মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে টানা বৃষ্টিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় চট্টগ্রাম নগরের বিভিন্ন এলাকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের সরে যেতে মাইকিং করেছে জেলা প্রশাসন।
Advertisement
জেলা প্রশাসকের স্টাফ অফিসার ও সহকারী কমিশনার রমিজ আলম জাগো নিউজকে জানান, মঙ্গলবার ভোর থেকে টানা বৃষ্টির পর বিকেলের দিকে নগরের টাইগার পাস, লালখান বাজার মতিঝর্ণা, আকবর শাহসহ বিভিন্ন পাহাড়ি এলাকায় মাইকিং করা হয়।
তিনি বলেন, ‘যেসব পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে সেসব এলাকায় জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে লোকজনকে সরে যেতে বলা হচ্ছে। সরে যাওয়া লোকজনকে আশ্রয় করে দিতে সংশ্লিষ্ট এলাকার স্কুলগুলোকে জরুরি আশ্রয় কেন্দ্র ঘোষণা করে খুলে দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, নগরীর লালখান বাজার, টাইগারপাস, সিআরবি, মতিঝর্ণা, ফয়’স লেক, আকবর শাহ এলাকায় মোট ১৩টি পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসতি রয়েছে। এসব পাহাড়ের অধিকাংশেরই মালিক রেলওয়ে, ওয়াসা, সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান।
Advertisement
বর্ষার সময় পাহাড়ধসে প্রাণহানি ঠেকাতে গত ৮ মে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় নতুন করে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় ও বসতি চিহ্নিত করতে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ২০০৭ সালের জুনে অতি বৃষ্টিতে চট্টগ্রাম মহানগরী ও আশপাশের এলাকায় পাহাড় ও ভূমিধসে ১২৭ জনের মৃত্যু হয়।
এদিকে মঙ্গলবার ভোর থেকে মৌসমী বায়ুর প্রভাবে টানা বর্ষণে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামের মানুষের জনজীবন। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার নাজুকতার কারণে মূল সড়ক থেকে গলিপথ পর্যন্ত বৃষ্টির পানিতে থই থই করছে। বৃষ্টির কারণে সড়কে যানবাহনের সংখ্যাও কমে যাওয়ায় ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছেন নগরের বাসিন্দারা। আবার অনেক স্থানে জলজটের কারণে গাড়িও চলছে না, কোথাও রিকশা চলাচল করলেও ভাড়া গুণতে হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। এদিকে ভারি বর্ষণের কারণে নগরে পাহাড়ধসের সর্তকতা জারি করেছে আবহাওয়া অফিস।
মঙ্গলবার ১২ টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৭৯ দশমিক ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস।
রাতভর থেমে থেমে বৃষ্টি হলেও ভোর থেকে টানা ভারি বর্ষণের কারণে সকালে জরুরি প্রয়োজনে বের হওয়া নগরবাসী ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েন। বিশেষ করে সমস্যায় পড়েন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, চাকরিজীবী ও খেটে খাওয়া মানুষ। সড়কে পানি জমে যাওয়ায় যানবাহনের সংখ্যাও কমে গেছে। গন্তব্যে যেতে হলে গুণতে হচ্ছে কয়েকগুণ ভাড়া।
Advertisement
অন্যদিকে নগরের নিম্নাঞ্চলে দেখা দিয়েছে জলাবদ্ধতা। নগরীর আগ্রাবাদ এক্সেস সড়ক, বড়পোল মোড়, সিডিএ আবাসিক এলাকা, পোর্ট কলোনির কয়েকটি সড়ক, চান্দগাঁও আবাসিক এলাকা, বহদ্দারহাট মোড়, বহদ্দারবাড়ি সড়ক, হালিশহর, পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এছাড়া নগরীর জিইসি মোড়, দুই নম্বর গেইট, প্রবর্তক মোড়, মেহেদীবাগ এলাকায় সড়কেও পানি জমে যায়।
পাহাড় ক্ষয়ে বৃষ্টির পানির সঙ্গে নামছে প্রচুর বালু। ভরাট হচ্ছে নালা-খাল, পানি উঠে যাচ্ছে সড়কে। নালায় বালি জমে পানির প্রবাহে বাধাপ্রাপ্ত হওয়ায় জলমগ্ন হয়ে পড়েছে নগরের অধিকাংশ এলাকা।
এদিকে মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় মঙ্গলবার (২৪ জুলাই) বেলা ১১টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও দমকা হাওয়াসহ ভারী (৪৪-৮৮ মিলিমিটার) থেকে অতি ভারী (৮৯ মিলিমিটারের বেশি) বর্ষণ হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
অতি বর্ষণের কারণে সিলেট ও চট্টগ্রাম বিভাগের পাহাড়ি এলাকার কোথাও কোথাও ভূমিধসের আশঙ্কার কথাও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
আবু আজাদ/জেএইচ/এমএস