‘একাত্তরের জননী’ খ্যাত লেখিকা রমা চৌধুরী আর নেই। আজ সোমবার (৩ সেপ্টেম্বর) ভোর ৪টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।
Advertisement
রমা চৌধুরী মারা যাওয়ার বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন তার বইয়ের প্রকাশক আলাউদ্দিন খোকন। তিনি বলেন, ‘রোববার (২ সেপ্টেম্বর) রাত পৌনে ১১টার দিকে রমা চৌধুরীকে লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। সোমবার ভোর ভোর ৪টার দিকে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন।’
লেখিকা রমা চৌধুরীকে শেষবারের মতো শ্রদ্ধা জানাতে তার মরদেহ চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। সেখানে আজ (সোমবার) সকাল ১০টার পর শ্রদ্ধা জানানো যাবে বলে জানান তিনি।
রমা চৌধুরী গত জানুয়ারি থেকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে গত ২৬ আগস্ট তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। পরে শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলে ২৯ আগস্ট তাকে আবারও কেবিনে নেওয়া হয়। তবে গত শনিবার (১ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টার দিকে শারীরিক অবস্থা আবারও অবনতি হলে তাকে চমেক হাসপাতালের কেবিন থেকে আইসিইউতে স্থানন্তর করা হয়।
Advertisement
একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যেসব অগণতি মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন তাদের একজন চট্টগ্রামের এ রমা চৌধুরী। ষাটের দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে মাস্টার্স করে শিক্ষকতা পেশায় যুক্ত হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ তার জীবনটাকে ওলটপালট করে দেয়। মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে নিজের জীবনযুদ্ধের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ সেই সময়ের বলি হয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নিতে হয়েছে তার তিন ছেলেকেও।
নিজের এবং জীবিত এক ছেলের মুখের ভাত জোটাতে প্রায় ৩০ বছর ধরে খালি পায়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে নিজের লেখা বই বিক্রি করেছেন তিনি। কখনও কারও কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাতেননি। প্রচণ্ড আত্মমর্যাদাশীল এ সংগ্রামী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহায্যের প্রস্তাবও ফিরিয়ে দিয়েছিলেন।
জীবনের শেষবেলায় এসে রমা চৌধুরীর শরীরে বাঁধে নানা অসুখ। ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর বাসায় পড়ে গিয়ে কোমরে গুরুতর আঘাত পান রমা চৌধুরী। ওই দিনই তাকে বেসরকারি ক্লিনিক মেডিকেল সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সেই যে বিছানায় শয্যাশায়ী হয়েছেন আর দাঁড়াতে পারেননি।
আশির দশকের মাঝামাঝি থেকে নিজের লেখা বই ফেরি করে বিক্রি শুরু করেন রমা চৌধুরী। ২০১৭ সালের জুন মাস পর্যন্ত নিজের নিয়মে বই বিক্রি করে গেছেন তিনি।
Advertisement
তার উল্লেখযোগ্য বইগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘একাত্তরের জননী’, ‘এক হাজার এক দিন যাপনের পদ্য’ এবং ‘ভাব বৈচিত্র্যে রবীন্দ্রনাথ’-সহ ১৮টি বই। এসব বই বিক্রি করেই চলতো তার সংসার।
রমা চৌধুরীর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে পাঠানো এক শোক বার্তায় তিনি বলেন, '৭১-এ মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে দুই ছেলেকে হারান তিনি। এ সময় নিজের সম্ভ্রমও হারান রমা চৌধুরী। পুড়িয়ে দেওয়া হয় তার ঘর-বাড়ি।
শোক বার্তায় শেখ হাসিনা মহান মুক্তিযুদ্ধে তার ত্যাগ ও সংগ্রামের কথা গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন। একই সঙ্গে মরহুমার আত্মার শান্তি কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানান।
আরএস/জেআইএম