ভারতের তিনবারের প্রধানমন্ত্রী ও দেশটির সর্বোচ্চ শ্রদ্ধার আসনে থাকা রাজনীতিকদের অন্যতম অটল বিহারী বাজপেয়ীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। দেশটির সরকার সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে সাতদিনের শোক ঘোষণা করেছে। পাশাপাশি শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানও বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সরকার।
Advertisement
বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল ৫টা ৫ মিনিটে নয়াদিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস (এইমস) হাসপাতালে মারা যান বাজপেয়ী। গত ৯ সপ্তাহ ধরে এই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন তিনি। সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে কেন্দ্রীয় সরকার দেশটিতে সাত দিনের শোক ঘোষণা করেছে। অটল বিহারী বাজপেয়ীর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে শুক্রবার নয়াদিল্লি, পাঞ্জাব ও উত্তরাখণ্ড রাজ্য সরকার সাধারণ ছুটির ঘোষণা দিয়েছে।
বিজেপের দীর্ঘদিনের এই নেতা কিডনি, মূত্রনালী ও বুকে সংক্রমণ নিয়ে গত ১১ জুন থেকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সাবেক এই বিজেপি প্রধানকে দেখতে গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত দু'বার হাসপাতালে যান দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
এছাড়াও কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী স্মৃতি ইরানি, কেন্দ্রীয় রেলমন্ত্রী পীযুষ গয়াল, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীসহ অনেকেই তাকে দেখতে হাসপাতালে যান।
Advertisement
১৯৯৬, ১৯৯৮, ১৯৯৯ সালে তিনবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী। প্রথম দফায় ১৩ দিন, দ্বিতীয় দফায় ১৩ মাস আর তৃতীয় দফায় পূর্ণ সময়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেশের দায়িত্বভার সামলেছেন তিনি। ২০১৪ সালে মোদির সরকার ক্ষমতায় আসার পরে বাজপেয়ীকে ভারতরত্ন দেয়া হয়।
প্রধানমন্ত্রিত্ব ছাড়াও ভারতীয়রা বাজপেয়ীকে মনে রাখবে এক দুর্দান্ত সাংসদ, কবি, বাগ্মী ও গণতন্ত্রের এক অতন্দ্র প্রহরী হিসেবেও। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে রাজধর্ম বরাবরই তার কাছে ছিল প্রথম প্রাধান্যের বিষয়। ২০০২ সালে গুজরাটে ভয়াবহ সাম্প্রদায়িক সহিংসতার সময় এ রাজ্যের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে রাজধর্ম পালনের পরামর্শ দিয়েছিলেন বাজপেয়ী। ভারত যদি ধর্মনিরপেক্ষ না হয়, তা হলে ভারত ভারতই নয়; এমন মন্তব্যও শোনা গিয়েছিল তার মুখে।
১৯২৪ সালে গ্বালিয়রে জন্ম বাজপেয়ীর। বাবা কৃষ্ণবিহারী বাজপেয়ী কবি ছিলেন। দীর্ঘ এবং ব্যস্ত রাজনৈতিক জীবনের ফাঁকে অবসর খুঁজে নিয়ে অটলবিহারীও কাব্যচর্চা করতেন নিয়মিত। গ্বালিয়রেই আর্যসমাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন অটল। তখন ছাত্রাবস্থা। তার পরে যোগ দেন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘে।
পরবর্তীতে জনসংঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের অত্যন্ত প্রিয়পাত্র হয়ে ওঠেন। ১৯৭৭ সালে জনতা পার্টি সরকারে মন্ত্রী হন তিনি। কিন্তু পরে সংঘপন্থী অন্য নেতাদের সঙ্গে বাজপেয়ীও জনতা পার্টি ছেড়ে বেরিয়ে আসেন, গঠিত হয় ভারতীয় জনতা পার্টি।
Advertisement
১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারতীয় জনতা পার্টির প্রথম সভাপতিও হন বাজপেয়ী। তার ১৬ বছর পরে প্রথমবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হন।
সূত্র : এনডিটিভি, টাইমস অব ইন্ডিয়া।
এসআইএস/পিআর