জাতীয়

আন্দোলনের স্ফুলিঙ্গে স্থবির ঢাকা

রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা আহসান উল্ল্যাহ ডাক্তারের পরামর্শে জ্বরাক্রান্ত শিশু কন্যা রুবির রক্তপরীক্ষা করাতে প্রাইভেটকার নিয়ে বুধবার সকালে বেরিয়ে পড়েন। বেলা ১১টার দিকে ধানমন্ডির একটি বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যাওয়ার পথে মিরপুর রোডে ঢাকা কলেজের অদূরে টিচার্স ট্রেনিং ইনস্টিটিউটের সামনের রাস্তায় যানজটে পড়েন। দুই ঘণ্টা পরও তিনি সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে পৌঁছাতে পারেননি।

Advertisement

রাজধানীর কলাবাগানের আরেক বাসিন্দা আবদুল হামিদ এ মাসে হজে যাবেন। গতকাল (মঙ্গলবার) দুপুর ১২টায় তিনি আশকোনা হজ অফিস থেকে পাসপোর্ট ও টিকিট সংগ্রহ করতে যান। কলাবাগান থেকে মাত্র ৪০ মিনিটে বিমানবন্দর সড়কে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের প্রধান কার্যালয় বলাকা ভবনের সামনে পৌঁছান। আর এখানেই আটকা পড়েন তিনি। বলাকা ভবন থেকে বিমানবন্দরে প্রবেশ মোড় পর্যন্ত বাস, প্রাইভেট ও মোটরসাইকেলে করে পৌঁছাতে এক থেকে দেড় মিনিট সময় লাগে। অথচ এই দেড় মিনিটের পথ অতিক্রম করতে তার লেগেছে দেড় ঘণ্টা।

বাসচাপায় নিহত দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের রাস্তা অবরোধের কারণে গতকাল মঙ্গলবার ও আজ বুধবার এ দুটো দৃশ্যেপটের অবতারণা হয়। শুধু সায়েন্স ল্যাবরেটরি কিংবা বিমানবন্দর সড়ক নয়; রাজধানীর উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তের বিভিন্ন সড়কে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে ঢাকা শহর স্থবির হয়ে পড়েছে। স্ফুলিঙ্গের মতো ছাত্র আন্দোলন রাজধানী ঢাকা থেকে ছড়িয়ে পড়ছে সারাদেশে।

গতকাল ও আজ সরেজমিন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় শতশত যানবাহন রাস্তায় আটকে আছে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দখলে রাজপথ। সহপাঠীদের মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় ক্ষিপ্ত হয়ে তারা গত দু’দিনে বেশ কিছু বাস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে। বাসের চাপায় পিষ্ট হয়ে নিহত দুজন শিক্ষার্থী শহীদ রমিজউদ্দিন কলেজের হলেও এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাজধানীর বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্বপ্রণোদিত হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে।

Advertisement

বর্তমান সরকারের নয় বছরের শাসনামলে কোটা বাতিলের দাবির আন্দোলনের কারণে সরকার কিছুটা বেকায়দায় পড়লেও রাস্তাঘাট অবরোধ করার কারণে নগরবাসীর মারাত্নক দুর্ভোগ হচ্ছে-এমন কথা বলে লাঠিচার্জ করে আন্দোলনকারীদের হটিয়ে দিতে পেরেছিল। একই কায়দায় বর্তমানে আন্দোলনরত কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হটিয়ে দিতে লাঠিচার্জ করে সমালোচনার মুখে পড়েছে সরকার।

পরিস্থিতি বিবেচনায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়েদুল কাদের বলতে বাধ্য হয়েছেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক।

রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা হাফিজউদ্দিন এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘বিরোধী রাজনৈতিক দলের আন্দোলন নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে মতভেদ থাকলেও শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনে দুর্ভোগ হলেও তা সহ্য করছেন সকলে। সবার একটা কথা- তাদের ভোগান্তির বদলেও যদি ভাল কিছু হয়, যদি পরিবহন সেক্টরের অরাজকতা কমে।’

বুধবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় স্কুল শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন যানবাহনের ফিটনেস ও চালকের লাইসেন্স পরীক্ষা করেছে। কাগজপত্রে ত্রুটি পেলে তারা ট্রাফিক পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে নিয়ে গেছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে পুলিশও কিছুটা নমনীয়। তারা কোনো প্রকার অ্যাকশনে যাচ্ছেন না। তবে সাধারণ মানুষ বলছেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে নগরবাসীর স্বাভাবিক জীবনযাপন স্থবির হয়ে পড়েছে। দ্রুত এ অবস্থার অবসান হওয়া উচিত।

Advertisement

এমইউ/এসআর/এমএস