ঈদুল আজহার দ্বিতীয় দিনে গাবতলী পশুর হাট এখন ক্রেতা শূন্য। হাটে ক্রেতা না থাকায় বেপারিদের মাথায় হাত পড়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে আনা গরু-ছাগল বিক্রি না হওয়ায় অনেকে বাড়ি ফিরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তবে হাটে গরুর চাহিদা তেমন না থাকলেও কেউ কেউ আসছেন ছাগল কিনতে। স্বল্প দামে তাদেরকে কোরবানির পশু কিনে বাড়ি নিয়ে যেতে দেখা যায়। বৃহস্পতিবার (২৩ আগস্ট) গাবতলী পশুর হাট ঘুরে এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
Advertisement
হাট ঘুরে দেখা গেছে, ক্রেতাবিহীন গাবতলীর পশুর হাট। সকাল থেকে কেউ কেউ হাটে এসে ছাগল কিনতে দরদাম করছিলেন। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তেমন গরু বিক্রি না হলেও কিছু ছাগল বিক্রি হয়েছে। ক্রেতাশূন্য থাকায় ক্রেতারা কম দামেই কোরবানির পশু কিনতে পারছেন। কেনা দামের চাইতে কম দামে গরু-ছাগল বিক্রি করে বেপারিরা বাড়ি ফিরে যেতে পারলেই যেন বেঁচে যান- এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।
বাজেট অনুযায়ী ভালো গরু না পাওয়ায় আজ গাবতলীতে এসেছিলেন মিরপুরের বাসিন্দা ব্যবসায়ী আবু তালেব। তিনি বেলা ১১টার দিকে গাবতলীর হাটে আসেন। এক ঘণ্টা ঘোরাঘুরি করার পর তিনি ২৬ হাজার টাকায় একটি গরু কিনতে পেরেছেন।
আবু তালেব জাগো নিউজকে বলেন, ‘অপেক্ষায় ছিলাম, কম দামে গরু পেলে কোরবানি দেব। কয়েকদিন গাবতলী ও পার্শবর্তী হাটে ঘুরেও বাজেটে মেলেনি। এ কারণে আজ এসেছি, অনেক দামাদামি করে ২৬ হাজার টাকায় একটি গরু পেয়েছি, তাই কিনলাম।’
Advertisement
দুটি বড় ছাগল ২০ হাজার টাকায় কিনেছেন মরিয়ম ও তার স্বামী ইব্রাহিম মিয়া। কোরবানির পশুর দাম কম শুনে তারা গাবতলীর হাটে এসেছিলেন। এ দম্পতি জানান, গতকাল গরু কোরবানি দিয়েছি, আজ এসেছি ছাগল কিনতে। কম দামে দুটি ছাগল পাওয়া গেছে। আজ ছাগল দুটি কোরবানি দেয়া হবে বলে তারা জানান।
গরু বিক্রির অপেক্ষায় আছেন রশীদ বেপারি। এবার ঈদে তিনি ৪৪টি গরু এনেছিলেন। তার মধ্যে এ পর্যন্ত ২০টি বিক্রি করেছেন। আজ সকালেও একটি গরু বিক্রি হয়েছে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এবার গরু কিনে মাথায় হাত পড়েছে। ঈদের দুদিন আগে কিছুটা লাভে কয়েকটি গরু বিক্রি হলেও ২০ আগস্ট (সোমবার) দুপুরে বৃষ্টির পর থেকে গরুর দাম কমে গেছে। এরপর থেকে প্রতিটি গরু কেনা দাম থেকেও ৪-৫ হাজার টাকা কমে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘আজ সকাল থেকে মাত্র একটি গরু বিক্রি হয়েছে, সেটিও কেনা দামের চাইতে পাঁচ হাজার টাকা কমে বিক্রি করেছি।’ বাজারে ক্রেতা না থাকায় তিনি অন্য বেপারির সাথে কার কত টাকা লোকসান হয়েছে তা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তার সঙ্গে বসা অপর বেপারি জানান, এবার বেপারিরা গরু কিনে লাভ না পাওয়ায় অনেক টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। ক্রেতারা যে গরুর দাম আগে লাখ টাকা বলেছেন আজ তা অর্ধেকে নেমে গেছে। বাজারে গরু কেনার মানুষ নাই। যারাও আসছে তারা কেনা দামের চাইতে অর্ধেক দাম বলে চলে যাচ্ছেন।
এদিকে কোরবানি হাটের মধ্যে ময়লা-অাবর্জনা, কাদা ও পানি থাকায় ভেতরে কেউ যেতে চাচ্ছেন না। এ কারণে যেসব বেপারিরা হাটের ভেতরে গরু নিয়ে বসে আছেন, তারা আরও বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এসব ব্যাপারিদের অনেককেই গরু নিয়ে বাড়ি ফিরতে দেখা গেছে।
Advertisement
কথা হয় গাবতলী হাট পরিচালনা কমিটির সদস্য সাখাওয়াত হোসেনের সাথে। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘এ বছর বেপারি ও হাট কর্তৃপক্ষ আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সকলের মাথায় হাত দেয়া ছাড়া আর কোনো উপায় নেই।’
বেপারিদের কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘প্রথম থেকে বেপারিরা বেশি লাভের আশায় গরুর দাম বেশি চাওয়ায় অনেকে কোরবানি না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। অনেকে আবার দাম বেশি হওয়ায় কয়েকজন মিলে কোরবানি দিয়েছেন। এছাড়াও নির্ধারিত স্থানের বাইরে যত্রতত্র হাট বসায় গাবতলীর হাটে কোরবানির পশুর ক্রেতা কমে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মাত্র ২০টি ছাগল ও ৫টি গরু বিক্রি হয়েছে। এমন পরিস্থিতি আগে কখনই হয়নি। ঈদের দ্বিতীয় দিনে হাটের মধ্যে ক্রেতাদের লাইন থাকতো। অথচ এবার গরু-ছাগল কেনার মানুষ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এমএইচএম/এসআর/এমএস