বাংলাদেশে প্রায় ১ কোটি মানুষ হেপাটাইটিস-বি অথবা ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত। দেশের ৬৫ ভাগ মানুষ লিভার ক্যান্সারে আক্রান্ত এই হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের কারণে।
Advertisement
বৃহস্পতিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে ‘বাংলাদেশে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাস : অতীত ও বর্তমান প্রাদুর্ভাব এবং নির্মাণের সুপারিশ’ শীর্ষক বৈজ্ঞানিক সেমিনার থেকে এই তথ্য দেয়া হয়।
সেমিনারে মূল প্রবন্ধ তুলে ধরেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও হেপাটোলজি সোসাইটির জেনারেল সেক্রেটারি ডা. মো. শাহিনুল আলম।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগ ২০১৭ সালে দেশব্যাপী হেপাটাইটিস-বি ও ‘সি’ ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের ওপর জরিপ চালায়। জরিপের তথ্য অনুযায়ী দেশের ৫.১% ‘বি’ ভাইরাসে ও ০.২% ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত।
Advertisement
তিনি জানান, ‘বি’ ভাইরাসে দেশের মোট ৮৫ লাখ মানুষ আক্রান্ত; যার মধ্যে ৫৭ লাখ পুরুষ ও ২৮ লাখ নারী। নারীদের মধ্যে ১৮ লাখ সন্তানদানে সক্ষম (১৫ থেকে ৪৫ বছর)। আর দেশের প্রতি ৫০০ জনের ১ জন ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্ত।
গবেষণায় দেখা যায়, এই ভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা নারীদের (২৩.৯%) তুলনায় পুরুষের (৭৬.৬) বেশি। কৃষকদের মধ্যে আক্রান্তের হার ৮.৯%। বাংলাদেশে একিউট হেপাটাইটিস (প্রচলিত জন্ডিস) এর কারণ ৪৩% ক্ষেত্রে হেপাটাইটিস-ই ভাইরাস, ১৫% ক্ষেত্রে ‘বি’ ভাইরাস এবং ৮% ক্ষেত্রে ‘এ’ ভাইরাস। এ ছাড়াও লিভার সিরোসিসের জন্য ৬০% ‘বি’ ভাইরাস ও ‘সি’ ভাইরাস ৩০ ভাগ দায়ী। লিভার ক্যান্সারের জন্য ৬৫% ‘বি’ ভাইরাস ও ১৭% ‘সি’ ভাইরাস দায়ী।
ডা. মো. শাহিনুল আলম বলেন, হেপাটাইটিস- ই এবং ‘এ’ একটি পানিবাহিত রোগ। হেপাটাইটিস-সি রক্তবাহিত। ‘বি’ ভাইরাস সংক্রমণের অন্যতম কারণ হলো জন্মের সময় পায়ের কাছ থেকে শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে থাকে। শিশুদের ক্ষেত্রে ৯৫% এটি ক্রনিক লিভার ডিজিজ তৈরি করে, এজন্য এই রোগে আক্রান্ত ১৫ লাখ শিশুর চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি।
বিশ্বব্যাপী হেপাটাইটিস ‘বি’ ও ‘সি’ ভাইরাস প্রতিরোধে অন্যতম করণীয় হচ্ছে ‘গেট টেস্টেড’ অর্থাৎ পরীক্ষা করানো। কারণ এই রোগে আক্রান্ত ৯০% জানে না যে তারা এই ভাইরাস বহন করছে। এটি সনাক্ত করার জন্য দুইটি সাধারণ পরীক্ষা করানো হয় যা সরকারি হাসপাতালে সম্ভব।
Advertisement
গবেষণার আলোকে তিনি কয়েকটি সুপারিশ তুলে ধরেন। তিনি বলেন, দেশের সব সরকারি হাসপাতালে সবার জন্য বিনামূল্যে হেপাটাইটিস বি-সি পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। এই পরীক্ষার খরচ হবে মাত্র ৩০ টাকা। সারাদেশের লোকের এই পরীক্ষা করাতে ৫০০ কোটি টাকা খরচ হবে, এতে ৫০০০ কোটি টাকা বাঁচানো সম্ভব।
সুপারিশমালায় আরও উল্লেখ করা হয়, হেপাটাইটিস হলেই সরকারি ও বেসরকারি চাকরিতে অযোগ্য ঘোষণা করা যাবে না, প্রজননক্ষম নারী ও শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসা দেয়া জরুরি, ‘সি’ ভাইরাসে আক্রান্তের চিকিৎসায় ভেলপ্যাটাসভির, ভোক্সিলাপ্রেভির, পিব্রেনটেসভিরকে জীবনরক্ষাকারী ওষুধ ঘোষণা করে এর কাঁচামালের ওপর শুল্ক ও ভ্যাট কমাতে হবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, বিশেষ অতিথি হিসেবে স্বাস্থ্য অধিদফতরের প্রাক্তন মহাপরিচালক অধ্যাপক এম এ ফয়েজ উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক মবিন খান।
এআর/এনএফ/এমআরএম/জেআইএম