গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পূর্বখন্ড গ্রামে অবস্থিত ‘গ্যালী ইন্ডাস্ট্রিয়াল কোম্পানি লিমিটেড’ নামে ব্যাটারি তৈরির কারখানা বন্ধের দাবি জানিয়েছে স্থানীয়রা।
Advertisement
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কেওয়া পূর্বখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে এ দাবি জানানো হয়। আগামী শনিবারের মধ্যে কারখানার কার্যক্রম বন্ধ না করা হলে কারখানায় তালা ঝুলিয়ে দেয়া হবে বলে সমাবেশ থেকে ঘোষণা দেয়া হয়।
কেওয়া পূর্বখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি শ্রীপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর রমিজ উদ্দিনের সভাপতিত্বে ভবানীপুর মুক্তিযোদ্ধা কলেজের সহকারী অধ্যাপক এমদাদুল হকের পরিচালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য দেন বিদ্যালয়ের জমিদাতার পক্ষে কফিল উদ্দিন সরকার, এলাকাবাসীর পক্ষে সিরাজুল ইসলাম, অভিভাবকবৃন্দের পক্ষে রাশিদা আকতার, ছাত্র-ছাত্রীদের পক্ষে তাইয়্যেবা।
এ সময় শ্রীপুর গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র আনোয়ার হোসেন, কেওয়া পূর্বখন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ইয়াসমিন আক্তার রুমা, সহকারী শিক্ষক খলিলুর রহমান, নদী পরিব্রাজক দলের পক্ষে আজহারুল ইসলাম, রায়হানুল ইসলামসহ এলাকার কয়েকশ মানুষ উপস্থিত ছিলেন ।
Advertisement
এলাকাবাসী জানায়, স্থানীয় বরুণ বাবু ও মৃত আবুল হোসেনের মাসুদুর রহমান, মহসিন ও মজিবরের কাছ থেকে প্রায় ১৬ বিঘা জমি মাসিক ভাড়ায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে ২০১৬ সাল থেকে পুরাতন ব্যাটারি ভেঙে নতুন ব্যাটারি তৈরি করে আসছে। এতে পুরাতন ব্যাটারির সিসা গলিয়ে নতুন ব্যাটারি তৈরির সময় তা পোড়ানো হয়। সিসা পোড়ানোর সময় সৃষ্ট ঝাঁজালো গন্ধ ও ধোঁয়ায় চোখ-মুখমন্ডল জ্বালা পোড়া করে। নির্গত বিষাক্ত লেড অক্সাইড গ্যাসে অসুস্থ হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মরছে গবাদিপশু, নষ্ট হচ্ছে সবজি, ফল, গাছপালাসহ কৃষকের ধানখেত।
প্রতিবাদ সমাবেশে সিরাজুল ইসলাম বলেন, কারখানার আশপাশের ঘাস খেয়ে এ পর্যন্ত আমার তিনটি নিয়ে গরু মারা গেছে। কারখানা কর্তৃপক্ষসহ স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েও কোনও প্রতিকার পাননি তিনি।
কেওয়া গ্রামের শামসুদ্দিন জানান, তিনি এ বছর সাত বিঘা জমিতে ধানের চাষ করেছিলেন। কারখানার বিষাক্ত অপরিশোধিত বর্জ্য ধান ক্ষেতে গিয়ে তাঁর পুরো সাত বিঘা জমির ধান গাছই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
এলাকাবাসীর পক্ষে রাশিদা আকতার বলেন, আমার মেয়ে কেওয়া পূর্ব খন্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত। গত বুধবার (২৪জুলাই) বিদ্যালয় থেকে ফিরে সে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে তার জ্ঞান হারিয়ে যায়। পরে তাকে চিকিৎসা দিলেও তার পেট ব্যাথা কমেনি।
Advertisement
কারখানার শ্রমিক রিপন মিয়া জানান, রিপা নামের কারখানার এক শ্রমিক শ্বাসকষ্ট ও পেটের ব্যাথায় অসুস্থ হয়ে মারা গেছে। অপর শ্রমিক মাহমুদা আক্তারের বুকের দুধ খেয়ে তার দেড় বছরের শিশুও মারা গেছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির জানান, স্থানীয়দের কাছ থেকে অভিযোগ পেয়ে পরিবেশ অধিদফতরকে তদন্ত করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য বলা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
শিহাব খান/আরএআর/জেআইএম