জাতীয়

মন্ত্রীর পদত্যাগে স্বস্তিতে নেপালি মেডিকেল শিক্ষার্থীরা

নেপালের সদ্যসাবেক আইন বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী শের বাহাদুর তামাংয়ের পদত্যাগে স্বস্তি এসেছে বাংলাদেশের নেপালি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের মধ্যে।

Advertisement

সে দেশের মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকাকালে শের বাহাদুর তামাং বলেন, বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজগুলোতে ডাক্তারি পড়তে আসা নেপালি ছাত্রীরা এমবিবিএস সার্টিফিকেট পেতে তাদের ‘সম্ভ্রম বিক্রি’ করতে বাধ্য হচ্ছে।

মন্ত্রীর এই বক্তব্যে নেপালে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে পদত্যাগে বাধ্য হন তিনি।

সম্প্রতি ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের নেপালি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। নেপালের আইনমন্ত্রীর পদত্যাগে তাদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে জানান তারা। ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজে নেপালের প্রায় অর্ধশত শিক্ষার্থী রয়েছে। এদের অর্ধেকই ছাত্রী।

Advertisement

নেপালের সাবেক আইনমন্ত্রী শের বাহাদুর তামাংয়ের বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজের নেপালি শিক্ষার্থীদের নিয়ে মন্তব্য এবং তার পদত্যাগ নিয়ে যাদের সঙ্গে কথা হয় তাদের মধ্যে তরুণ সানি, ভিকরাট কুমার নায়াক, আসথাবা শিরিস্তা, সনি গৌরাঙ্গ, আলিশা কাফলি, জয়প্রকাশ যাদব, রঞ্জন যাদব, নিয়াজ আলম, ওমদ্বীপ যাদব, সাদিকাসা গৌরি এবং মনীষা।

এমবিবিএস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী মনীষা বলেন, ‘দায়িত্বশীল জায়গা থেকে মন্ত্রী যে ভিত্তিহীন বায়বীয় বক্তব্য দিয়েছেন আমরা তার কড়া প্রতিবাদ করেছি এবং তিনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন।’

বাংলাদেশের মেডিকেল কলেজের প্রতি নেপালিদের আগ্রহ কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে মনীষা বলেন, ‘আন্তর্জাতিক মানের কারিকুলাম, খরচ কম তাই মেডিকেলে পড়ার জন্য বাংলাদেশের প্রতি নেপালিদের আগ্রহ।’

তিনি জানান, বাংলাদেশে কখনও তাকে বা তার কোনো নেপালি সহপাঠীকে কোনো প্রকার হয়রানির শিকার হতে হয়নি। এমনকি কোনো পরিচিতের কাছ থেকেও এমন কোনো কথা শোনেননি বলেও জানান।

Advertisement

মনীষা বলেন, ‘মন্ত্রীর পদত্যাগে আমার স্বস্তি পেয়েছি।’

মনীষার নেপালি ভাষার জবাব বাংলায় দেন তার সহপাঠী নেপালি নাগরিক ওমদ্বীপ যাদব। ওমদ্বীপ যাদব নেপালের স্টেট-২ এর বড় এলাকার বাসিন্দা। তার চাচা ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে পড়াশোনা করে নেপাল গিয়ে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত আছেন। তার অনুপ্রেরণায়ই বাংলাদেশে ডাক্তারি পড়তে এসেছেন ওম।

বাংলাদেশে নেপালি মেডিকেল শিক্ষার্থীদের যেসব সংগঠন রয়েছে সেগুলোর একটি বৃহৎ সংগঠনের ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের রিপ্রেজেন্টিভ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন ওমদ্বীপ যাদব।

নেপালি শিক্ষার্থীদের বাংলাদেশের প্রতি আগ্রহ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘আমাদের শতকরা ৬০ ভাগ শিক্ষার্থীর আগ্রহ বাংলাদেশের প্রতি। কারণ আন্তর্জাতিক মানের সিলেবাস, খরচ কম। অন্যদিকে ভারত, রাশিয়া, চীন, ফিলিপাইন ওই সব দেশের মেডিকেলে খরচ অনুযায়ী মান তেমন নয়। তাই ভালো বলেই আমরা এখানে পড়ছি। বাংলা ভাষা কঠিন নয়, আমাদের ভাষার সঙ্গে মিল রয়েছে। ধরেন নেপালিরা বলে, তিমি, বাংলায় বলে তুমি।’

ওম বলেন, ‘বাংলাদেশের মেডিকেল থেকে পাস করতে হলে লেখাপড়া করতে হয়। আমরা শুনি, আমাদের দেশ থেকে অন্য দেশে যারা মেডিকেলে পড়তে যায় তারা ভর্তি হওয়ার পর বছর শেষ হলেই তারা পাস করে যায়। কিন্তু বাংলাদেশের মেডিকেলে আপনার লেখাপড়া করতে হয়।’

তিনি বলেন, ‘মন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়টি পরিষ্কার হয়েছে- তিনি ভিত্তিহীন কথা বলেছেন। তার এ নিয়ে আশা করি কোনো ধরনের বিভ্রান্তি ছড়াবে না।’

ওম বলেন, ‘মন্ত্রী হয়তো ওনার কোনো ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ওই ধরনের বায়বীয় বক্তব্য দিয়েছেন। তার এই বক্তব্যের প্রতিবাদ বাংলাদেশিদের আগে আমরা করেছি এবং তিনি পদত্যাগও করেছেন। সুতরাং বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশিরা কেউ দুঃখ পাবেন না বলে আশা করি। তাছাড়া ওনার মিথ্যা বক্তব্যের কোনো প্রভাব পড়বে না। বাংলাদেশে আজ পর্যন্ত আমাদের তুই বলে কেউ কিছু বলেনি।’

ওম এবং মনীষার বক্তব্য সমর্থন করেন উপস্থিত নেপালি অন্য শিক্ষার্থীরাও। ঢাকা কমিউনিটি হাসপাতালের কর্মকর্তা আশিকুর রহমান স্বাধীন বলেন, ‘আমাদের ধারণা বাংলাদেশে প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার শিক্ষাথী রয়েছে যারা দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে লেখাপড়া করছে।’

তিনি বলেন, ‘নেপালের মন্ত্রীর বক্তব্যে ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। এখান থেকে লিখিতভাবে মন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়েছে।’

বাংলাদেশের স্বাস্থ্যশিক্ষা নিয়ে প্রায় দুই দশক লেখালেখি করছেন ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. সাকলায়েন রাসেল।

এ বিষয়ে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘অনেক দেশ থেকে শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেলে পড়তে আসে। এদের মধ্যে নেপালি শিক্ষার্থীর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বাংলাদেশ নেপালের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে বহু বছর ধরে দক্ষ চিকিৎসক তৈরিতে ভূমিকা রাখছে। একজন দায়িত্বশীল মন্ত্রীর এ ধরনের ঢালাও মন্তব্য দুই দেশের সুসম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর।’

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের মতো কঠোর পরিশ্রম আর পেশাগত পরীক্ষায় কৃতকার্য হওয়ার পরই একজন নেপালি শিক্ষার্থী এমবিবিএস ডিগ্রি অর্জন করেন। তার (মন্ত্রীর) পদত্যাগে একটা অস্বস্তি থেকে মুক্তি পেয়েছি আমরা।’

কেএইচ/বিএ/আরআইপি