জাতীয়

রোহিঙ্গাদের একটি দলকে শিগগিরই মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন করা হবে

হত্যা, ধর্ষণসহ মিয়ানমারের সরকারি বাহিনীর নিষ্ঠুর নির্যাতনের কারণে দেশটির রাখাইন (আরাকান) রাজ্য থেকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপজেলায় আশ্রয় নিয়েছে। আশ্রয় নেয়া এসব রোহিঙ্গার মধ্যে প্রথম একটি দলকে নিজদেশ মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ। খবর ভয়েস অব আমেরিকা।

Advertisement

এ বিষয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেছেন, খুব শিগগিরই প্রথম দফার প্রত্যাবাসন শুরু হবে এবং এই সংখ্যা হবে তিন হাজারের মতো। তাবে কবে নাগাদ এই প্রত্যাবাসন শুরু হবে, এর পদ্ধতি কী হবে-সে বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি তিনি।

জানা গেছে বাংলাদেশ চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে মিয়ানমারের কাছে ৮ হাজার ৩২ জন রোহিঙ্গার যে তালিকা দিয়েছিল, তার মধ্যে এ পর্যন্ত মাত্র সাড়ে তিন হাজার জনের ব্যাপারে ইতিবাচক মত দিয়েছে তারা।

জাতিসংঘসহ মানবিক সহায়তাকারী সংস্থা এবং বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য আদৌ উপযুক্ত নয় বলে মন্তব্য করেছেন। তারা এবং রোহিঙ্গা শরণার্থীরা এই প্রত্যাবাসন নিরাপদ, যথাযথ পরিবেশে স্বেচ্ছায় এবং মর্যাদার সঙ্গে হোক সেই দাবি জানিয়েছেন।

Advertisement

এদিকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর সেনাবাহিনীর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করার এখতিয়ার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিসি) রয়েছে বলে হেগের ওই আদালত যে রায় ঘোষণা করেছে তা প্রত্যাখ্যান করেছে মিয়ানমার সরকার।

বৃহস্পতিবার নেদারল্যান্ডসের দ্য হেগে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রি-ট্রায়াল চেম্বারের তিন বিচারকের প্যানেল এক রায়ে বলেছিলেন, মিয়ানমার আন্তর্জাতিক আদালতের সদস্য না হলেও রোহিঙ্গাদের সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশের কারণে ঘটনার একটি অংশ বাংলাদেশে সংগঠিত হয়েছে। ফলে আইসিসি মনে করছে রোম সনদ অনুযায়ী ঘটনার তদন্ত করার ক্ষমতা এই আদালতের রয়েছে।

রাখাইনের মাওংদাও শহর পরিদর্শন করছেন মিয়ানমারের স্বাধীন তদন্ত কমিশন

এর একদিন পরই শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) এক বিবৃতিতে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট উইন মিন্ট আইসিসির ওই সিদ্ধান্তকে সন্দেহযুক্ত আইনি ভিত্তি এবং ত্রুটিপূর্ণ প্রক্রিয়ার ফসল হিসেবে অভিহিত করেন।

Advertisement

বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ব্যক্তিগত দুর্দশার বর্ণনার ওপর ভিত্তি করে সেখানে অভিযোগ সাজানো হয়েছে, যার সঙ্গে আইনি যুক্তির কোনো যোগাযোগ নেই বরং আবেগের জায়গা থেকে আদালতের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে।

মিয়ানমার টাইমস জানিয়েছে এর কয়েকদিন আগে রাখাইনের উত্তরাঞ্চলে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠার এক বছর পর প্রথমবারের মতো রাখাইন রাজ্য পরিদর্শন করছে মিয়ানমারের স্বাধীন তদন্ত কমিশন।

তদন্ত কমিশনের প্রধান ও ফিলিপাইনের সাবেক উপ-পররাষ্ট্র সচিব রোজারিও মানালোর নেতৃত্বাধীন একটি তদন্ত দল উত্তরাঞ্চলীয় রাখাইনের মাওংদাও শহর পরিদর্শন করেন। সেখানে রাখাইনের বিভিন্ন গ্রাম এবং সম্প্রদায়ের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে প্রকৃত ঘটনা তদন্ত করছেন তারা।

কমিশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মিয়ানমারের ইন্ডিপেন্ডেন্ট কমিশন অব ইনকোয়ারির দ্বিতীয় বৈঠকটি খুবই ফলপ্রসূ ছিল।

বিবৃতিতে আরও সুস্পষ্ট আলোচনারও ইঙ্গিত দিয়ে বলা হয়েছে মাঠ পর্যায়ে এই পরিদর্শনের মধ্য দিয়ে পরিস্থিতিকে আরও ভালোভাবে বোঝার সুযোগ তৈরি হয়েছে এবং বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে।

এমএমজেড/এমএস