‘সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা ও যৌক্তিক কারণেই ২০১৯ সালে নিবন্ধিত হজ গমনেচ্ছু যাত্রীদের মধ্যে থেকে যাচাই বাছাই করে বিভিন্ন এজেন্সির হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দেয়া উচিত। রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ না দিলে শুধু এজেন্সিগুলোই নয়, সরকারও আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। রিপ্লেসমেন্টের ব্যাপারে সৌদি সরকারের কোনো বাধা নেই। ধর্ম মন্ত্রণালয় তড়িৎ সিদ্ধান্ত না হলে চলমান সুষ্ঠু হজ ব্যবস্থাপনা বাধাগ্রস্ত হবে।’
Advertisement
বেসরকারি হজ এজেন্সিজ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (হাব) এর মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তছলিম হজ রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে চলমান সমস্যা সম্পর্কে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ধর্ম মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যেই নীতিমালা অনুসারে শতকরা ৪ ভাগ হারে হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ দিয়েছে। এজেন্সিগুলোও তা মেনে নিয়েও হজযাত্রীদের পাঠানোর প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন এজেন্সি সৌদি আরবে মোয়াল্লেম নিয়োগ, বাড়ি ভাড়া, যাতায়াত ও খাবার বাবদ টাকা পরিশোধ করেছে। হজযাত্রার প্রাক্কালে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের অনেকেই অসুস্থতা ও পারিবারিক সমস্যার যেতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে।
উদাহারণস্বরূপ তিনি বলেন, বাংলাদেশ বেসরকারি পর্যায়ে সর্বোচ্চ সুনামের সঙ্গে যে কয়েকটি এজেন্সি কাজ করছে তার মধ্যে চট্টগ্রামের মরহুম মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর হজ কাফেলা অন্যতম। তাদের মাধ্যমে ১৯৭ জন হজে যাওয়া নিশ্চিত থাকলেও শেষ পর্যন্ত দুটি পরিবারের দুজন সদস্যর মুমূর্ষু অসুস্থতার জন্য ১২ জন হজে যেতে পারছেন না। এ ধরনের সমস্যার কারণে অনেক এজেন্সির হজযাত্রী চূড়ান্তভাবে ড্রপ পড়ছে। বিশেষ কারণেই তারা হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্টের দাবি করছেন।
Advertisement
এ পর্যন্ত কতগুলো এজেন্সির কতো সংখ্যক হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট চাইছে তা জানতে চাইলে হাব মহাসচিব বলেন, হজ এজেন্সি ও যাত্রীর সঠিক সংখ্যা জানা নেই। একেক এজেন্সি ৮/১০ জন করে হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট চাইছে।
তিনি বলেন, এ ব্যাপারে ধর্ম মন্ত্রণালয় এজেন্সিগুলোর কাছে হিসাব চাইলে এজেন্সিগুলো তা জমা দেবে।
এদিকে ধর্ম মন্ত্রণালয় হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট না দেয়ার ব্যাপারে এখনও অনড় অবস্থানে রয়েছে। সোমবার সচিবালয়ে নিবন্ধিত হজযাত্রীর বিমান টিকিট নিশ্চিতে পে-অর্ডার ইস্যু না করা ৫৬টি এজেন্সির সঙ্গে বৈঠকে ধর্ম সচিব আনিছুর রহমান বলেন, অস্তিত্বহীন নিবন্ধনের বিপরীতে হজ এজেন্সি মালিকরা এখন হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্ট (প্রতিস্থাপন) চাচ্ছেন। তবে এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন হাব মহাসচিব।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, হজ এজেন্সিগুলো সুকৌশলে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার বাণিজ্য করতেই হজযাত্রী রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ চাইছে। তারা রিপ্লেসমেন্টের সুযোগ পেলে যাদের পাঠাবেন তাদের কাছ থেকে সরকার ঘোষিত নির্ধারিত হজ প্যাকেজের বাইরেও অতিরিক্ত ১/২ লাখ টাকা নিয়ে ব্যবসা করবে। কাদের রিপ্লেসমেন্টে চাওয়া হচ্ছে, তাদের বয়স কত, তারা আদৌ অসুস্থ কি-না, তারা নিজেরা টাকা দিয়ে প্রাক নিবন্ধন ও নিবন্ধন করেছিলেন কিনা ইত্যাদি খতিয়ে দেখলে তাদের উদ্দেশ্যে পরিষ্কার হয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেন ওই কর্মকর্তা।
Advertisement
যে হজ রিপ্লেসমেন্ট নিয়ে হাব ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা চলছে সে রিপ্লেসমেন্টে হজযাত্রীর সঠিক সংখ্যা কতো এ হিসাবও কারো কাছে নেই। কেউ বলছে ৫ হাজার কেউ বলছে ৭ হাজার আবার কেউবা বলছে ১০ হাজারের বেশি।
হাব মহাসচিব শাহাদাত হোসাইন তছলিম বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যবসা করার জন্য এজেন্সিগুলো রিপ্লেসমেন্ট চাইছে এ অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও অমূলক। তিনি বলেন, ২০১৯ সালের জন্য অনেকেই নিবন্ধন করেছে। যাচাইবাছাই সাপেক্ষে ২০১৯ সালে নিবন্ধিত হজযাত্রীদের মধ্যে থেকে রিপ্লেসমেন্ট দেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
চলতি বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৬ হাজার ৭৯৮ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১ লাখ ২০ হাজারসহ মোট হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ২৬ হাজার ৭৯৮ জন।
মঙ্গলবার পর্যন্ত সর্বমোট ২০ হাজার ২৪৫ জন হজযাত্রী সৌদি আরব পৌঁছেছেন। এসব হজযাত্রীদের মধ্যে সরকারি ব্যবস্থাপনায় ৩ হাজার ২২৬ জন ও বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় ১৭ হাজার ১৯ জন। তারা মোট ৫৫টি ফ্লাইটে সৌদি আরবে পৌঁছেছেন। এর মধ্যে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স পরিচালিত ২৫টি ও সৌদি এয়ারলাইন্স পরিচালিত ৩০টি।
চাঁদ দেখা সাপেক্ষ পবিত্র হজ অনুষ্ঠিত হবে ২০ আগস্ট।
এমইউ/এমবিআর/পিআর