‘ভুল চিকিৎসা ও অবহেলায়’ চট্টগ্রামে সাংবাদিক কন্যা রাফিদা খান রাইফার মৃত্যুর ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় জামিন পেয়েছেন অভিযুক্তরা।
Advertisement
সোমবার (২৭ আগষ্ট) এ বিষয়ে শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মো. নোমানের আদালত তাদেরকে জামিন মঞ্জুর করেন। চট্টগ্রাম নগর পুলিশের সহকারী কমিশনার (প্রসিকিউশন) কাজী শাহাবুদ্দিন আহমেদ জাগো নিউজকে এ তথ্য জানান।
গত ২০ জুলাই অভিযুক্ত তিন চিকিৎসক ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেন গুপ্ত এবং ডা. শুভ্র দেব এবং ম্যাক্স হাসপাতালের এমডি ডা. লিয়াকত আলীর বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০৪/এ, ২০১, ১০৯ ও ৩৪ ধারায় চকবাজার থানায় মামলা করেন রাইফার বাবা দৈনিক সমকালের সাংবাদিক রুবেল খান।
উল্লেখ্য গত ২৮ জুন বিকেলে আড়াই বছর বয়সী রাইফা গলায় ব্যথা নিয়ে ম্যাক্স হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২৯ জুন রাতে তার মৃত্যু হয়। ভুল চিকিৎসায় তার মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ করে আন্দোলন করছেন সাংবাদিকরা।
Advertisement
ওই ঘটনা তদন্তে গঠিত চট্টগ্রামের সিভিল সার্জনের নেতৃত্বাধীন কমিটি ইতোমধ্যে প্রতিবেদন দিয়েছেন। প্রতিবেদনে কর্তব্যরত চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের দায়িত্বে অবহেলা এবং গাফিলতির প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়ে তিন চিকিৎসকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, রাইফার ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ প্রয়োগ যথাযথ ছিল।সিভিল সার্জনের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনকে স্ববিরোধী দাবি করে জামিন আবেদনে বলা হয়, ‘প্রতিবেদনের শুরুতে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ প্রয়োগ যথাযথ ছিল মর্মে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে। তাই প্রতিবেদনের শেষ অংশে চিকিৎসা ক্ষেত্রে অভিযুক্তদের মনোযোগ সহকারে পরীক্ষা বা আন্তরিকতার সঙ্গে সেবা প্রদান না করার বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয়।’
এতে আরও বলা হয়, ‘রোগের কারণ নির্ণয়, চিকিৎসা, ব্যবস্থাপত্র ও ওষুধ প্রয়োগ যথাযথ থাকলে সেক্ষেত্রে অভিযুক্তদের মনোযোগ বা আন্তরিকতা ছিল বলে সম্পূর্ণরূপে প্রতীয়মান হয়। এ কারণে মনোযোগ বা আন্তরিকতার প্রশ্ন তোলা অবান্তর ও ভিত্তিহীন। তাই অভিযুক্তরা দণ্ডবিধির ৩০৪-এ ধারার অপরাধের আওতায় পড়েন না।’
এছাড়া মামলায় ২০১ ধারায় আনা অভিযোগ বাস্তবতা বিবর্জিত বিধায় গ্রহণযোগ্য নয় উল্লেখ করে জামিন আবেদনে বলা হয়, আলামত নষ্টের জন্য মৃত্যু সনদ দুইটি দুই রকম প্রদান, ব্যবহৃত ইনজেকশন সরিয়ে ফেলা, সিসিটিভি ফুটেজ নষ্টসহ আলামত অপসারণ বা নষ্ট করার যাবতীয় বক্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অসত্য।
Advertisement
জামিন আবেদনের পাঁচ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়, ‘মামলার বাদী কর্তৃক জমা দেয়া স্বাস্থ্য অধিদফতরের তদন্ত প্রতিবেদন মামলার ঘটনার ব্যাপারে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। তা ছাড়া উক্ত মামলার সঙ্গে সম্পৃক্তও নয়।’
এদিকে চকবাজার থানায় হত্যা মামলা দায়েরের পর গত ৩০ জুলাই উচ্চ আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেছিলেন অভিযুক্ত চার চিকিৎসক। সেদিন তাদেরকে চার সপ্তাহের জামিন দেয়া হয়।
উল্লেখ্য, উচ্চ আদালতের নির্দেশে গত ২৬ আগস্ট আগের জামিনের মেয়াদ শেষে সোমবার (২৭ আগস্ট) চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আবু সালেম মো. নোমানের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন অভিযুক্তরা।
আবু আজাদ/এমএমজেড/জেআইএম