার হাতেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।

আমরা ভাগ্যবান যে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী শুধুমাত্র সামনের ২-১ বছরের চিন্তা মাথায় আনেন না। এই প্রধানমন্ত্রী ২০০৮ সালে ২০২১ এর কথা বলেছিলেন। ২০১৪ সালে এসে ২০৪১ সালের জন্য জ্ঞানভিত্তিক সমাজ তৈরির কথা বলেছিলেন। কয়েকদিন আগে বদ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০ ঘোষণা করেছেন।

এবারের নির্বাচনী ইশতেহার ২১০০ সালকে মাথায় রেখেই তৈরি হবে, সম্পূর্ণ শেখ হাসিনার গাইডলাইনে।

এএসএস/এমএআর/এমআরএম/জেআইএম