গায়ানা, দেরাদুন, ব্যাঙ্গালুরু, হারারে- পৃথিবীর চারটি শহর। দুরত্বের হিসেবে কত কিলোমিটার হবে? প্রায় ১৮ হাজার কিলোমিটার- চারটি শহরের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত দুরত্বকে যোগ করলে দাঁড়াবে। তবে এই চারটি শহরকে কিন্তু একসুতোয় গেঁথে দিয়েছেন বাংলাদেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান মুশফিকুর রহীম। এই চারটি শহরেই ম্যাচের একেবারে শেষ ওভারে এসে লেগ সাইডে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে আউট হয়েছেন তিনি। প্রায় একই ভঙিমায়, একই নিয়মে।
Advertisement
শেষ সাত বছরে মোট ৫বার এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছেন মুশফিক এবং কাকতালীয়ভাবে প্রতিটি ম্যাচেই হেরেছে বাংলাদেশ দল। খুবই করুণভাবে। বিশেষ করে, একেবারে জয়ের দ্বারপ্রান্ত থেকে। মুশফিকের এমন আউটই সব কিছু নষ্ট করে দিয়েছিল। ম্যাচ থেকে মুহূর্তের মধ্যে ছিটকে দিয়েছিল বাংলাদেশকে।
এই তালিকায় সর্বশেষ সংযোজন গায়ানা। এখানে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ক্যারিবীয় অধিনায়ক জ্যাসন হোল্ডারের ফুলটস বলকে ডিপ মিডউইকেটে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মুশফিক। অথচ তার আগে দারুণ খেলছিলেন তিনি। ৬৬ বলে করেছিলেন ৬৮ রান। মুশফিক আউট হওয়ার পর প্রয়োজন হয় ৫ বলে ১০ রান। যা আর নেয়া সম্ভব হলো না। বাংলাদেশও হেরে গেলো মাত্র ৩ রানে।
মাত্র একমাস আগেই দেরাদুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে তৃতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে শেষ ওভারে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে আউট হয়ে গিয়েছিলেনে মুশফিক। ওই সময় বোলার ছিলেন রশিদ খান। ওই ম্যাচে দুর্দান্ত ব্যাটিং করছিলেন মুশফিক। ১৯তম ওভারে করিম জানাতকে টানা ৫টি বাউন্ডারি মেরেছিলেন। শেষ বলে ১ রান নিয়ে ছিলেন স্ট্রাইকে। কিন্তু শেষ ওভারের প্রথম বলেই রশিদ খানের বলে আউট হয়ে গিয়েছিলেন তিনি। যে কারণে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে হারতে হলো মাত্র ১ রানে।
Advertisement
২০১৬ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শেষ ওভারে সবচেয়ে নাটকীয় ব্যর্থতার জন্ম দেন মুশফিক। সেবার শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১০ রানের। হার্দিক পান্ডিয়াকে পরপর দুই বলে দুটি বাউন্ডারি মেরে বিজয়ের উদযাপন শুরু করে দিয়েছিলেন মুশফিক। কারণ ওই সময় ৪ বলে মাত্র ২ রান প্রয়োজন ছিল বাংলাদেশের। কিন্তু তৃতীয় বলে এসে ফুলটস বলকে খেলতে গিয়ে ডিপ মিডউইকেটে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন মুশফিক। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ ভারতের কাছে হারলো মাত্র ১ রানে।
ওই ম্যাচের পর যতবারই ভারতের মুখোমুখি হয়েছে বাংলাদেশ, সব সময়ই পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে, ব্যাঙ্গালুরুর সেই দুঃস্বপ্ন থেকে বেরিয়ে আসতে চায় টাইগাররা। মাত্র সাত সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও শেষ ওভারে এসে একই ধরনের আউট হলেন মুশফিক। তাকেই প্রশ্ন করা প্রয়োজন, শেষ ওভারে আসলে কি ভর করে তার মাথায়? কেন তিনি এভাবে একের পর এক একই ভঙ্গিমায় উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসেন শেষ ওভারে?
২০১১ এবং ২০১৩ সালে আরও দুটি ঘটনায় যুক্ত রয়েছে মুশফিকের নাম। যে দু’বার মুশফিক আউট হয়েছেন একেবারে শেষ ওভারে গিয়ে এবং নিশ্চিত জয়ের অবস্থা থেকে হারতে হয়েছে বাংলাদেশকে। দু’বারই তিনি আউট হয়েছেন হারারেতে। লং অন এবং ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন তিনি।
তিনি কি সত্যি সত্যি ম্যাচটা ফিনিশ করে আসার চেষ্টা করেন নাকি সব সময়ই এমন মোক্ষম সময়ে তার মাথায় উচ্চাভিলাসী শট খেলার ভুত চাপে- কোনটা? কেনই বা বারবার তিনি ওই কঠিন এবং গুরুত্বপূর্ণ সময়ে লেগ সাইডে বাউন্ডারি মারতে গিয়ে এভাবে ক্যাচ দেন? যদিও ডিপ মিডউইকেট এলাকাটা মুশফিকের খুবই প্রিয়। এই এলাকা দিয়েই অধিকাংশ ছক্কা মেরে থাকেন তিনি।
Advertisement
ব্যাঙ্গালুরু ঘটনার পর ইএসপিএন ক্রিকেট মান্থলিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তখনকার বাংলাদেশ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে বলেছিলেন, ‘এ ধরনের পরিস্থিতি আসলে আমি আবারও একই জায়গায় মাহমুদউল্লাহ এবং মুশফিককে চাইবো।’
গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে শেষ তিনটি আউট নিয়ে মাশরাফি বলেন, ‘শেষ ওভার পর্যন্ত আমরা ম্যাচ টিকে ছিলাম। যদিও মাহমুদউল্লাহ ওইভাবে রানআউট না হতেন এবং শেষ মুহূর্তে পরপর দুই বলে সাব্বির আর মুশফিক আউট না হতেন, তাহলে আমরাই জিততে পারতাম।’
যে সব ম্যাচে অপরাজিত থেকে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন মুশফিক এবং জেতে বাংলাদেশ।* ২০১১ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।* ২০১২ সালে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ।* ২০১৪ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ।* ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ।* ২০১৮ সালে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।
যে সব ম্যাচে শেষ ওভারে আউট হন মুশফিক এবং হারে বাংলাদেশ।* ২০১১ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ।* ২০১৩ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।* ২০১৬ সালে ভারতের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।* ২০১৮ সালে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচ।* ২০১৮ ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ।
আইএইচএস/জেআইএম