সুন্দর করে সাজানো বেদী। সেখানে রাখা কৃষ্ণমূর্তি। জন্মাষ্টমী উপলক্ষে আর একটু বেশিই সাজানো হয়েছে বেদীটি। যথারীতি চলছে পূজা-আচ্চার আয়োজন। জন্মাষ্টমীতে এটি কোনো অপরিচিত দৃশ্য নয়, তবে যে বাড়িতে এই উদযাপন, তা আসলে একটি মুসলিম পরিবার।
Advertisement
মানুষকে যা ধারণ করে তাই-ই ধর্ম। কিন্তু মানুষই সেই ধর্মে বিভাজন এনেছে। হিন্দু-মুসলিম-খ্রিস্টান-জৈন হয়ে ভাগ হয়ে গেছে বহু সম্প্রদায়ে। আবার মানুষই পারে সেই বিভাজন ভেঙে দিয়ে এক হয়ে যেতে। সেরকমই সম্প্রীতির নমুনা দেখালেন কানপুরের ডা. এস আহমেদের পরিবার। টানা ৩১ বছর ধরে নিজেদের বাড়িতে জন্মষ্টমী পালন করে আসছেন তারা।
জন্মাষ্টমীর দিন বাড়ি সুন্দরভাবে সাজানো হয়। প্রার্থনার পাশাপাশি সব রীতিই পালন করা হয়ে থাকে এ বাড়িতে।
কেন এ পূজা করছেন তারা? এমন প্রশ্নের উত্তরে ডা. আহমেদ বলেন, ‘আমি কৃষ্ণের ভক্ত। ভগবান কৃষ্ণের প্রতি তার ও তার পরিবারের সদস্যদের গভীর শ্রদ্ধা আছে। সেই শ্রদ্ধা থেকেই জন্মষ্টমী পালন করে আসছি। প্রতি বছর ভগবান কৃষ্ণের কাছে শুধু যে শান্তির প্রার্থনা করি তা নয়। বরং মানুষের মধ্যে যাতে সম্প্রীতি বজায় থাকে, সেজন্যও প্রার্থনা করি।’
Advertisement
তার এ জবাবের নেপথ্যে আছে এক গভীর বার্তা। তা হল সম্প্রীতি ও শান্তির প্রদীপটি জ্বালিয়ে দেয়া। প্রায় তিন দশক ধরে তারা এ কাজ করছেন। প্রতিবেশীরা উৎসাহ নিয়ে তাদের পূজা দেখতে ভিড়ও জমান। দেখতে আসেন জন্মাষ্টমীর সাজানো মঞ্চ। কোথাও কোনো বিভাজন নেই। ভিন্ন ধর্ম বলে কোনো অসূয়াও নেই। এই সম্প্রীতির নমুনাটুকুই তুলে ধরতে চেয়েছিল এই পরিবার।
এস আহমেদ ভাষায়, ‘মন্দির-মসজিদ-গুরুদ্বারে ভগবানকে ভাগ করে নেয়া হয়েছে, নদী ভাগ হয়েছে, সাগর ভাগ হয়েছে, কিন্তু মনুষত্বকে ভাগ করে ফেলো না।’
ভারতসহ সারা বিশ্বে যখন ধর্মভিত্তিক রাজনীতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, তখন ধর্মের সত্যিকার রূপ যেন দেখা গেল এই মুসলিম পরিবারের ধর্মচারণেই।
অনেকেই তার এই উদ্যোগের বিরোধিতা করেছেন। কিন্তু তাতে কান দেননি এস আহমেদ।
Advertisement
এমবিআর/পিআর