যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন যে, তাকে ইমপিচমেন্ট বা অভিশংসন করার যেকোনো প্রচেষ্টা হলে মার্কিন অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়বে।
Advertisement
মার্কিন টেলিভিশন নেটওয়ার্ক ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডসকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন, তাকে যদি ইমপিচ করা হয় তাহলে শেয়ার বাজারে বিপর্যয় নেমে আসবে এবং ‘সবাই খুব গরীব হয়ে যাবে’।
এর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট তার নিজের ইমপিচমেন্টের সম্ভাবনা নিয়ে মুখ খোলেননি বললেই চলে।
ট্রাম্পের সাবেক আইনজীবী মাইকেল কোয়েন নির্বাচনী বিধি ভঙ্গ করার অভিযোগে নিজের দোষ স্বীকার করার পর ট্রাম্প এই মন্তব্য করেছেন।
Advertisement
কোয়েন বলেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই তিনি কাজ করেছিলেন।
তবে বিশ্লেষকরা বলছেন- নভেম্বরে মধ্য-মেয়াদের নির্বাচনের আগে ট্রাম্পের প্রতিপক্ষরা তাকে ইমপিচ করার চেষ্টা করবেন বলে মনে হয় না।
ফক্স অ্যান্ড ফ্রেন্ডসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন, ‘যে দারুণ কাজ করছে তাকে কেন ইমপিচ করা হবে সেটা আমি বুঝতে পারছি না। আমি বলে রাখছি আমাকে যদি কখনও ইমপিচ করা হয়, বাজারে ধস নামবে, সবাই দারুণ গরীব হয়ে যাবে।’
নিজের মাথার দিকে দেখিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘এর কারণ- এই যে মাথাটা- এই মাথাটা কাজ না করলে অর্থনীতিতে যেসব পরিসংখ্যান দেখবেন তা অবিশ্বাস্য হয়ে উঠবে।’
Advertisement
মাইকেল কোয়েন বলেছেন, ২০১৬ সালের নির্বাচনী প্রচারণার সময় দুজন নারীর ‘মুখ বন্ধ রাখার’ জন্য তিনি তাদের অর্থ দিয়েছিলেন।
ধারণা করা হচ্ছে এই দুই নারীর একজন পর্ন তারকা স্টর্মি ড্যানিয়েলস এবং অন্যজন প্লেবয় মডেল ক্যারেন ম্যাকডুগাল। এই দুই নারীই দাবি করেছেন ট্রাম্পের সঙ্গে তাদের প্রেমের সম্পর্ক ছিল।
আদালতে শপথ নিয়ে কোয়েন বলেছেন তিনি তাদের মুখ বন্ধ রাখতে অর্থ দিয়েছিলেন ট্রাম্পের নির্দেশে এবং এর মূল উদ্দেশ্য ছিল নির্বাচনকে প্রভাবিত করা।
তবে ট্রাম্প জোর দিয়ে বলেছেন ওই দুই নারীকে অর্থ দিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা বিধি লঙ্ঘন করা হয়নি।
তিনি বলেছেন ওই অর্থ তিনি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে দিয়েছিলেন, প্রচারণার জন্য বরাদ্দ অর্থ থেকে নয়। তবে এ বিষয়ে তিনি বলেন তিনি জেনেছেন অনেক পরে।
জুলাই মাসে কোয়েন একটি অডিও টেপ প্রকাশ করেন যেখানে নির্বাচনের আগে তিনি এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প এর মধ্যে একটি পেমেন্ট নিয়ে আলোচনা করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোয়েনের বিরুদ্ধে বানিয়ে বানিয়ে কাহিনী তৈরি করার অভিযোগ এনেছেন এবং বলেছেন তিনি তার সাজা হালকা হতে পারে এই আশা থেকে এসব কথা সাজিয়েছেন।
দুই নারীকে অর্থ দেয়া কি নির্বাচনী আইনের লংঘন?
মুখ বন্ধ রাখার জন্য দেয়া অর্থ ‘হাশ মানি’র কথা নির্বাচনী প্রচারণার সময় কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনকে জানানো হয়নি।
প্রশ্ন হচ্ছে- ওই অর্থ ট্রাম্পের ব্যক্তিগত সম্মানহানি ঠেকানোর জন্য দেয়া হয়েছিল নাকি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে তার ভাবমূর্তি যাতে ক্ষুণ্ণ না হয় তার জন্য দেয়া হয়েছিল?
আমেরিকান নির্বাচনী আইন অনুযায়ী নির্বাচনে প্রভাব ফেলতে পারে এমন যেকোনো আর্থিক লেনদেনের বিষয় নির্বাচন কমিশনকে জানানোর নিয়ম।
এই অর্থ নিয়ে ট্রাম্পকে যদি বিচারের মুখোমুখি করতে হয়, তাহলে সেটা সাধারণ আদালতে করা যাবে না, কারণ তিনি ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট। কিন্তু অভিশংসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কংগ্রেস তাকে বিচারের কাঠগড়ায় তুলতে পারে। সেক্ষেত্রে তদন্তকারীদের প্রমাণ করতে হবে যে নির্বাচনের কারণে তিনি কোয়েনকে ওই অর্থ দিয়েছিলেন।
সূত্র : বিবিসি
এমবিআর/এমএস