মরদেহ দুটি পড়েছিল রাস্তায়। নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে গেছে। থেঁতলে গেছে মুখ। হাত-পা ভেঙে খণ্ড খণ্ড। কংক্রিটের কালছে বর্ণের রাস্তা লাল রক্তে ভাসছে। মরদেহ দুটি ঘিরে চলছে সহপাঠীদের আহজারি, হাউমাউ কান্না আর বিলাপ।
Advertisement
‘উফ, কী বিভ্ৎস’! এ কথা বলেই জ্ঞান হারালো এক তরুণী। কান্নারত তরুণ-তরুণীদের কয়েকজন ‘ওকে ধর, ওকে ধর’ বলে ফুটপাতে তুলে নিয়ে গিয়ে মাথায় পানি ঢালতে লাগলো।
আর অন্য কয়েকজন ক্ষুব্ধ তরুণ উত্তেজিত হয়ে বাস ভাঙচুর করতে ইট ও লাঠি হাতে ছুটে গেল রাস্তায়। ওদের থামাতে পুলিশ পথ আটকালো। এ সময় উত্তেজিত তরুণরা কান্নায় ভেঙে পড়ে পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘এই বেপরোয়া বাসই আমাদের তরতাজা বন্ধুদের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। আমরা ভাঙচুর করবো না। পারবেন ফিরিয়ে দিতে আমাদের নিষ্পাপ বন্ধু দুটির প্রাণ। আপনার সন্তানকে এভাবে হত্যা করলে আপনি কী করতেন?’
ওদের প্রশ্ন শুনে পুলিশ কর্মকর্তাও হতবিহ্বল। কর্তব্যের খাতিরে ওদের ভাঙচুর থেকে বিরত থাকতে প্রচেষ্টা চালাতে লাগলেন।
Advertisement
উত্তেজিত তরুণ-তরুণীদের সবার বয়স আনুমানিক ষোলো-সতের বছর। ওরা সকলেই রাজধানীর শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের শিক্ষার্থী ও বিমানবন্দর সড়কে বাসের চাপায় নিহত একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মিম ও আব্দুল করিম রাজীবের সহপাঠী।
আজ (রোববার) দুপুর ১২টার দিকে ক্যান্টনমেন্ট থানাধীন খিলক্ষেত এলাকার রেডিসন ব্লু হোটেলের সামনের সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস দুই তরুণ শিক্ষার্থীর প্রাণ কেড়ে নেয়। বাসের চাপায় আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন।
ঘটনাস্থলেই দুই শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার খবর কলেজ ক্যাম্পাসে পৌঁছালে তরুণ শিক্ষার্থীরা ছুটে আসে। সহপাঠীর ক্ষতবিক্ষত মরদেহ দেখে ক্ষুব্ধ হয়ে বাস ভাঙচুর করে। উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের কেউ হাসপাতালে কেউ ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন।
প্রত্যক্ষদর্শী এক শিক্ষার্থী বলেন, এক বাস দ্রুতগতিতে আরেক বাসকে ওভারটেক করতে গিয়ে সহপাঠীদের চাপা দেয়। নিয়মিত এ পথে যাতায়াত করেন এমন অনেকেই বলেছেন, ওভারব্রিজ থেকে নামার সময় বাসগুলো কে কার আগে যাত্রী তুলবে সে প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়। এ দুর্ঘটনাই তার প্রমাণ।
Advertisement
এমইউ/বিএ/জেআইএম