২০০২ সাল। ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষে রক্তাক্ত ভারতের গুজরাট। দেশের প্রধানমন্ত্রী পদে অটলবিহারী বাজপেয়ি। আর গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী পদে তখন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সে সময় মোদিক পাশে বসিয়ে এক সাংবাদ সম্মেলনে বাজপেয়ি বলেছিলেন— রাজধর্ম পালন করা দরকার।
Advertisement
অটলবিহারী বাজপেয়ির সেই বিখ্যাত ‘রাজধর্ম’ মন্তব্যের পর চলে গেছে এক যুগ। ঠিক ১২ বছর আগে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ওই পরামর্শ দিয়েছিলেন বাজপেয়ি। মোদি সে পরামর্শ মেনে আদৌ কাজ করেছিলেন কি না, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। কিন্তু ১২ বছর আগে মোদিকে যে পরামর্শ দিয়েছিলেন বাজপেয়ি, তার মোদির জন্য আজও একই রকম প্রাসঙ্গিক।
গুজরাটে যে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়েছিল, তাতে সে রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মোদির দিকে আঙুল উঠেছিল। গুজরাটের পুলিশ-প্রশাসন নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করেনি বলে অভিযোগ উঠেছিল। সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী ভয়াবহ আক্রমণের শিকার হচ্ছিল। ওই পরিস্থিতিতে মোদিকে পাশে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খুলেছিলেন বাজপেয়ি। বলেছিলেন, ‘রাজার কাছে বা শাসকের কাছে প্রজায় প্রজায় ভেদ হয় না। জন্ম, জাতি বা সম্প্রদায়, কোনো কিছুর ভিত্তিতেই শাসক প্রজায়-প্রজায় ভেদাভেদ করতে পারেন না।’ তিনি নিজেও রাজধর্ম পালনের চেষ্টা করছেন, গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীরও উচিৎ তেমনটাই করা— পরামর্শ ছিল বাজপেয়ির। পাশে বসা মোদি সে দিন বলেছিলেন, ‘আমিও তা-ই করছি সাহেব।’
অটলবিহারী বাজপেয়ির সেই মন্তব্য আর নরেন্দ্র মোদির মুখে সেই অস্বস্তির ছাপ ভারতীয় গণতন্ত্রের ইতিহাসে স্মরণীয় ছবিগুলোর অন্যতম। শুধু মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন নয়, প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরেও বার বার বাজপেয়ির সেই পরামর্শ ফিরে ফিরে এসেছে মোদির জীবনে। কট্টরবাদ সংক্রান্ত অভিযোগ যত বার উঠেছে মোদির বিরুদ্ধে, ততবারই গোটা দেশ বাজপেয়ির সেই পরামর্শ মনে করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছে মোদিকে।
Advertisement
যে দলের নেতা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন বাজপেয়ি, সেই বিজেপি থেকেই প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন নরেন্দ্র মোদি। দেশের ৭২তম স্বাধীনতা দিবসে দেয়া ভাষণে মোদি দাবি করেন, তিনি বাজপেয়ির পথেই চলতে চান। জম্মু-কাশ্মীরের জন্য অটলবিহারী বাজপেয়ী যে স্লোগান তুলেছিলেন, সেই ‘জমহুরিয়ত-ইনসানিয়ত-কাশ্মীরিয়ত’-এর পথই অনুসরণ করবে তার সরকার।
যে বিষয়ে বাজপেয়ির পথ অনুসরণ করবেন বলে মোদি জানিয়েছিলন, নির্দিষ্ট করে সেই বিষয়ে মোদিকে কোনো পরামর্শ দেয়ার প্রয়োজন বাজপেয়ির হয়নি। কিন্তু বাজপেয়ি যে পরামর্শটি মোদিকে দিয়েছিলেন, সেটি কি মোদি অনুসরণ করার কোনো চেষ্টা করেছেন? প্রশ্নটা আজও রয়ে গিয়েছে।
বৃহস্পতিবারই বাজপেয়িকে দেখতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, অটলবিহারী বাজপেয়ি অন্য রকম নেতা ছিলেন। এখন যে রকম রাজনীতি হয়, বাজপেয়ি সে রকম রাজনীতি করতেন না।
নরেন্দ্র মোদির নাম না করলেও, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইঙ্গিত যে সে দিকেই, তা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরের সংশয় নেই। আনন্দবাজার।
Advertisement
এনএফ/পিআর