বাংলাদেশের সড়ক পথে যে নৈরাজ্য তা বিশ্বব্যাপী আলোচিত। শিশু বিদ্রোহের কারণে তা আরও বেশি প্রচারিত। বেপরোয়া ড্রাইভিং বা রেষারেষিই একমাত্র কারণ নয়, পথ-নৈরাজ্যের পিছনে রয়েছে ক্ষমতার কেন্দ্র থেকে এই নৈরাজ্যকে প্রশ্রয় দেয়া। এতদিন ধরে আমরা একথাটা বলে আসছি, কিন্তু সরকার শুনছিল না। এখন শিশু বিদ্রোহের পর কি শুনবে?
Advertisement
গোটা বিশ্বে কোথাও পাওয়া যাবে না যে, পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি মন্ত্রী আর পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি প্রতিমন্ত্রী। স্বার্থের এই দ্বান্দ্বিক পরিস্থিতিতে দুর্ঘটনায় পরিবহন মালিক বা শ্রমিকের কোন দোষ থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া সম্ভব হয় না।
পুরো পরিবহন ব্যবস্থা একমাত্র ব্যতিক্রম যেখানে সরকারি ও বিরোধী দলের পুরোপুরি একতা বিরাজমান। বাংলাদেশের পরিবহন খাতই একমাত্র বাণিজ্য যেখানে মালিক শ্রমিক ভয়ংকর একতা লক্ষণীয়। যে কোন পরিস্থিতিতে তারা এক হয়ে নৈরাজ্য করে, দেশ অচল করে দেয়। বাংলাদেশই একমাত্র দেশ যেখানে সড়ক দুর্ঘটনায় ভিক্টিমকেই রাষ্ট্র থেকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি আছে।
এমন বাস্তবতায় ক্যান্টনমেন্ট শহীদ রমিজউদ্দিন স্কুল ও কলেজের দুই শিক্ষার্থীর সড়কে হত্যার ঘটনায় নতুন এক বিদ্রোহ দেখলো বাংলাদেশ, যার নাম শিশু বিদ্রোহ। সড়ক হত্যায় যাদের প্রাণ যায়, আহত হয়, পঙ্গু হয় এদের বেশিরভাগই দরিদ্র শ্রেণির। তাই সমাজ ও রাষ্ট্র এ নিয়ে উদ্যোগ নিতে উদ্যমী হয় না।
Advertisement
এই শিশু বিদ্রোহ দেখিয়ে দিয়েছে এই একটি খাতে কি পরিমাণ নৈরাজ্য আর অমানবিকতা এই রাষ্ট্র লালন করে চলেছে। দেখিয়ে দিয়েছে কোন কোন ব্যক্তি বিশেষকে নষ্ট রাজনীতি পালছে শুধু গোয়ার্তুমি আর অহংকারের কল্যাণে।
হানিফের বাস ড্রাইভার ও সহকারী সামান্য আহত যাত্রী পায়েলের চিকিৎসা না করে তার মুখ থেতলে দিয়ে নদীতে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, রেষারেষি করে রাজীবকে হত্যা করে, আহত হয়ে রোজিনা যখন রাস্তায় লুটিয়ে পড়ে, তখন ঘাতক বাস চালক আরও বেপরোয়া গতিতে তার উপর দিয়েই চলে যায়।
বাংলাদেশের রাজপথ পুরোটাই আজ রক্তাক্ত। শুধু কালো পিচঢালা বলে দেখা যায় না। শাসক সেই সুবিধা নেয়। কিন্তু মানুষের হৃদয়ে যে ক্ষত তাও দেখে না দেখার ভান করে করে আজ পুরো জাতিকে দুর্দশায় নিক্ষেপ করা হয়েছে।
খাদের কিনার থেকে কে তুলে আনবে এই খাতকে তা কেউ জানে না। সড়কগুলিতে প্রতিনিয়তই দুর্ঘটনা ঘটছে। এটা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সরকার প্রধানকে স্বীকার করতে হবে এটা অপরাধ। আর তার আশেপাশে যারা এর জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে, নতুন আইন করতে হবে, সেই আইনে মৃত্যুদণ্ডের বিধান সংযোজন করতে হবে।
Advertisement
আর মানুষকে অবশ্যই বোঝাতে হবে। তাদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলতে হবে। রাস্তা পারাপারের নিয়ম ক্ষমতাবানরা আগে মেনে জাতিকে উপদেশ দিতে হবে। এ সবই সময়ের দাবি, সময়ই শিশুদের পথে এনেছে বড়দের শেখানোর জন্য।
আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হই, আর যেন দেরি না করি। এমনিতেই অনেক সময় হেলায় নষ্ট হয়েছে।
লেখক : প্রধান সম্পাদক, জিটিভি।
এইচআর/পিআর