সপ্তাহ গড়ালেই তিন সিটিতে নির্বাচন। জাতীয় নির্বাচনের আগ মুহূর্তে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের সম্ভবত এটিই বড় আসর। রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট নগরীতে এখন শুধুই নির্বাচনী আমেজ। পোস্টার, ক্যানভাস আর মিছিল-মিটিংয়ে মুখরিত ওই তিন সিটির অলিগলি। খুলনা ও গাজীপুরের নির্বাচনী বিতর্ক আর সমালোচনার ঘোর কাটেনি এখনও। ফের বড় তিন সিটির নির্বাচন। নির্বাচন ঘিরে আলোচনা হচ্ছে, সমালোচনাও হচ্ছে। সে আলোচনায় গুরুত্ব পাচ্ছে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনও। তবে স্থানীয় সরকারের এ নির্বাচনে সব আলোচনা ছাপিয়ে সিলেট সিটি কর্পোরেশনে ভিন্নমাত্রা যোগ হয়েছে। মূলত এখন পর্যন্ত স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতের প্রার্থী বহাল থাকায় সবার দৃষ্টি এখন সিলেটে। অনেকে স্থানীয় এ নির্বাচনের সঙ্গে গাঁথুনি দিচ্ছে জাতীয় নির্বাচনকেও। যে জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীরা ঘর থেকে বের হতে পারেন না, তারাই এখন সিলেটের নির্বাচনী ময়দান চষে বেড়াচ্ছেন। একাধিক মামলার আসামিও নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন জামায়াতের প্রার্থীর পক্ষে।
Advertisement
প্রশ্ন, সরকার কি তাহলে জামায়াতের ব্যাপারে নমনীয়! নাকি সিলেটে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতেই জামায়াত প্রশ্নে বিশেষ ছাড়। জনমনে এখন এ-ও প্রশ্ন, জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে বাইরে রাখার যে গুঞ্জন, তারই পরীক্ষা চলছে সিলেটে। নইলে এমন সরব আয়োজনে শিবিরের কেন্দ্রীয় সাবেক সভাপতি এহসানুল মাহবুব জুবায়ের নির্বাচনী ঢাকঢোল পেটায় কী করে! আওয়ামী লীগ আর জামায়াতের মধ্যকার কেন্দ্রীয় বোঝাপড়া, নাকি স্থানীয় হিসাব-নিকাশের রূপায়ন মিলছে সিলেটে- জাগো নিউজ’র পক্ষে এমন প্রশ্ন করা হয়েছিল আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরানের কাছে। তিনি অবশ্য সমঝোতার কথা সরাসরি অস্বীকার করেন। বলেন, ‘স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনো প্রকার সমঝোতা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। জামায়াতের নিবন্ধন ও প্রতীক বাতিল হয়েছে। সিলেট মহানগর আমীর জুবায়ের সাহেব স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন।’ কামরান বলেন, ‘বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যকার বিরোধের জেরে তারা আলাদা আলাদা প্রার্থী দিয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বার্ধীন জোটের শরিকদের মধ্যেই আস্থা নেই। বিএনপি জোট নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। মেয়র আরিফুল ইসলামের প্রতি মানুষ ইতোমধ্যে অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। সবাই নৌকার পক্ষে কাজ করছেন।’
জামায়াত প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘সবারই নির্বাচন করার অধিকার আছে। আর জুবায়ের সাহেব তো স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়েছেন।’ বিএনপি-জামায়েতের রেষারেষির ফল নৌকার বিজয় নিশ্চিত করবে- এমন দাবি কামরানের। তবে সিলেটে জামায়াতপ্রার্থীর এখন পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিকভাবে দেখছেন না বিএনপি মনোনীত মেয়রপ্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। জামায়াতের পাল্টা প্রার্থী থাকা তিনি ‘সরকারের ইন্ধন’ বলে মনে করছেন। তিনি বলেন, ‘জামায়াত তো এতদিন অনেক অসুবিধায় দিন পার করেছে। কিন্তু সিলেটে এখন তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না। রাজনীতির খেলার শেষ নেই। ক্ষমতার স্বার্থেই তাদের দূরে রাখছে, আবার ক্ষমতার স্বার্থেই হয়তো কাছে টানতে পারে সরকার।’ সিলেটে জামায়াতপ্রার্থীর মাঠে থাকার বিষয়টি সরকারি দলের কৌশল বলে মনে করছেন তিনি।
নির্বাচনে অংশ নেয়া প্রসঙ্গে জামায়াতের সিলেট মহানগর আমীর ও মেয়রপ্রার্থী এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, ‘আমরা বারবার চেষ্টা করেছি সমঝোতার। কিন্তু বিএনপি সাড়া দেয়নি। এ কারণে আলাদা প্রার্থী দিয়েছে জামায়াত।’
Advertisement
তবে সরকারি দল আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনো প্রকার সমঝোতার কথা উড়িয়ে দেন জুবায়ের। বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নীতির বিরোধিতা করেই জামায়াতের রাজনীতি। সঙ্গত কারণে দলটির সঙ্গে কোনো প্রকার সমাঝোতা হতে পারে না।’
জোটে থেকে আলাদা প্রার্থী! ভোটের ফল আওয়ামী লীগের পক্ষে যাবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে জামায়াতের এ নেতা বলেন, ‘আমরা ১২টি সিটি মধ্যে মাত্র একটিতে প্রার্থী দিতে চেয়েছি। কেন্দ্রীয়ভাবেও প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। সিলেট, না হয় রাজশাহী। রাজশাহীতেও আমরা বিএনপিকে সমর্থন দিয়েছি। কিন্তু সিলেটে আমরা বিএনপির সমর্থন পাইনি। তাই আলাদাভাবে নির্বাচন করতে হচ্ছে।’
জয়ের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সরকারের অনেক জুলুম-নির্যাতন সহ্য করে আমরা টিকে আছি। শুধু টিকে থাকতেই নয়, আমরা শক্তির জানান দিতেই সিলেটে মাঠে নেমেছি। সিলেটের মানুষ সরকারের জুলুমের জবাব দিতে আমাকে বিজয়ী করবেন।’
আগামী ডিসেম্বরে সম্ভাব্য জাতীয় নির্বাচনের আগে তিন সিটির ভোট হবে আগামী ৩০ জুলাই।
Advertisement
এএসএস/এমএআর/আরআইপি