>> একমাত্র অস্ত্রধারী লুট করে ২৩ লাখ টাকা>> প্রিমিয়ার ব্যাংকের কর্মকর্তাদের ভিন্ন ভিন্ন তথ্য >> প্রিজার্ভ করা হয়নি ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ>> সন্দেহের বাইরে নন ব্যাংকের কর্মকর্তারাও
Advertisement
প্রিমিয়ার ব্যাংকের বাড্ডা শাখায় অস্ত্রের মুখে ক্যাশ কাউন্টার থেকে অর্থ লুটের ঘটনায় গোলকধাঁধায় পড়েছে পুলিশ। অপরদিকে মুখে কুলুপ এঁটেছেন ব্যাংকের কর্মকর্তারা। ফলে বিষয়টি নিয়ে তৈরি হয়েছে রহস্য।
তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ওই শাখার ক্লোজ সার্কিট টিভির ফুটেজ সংরক্ষণ করা হয়নি। সেন্ট্রালি তা মনিটরিং ও সংরক্ষণের কথা থাকলেও তা করা হয়নি। অন্যদিকে আশপাশের ভবনের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হলেও ফুটেজগুলো ব্যাংকটির সদর দরজা পর্যন্ত কাভার করেনি। যে কারণে অস্ত্রের মুখে ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টার থেকে অর্থ লুটের ঘটনা সম্পর্কে গোলকধাঁধায় পড়েছে পুলিশ।
আরও পড়ুন >> বাড্ডায় অস্ত্রের মুখে প্রিমিয়ার ব্যাংকের ২৩ লাখ টাকা লুট
Advertisement
ব্যাংকটির ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ টাকা লুটের ঘটনায় মুখে কুলুপ এঁটেছেন শাখার কর্মকর্তারা। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথাও বলছেন না তারা।
গত ২০ আগস্ট (সোমবার) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে ব্যাংক লেনদেনের সময় এক ব্যক্তি ভেতরে ঢুকে ম্যানেজারের মাথায় পিস্তল ঠেকান। এরপর ব্যাংকের সব স্টাফকে ভল্ট রুমে ঢুকিয়ে ক্যাশ কাউন্টার থেকে ২৩ লাখ টাকা নিয়ে চম্পট দেন। পরের দিন মঙ্গলবার রাতে ব্যাংকটির প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র অফিসার (জেনারেল সার্ভিসেস ডিভিশন) রাহাত আলম বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলা নং ১৮।
ঘটনার পর বাড্ডা থানা পুলিশ জানায়, ব্যাংক চলাকালে ডাকাতির উদ্দেশ্যে একজন ডাকাত ভেতরে প্রবেশ করেছিল। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মৌখিক অভিযোগের পর পুলিশ তদন্ত শুরু করে।
ব্যাংক ডাকাতির ওই ঘটনার তদন্তের বিষয়ে বাড্ডা থানার ইন্সপেক্টর (অপারেশন) ইয়াসিন গাজী বলেন, ‘আমরা গোলকধাঁধায় পড়েছি। তদন্তের জন্য সুনির্দিষ্ট যে তথ্য প্রয়োজন, তা পাচ্ছি না। ব্যাংকটির প্রত্যক্ষদর্শী কর্মকর্তারা একেক সময় একেক তথ্য দিচ্ছেন। ফলে গরমিল তৈরি হচ্ছে।’
Advertisement
কী ধরনের গরমিল- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ বলছেন, হাইট বেশি, কেউ বলছেন কম। কেউ বলছেন, গ্রে কালারের শার্ট, কেউ সাদা কালারের টি শার্ট। একজন লোক ঢুকে এতো কিছু ঘটিয়ে নির্বিঘ্নে চলে গেলেন অথচ তার সম্পর্কে তথ্য পাচ্ছি খুবই সাদামাটা।’
‘প্রিমিয়ার ব্যাংকের প্রত্যেক শাখায় লাগানো সিটিটিভি ফুটেজ মনিটরিং করে হেড অফিস। তাদের হেড অফিসে যোগাযোগ করেছি। অথচ ওই সময়ের সিসিটিভি ফুটেজ প্রিজার্ভ করা হয়নি!’
‘আবার, শাখা কর্মকর্তাদের বক্তব্যে রহস্য তৈরি হয়েছে। একমাত্র অস্ত্রধারী সব কর্মকর্তা-কর্মচারীকে জিম্মি করে টাকা নিয়ে গেলো, আবার যাবার সময় ওই ডাকাত ব্যাংকের সিসিটিভি ফুটেজ সংরক্ষিত রাখার ডিভিআর যন্ত্রটিও নিয়ে গেলো! আসলে একজনের পক্ষে এমন ঘটনা ঘটানো কঠিন’- যোগ করেন তিনি।
ইয়াসিন গাজী বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে ব্যাংকটিসহ ভবনের তিন নিরাপত্তাকর্মীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ব্যাংকটির আশপাশের দোকানপাট ও ভবনের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করা হলেও সেগুলো ব্যাংকটির সদর দরজা পর্যন্ত কাভার করেনি। বিষয়টি তদন্ত করে মূল অপরাধীকে শনাক্ত করাই আমাদের চ্যালেঞ্জ। আমরা সে চেষ্টাই করছি।’
সরেজমিন রোববার (২৬ আগস্ট) সকালে বাড্ডা লিংক রোডের গ/৮২ ও ৯০/১ নং ভবনে অবস্থিত প্রিমিয়ার ব্যাংকের শাখায় গিয়ে সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে বিষয়টি জানার চেষ্টা করা হয়। কিন্তু সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে শাখা ম্যানেজার তার নেমপ্লেট সরিয়ে নেন। কোনো কথা বলতে পারবেন না বলেন জানান।
আরও পড়ুন >> প্রিমিয়ার ব্যাংকের টাকা লুটের ঘটনায় মামলা
পরে শাখার ডেপুটি ম্যানেজার মো. সাহেদুর রহমান বলেন, ‘ভাই, আমরা কিচ্ছু বলতে পারবো না। যা বলার পুলিশ আর হেড অফিস বলবে। চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে আর কোনো প্রশ্ন করবেন না বা মন্তব্য জানতে চাইবেন না, প্লিজ।’
এ বিষয়ে প্রিমিয়ার ব্যাংকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমি কিছুই বলতে পারবো না। যা বলার হেড অফিস বলবে।’
ব্যাংকের চেয়ারম্যান এইচ বি এম ইকবালের অফিসিয়াল টেলিফোনে যোগাযোগ করা হলে ব্যক্তিগত সচিব রুবানা জেরিন জানান, তিনি (চেয়ারম্যান) অফিসের বাইরে আছেন। তিনি ছাড়া ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সবাই দেশের বাইরে। এ ব্যাপারে পরে জানানো হবে বলেও জানান তিনি।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মশিউর রহমান বলেন, ‘মাত্র একজন অস্ত্রধারী সবাইকে জিম্মি করে কীভাবে টাকা নিয়ে গেলো, বিষয়টি সন্দেহজনক। সন্দেহের বাইরে ব্যাংকের কর্মকর্তারাও নন। সব বিষয় মাথায় রেখেই তদন্ত হচ্ছে।’
জেইউ/এএইচ/এমএআর/আরআইপি