সুখবর, প্রথমবারের এশিয়ান গেমস ফুটবলের দ্বিতীয় রাউন্ডে বাংলাদেশ। মেধা, প্রজ্ঞা ও মননে ঘাটতি না থাকলেও শক্ত এবং সমৃদ্ধ অবকাঠামোর অভাব এবং আধুনিক কোচিং না পাওয়ায় সেই শুরু থেকেই বিশ্ব ফুটবলের একদম তলানীতে আমাদের জাতীয় ফুটবল দল।
Advertisement
মহাদেশীয় ফুটবলেও সেই ৭০ দশক থেকেই নিচের সারিতে। এই পর্যায়ে উল্লেখযোগ্য সাফল্য বহুদুরে, ইতিহাস জানাচ্ছে এশীয় ফুটবলে শ্রেষ্ঠত্বের আসর মানে ‘এশিয়া কাপে’ এখনও পর্যন্ত একবারই চূড়ান্ত পর্বে খেলেছে বাংলাদেশ। সেটা ১৯৮০ সালে।
কুয়েতে হওয়া ওই আসরে গ্রুপে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল ইরান, উত্তর কোরিয়া, সিরিয়া ও চীন। প্রথম ম্যাচে উত্তর কোরিয়ার সাথে লড়াই করে ৩-২ গোলে হার মেনেছিল বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে গোলদাতা ছিলেন আজকের বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দীন ও দেশীয় ফুটবলে গোলাম সারওয়ার টিপুর পর সব সময়ের সেরা লেফট উইং আশরাফ উদ্দীন চুন্নু।
প্রথমার্ধের শেষ দুই মিনিটে (৪৪ ও ৪৫) দুই গোলে পিছিয়ে পড়া বাংলাদেশ প্রথমে চুন্নুর গোলে ব্যবধান কমিয়ে আনে দ্বিতীয়ার্ধের ১২ মিনিটে। পেনাল্টি থেকে গোল করেন লেফট উইঙ্গার চুন্নু। এরপর ৮৮ মিনিটে সালাউদ্দীন খেলায় সমতা ফিরিয়ে আনেন।
Advertisement
কিন্তু তারপরও হার এড়ানো সম্ভব হয়নি। নির্ধারিত সময়ের শেষ মিনিটে গোল করে জিতে যায় এশীয় ফুটবলের তখনকার সামনের সারির দল উত্তর কোরিয়া। এরপর সিরিয়ার সাথে দ্বিতীয় ম্যাচেও বাংলাদেশ হার মানে ১-০ গোলের ব্যবধানে।
কিন্তু শেষ দুই ম্যাচে শক্তিশালী ইরান (৭-০) ও চীনের (৬-০) সাথে আর লড়াই করা সম্ভব হয়নি। বড় ব্যবধানে হার ছিল সঙ্গী; কিন্তু একটা সান্তনা ছিল, তাহলো বাংলাদেশের গ্রুপের দুই দল ইরান ও উত্তর কোরিয়া সেমিফাইনাল পর্যন্ত উঠেছিল।
ঘরের মাঠে কুয়েত হয়েছিল চ্যাম্পিয়ন। রানার্সআপ দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান তৃতীয় আর উত্তর কোরিয়া চতুর্থ স্থান পেয়েছিল। এরপর আর কখনো এশীয় ফুটবলের চূড়ান্ত পর্বে পৌঁছানো সম্ভব হয়নি বাংলাদেশের।
হোক তা ভিন্ন আসর এশিয়ান গেমস ফুটবল, ৩৮ বছর পর এশীয় ফুটবলে এসে দারুণ সাফল্য অর্জন করলো লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। এই প্রথম তারা উঠে গেলো এশিয়ান গেমসের দ্বিতীয় রাউন্ডে।
Advertisement
ঘরোয়া ফুটবলে অর্থের ছড়াছড়ি; কিন্তু মান, প্রতিদ্বন্দ্বিতা আর আকর্ষণ সবই ফিকে। জাতীয় দলও বারবার ব্যর্থতার ঘানি টানছে। দক্ষিণ এশীয় ফুটবলেও দিনকে দিন পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। এক সময় যে নেপাল-মালদ্বীপ পাত্তাই পেতো না, বাংলাদেশের সামনে এলে গোল বন্যায় ভাসতো- সেই দলগুলোর সঙ্গেও জেতা সম্ভব হচ্ছে না। দূর্বল ভুটানও বলে কয়ে হারাচ্ছে বাংলাদেশকে। ভারত তো নাগালের বাইরে চলে গেছে আগেই।
সামনেই ঘরের মাঠে সাফ ফুটবল। ওই আসরের আগে কাতারের বিপক্ষে এই জয় এবং প্রথমবার এশিয়ান গেমস ফুটবলের দ্বিতীয় রাউন্ডে পা রাখা অবশ্যই একটা নতুন বার্তা বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য। আবারও স্বপ্ন দেখার নতুন সিঁড়ি। কার্যকর রসদ। আবারও বাংলাদেশের ফুটবল উঠে আসবে অন্তত এশীয় মানের পর্যায়ে।
সেপ্টেম্বরের প্রথম ভাগে রাজধানী ঢাকায় যে সাফ ফুটবলের আসর বসতে যাচ্ছে, তাতে ভাল করার একটা অনুপ্ররণা হবে এশিয়ান গেমসে এই সাফল্য। দেশের ফুটবলকে চাঙ্গা করতে হলে, মহাদেশীয় পর্যায় এবং দক্ষিণ এশিয়ায় নজকাড়া সাফল্য খুব প্রয়োজন। কাতারের মত শক্তিশালী দলকে হারিয়ে এশিয়ান গেমস ফুটবলের সেরা ষোলতে পা রাখার মধ্য দিয়েই সূচিত হোক সে পথের নতুন যাত্রা।
এআরবি/আইএইচএস/পিআর