অবশেষে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক এ পি এম সুহেলকে গ্রেফতার দেখিয়েছে পুলিশ।
Advertisement
বৃহস্পতিবার সকাল ৬টার দিকে ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি লাকি আক্তারের চামেলীবাগের বাসা থেকে সাদা পোশাকে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে কয়েকজন ব্যক্তি তাকে তুলে নিয়ে যায় বলে অভিযোগ ওঠে। লাকি আক্তার নিজেই তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে এ অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার দেবদাস ভট্টাচার্য জাগো নিউজকে বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় নাশকতা ও ভাঙচুরের অভিযোগে শাহবাগ থানায় দায়ের করা মামলায় সুহেলকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে শুক্রবার আদালতে পাঠানো হবে।
উল্লেখ্য, সুহেলকে গ্রেফতারের বিষয়ে লাকি তার ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমার বাসায় ভোররাত সোয়া ৪টা নাগাদ ডিবি পুলিশ অভিযান চালায়। ৮-১০ জনের একটা দল...। শুরুতে তারা বেশ উত্তেজিত ছিলেন। আমি জানতে চাইলাম- এত রাতে কোন অভিযোগে আমার বাসায় তল্লাশি করবেন তারা। তর্কাতর্কির এক পর্যায়ে তারা দরজা ভেঙে ফেলার হুমকি দেন। আমি বললাম- আপনারা সকালে আসেন। অনেকক্ষণ বাগবিতণ্ডার পর অবশেষে তারা বাড়িওয়ালা আঙ্কেলকে নিয়ে আসলে সাড়ে ৪টার দিকে আমি দরজা খুলি।’
Advertisement
ফেসবুকের ওই পোস্টে লাকি বলেন, ‘ক্যাম্পাসে আমার ডিপার্টমেন্টের ছোটভাই এবং কোটা সংস্কার আন্দোলনের সংগঠক সুহেল আমার বাসায় ছিল। তারা (সাদা পোশাকের লোকজন) তাকে তুলে নিয়ে গেছে। যাওয়ার আগে বাসার কম্পিউটারের হিস্ট্রি চেক করেন। এছাড়া সুহেল যে রুমে ছিল সেখানে তন্নতন্ন করে তল্লাশি চালান। সুহেলের ব্যবহৃত একটি ফোন ছাড়া আর কিছুই তারা পাননি।’
তিনি আরও লেখেন, ‘প্রায় দেড় ঘণ্টা তারা আমার বাসায় অবস্থানকালে সুহেলকে আলাদা রুমে হাতকড়া পরিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এসময় আমাদের সব ফোন তারা জব্দ করে রাখেন। আমার ফোনও তারা চেক করেন।’
লাকি বলেন, ‘সুহেলকে নিয়ে যাওয়ার আগে আমি জানতে চাইলাম- ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ কী। তারা বললেন, কোটা সংস্কার আন্দোলন ইস্যুতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাচ্ছেন। আমার বাসায় কোটা সংস্কার আন্দোলনের লিফলেট-পোস্টার আছে কি না জানতে চান। বাসায় সেরকম কোনো কিছু না থাকায় আমি তাদের দেখাতে পারিনি। তবে সেজন্য তারা বাড়তি কোনো তল্লাশিও করেননি।’
তিনি জানান, যাওয়ার আগে সুহেল তার মাকে কিছু না জানাতে অনুরোধ করেছেন। কিছুদিন আগে তার বাবা মারা গেছেন। তাই এই ঘটনা জানতে পারলে তারা মা আরও ভেঙে পড়তে পারেন।
Advertisement
গোয়েন্দাদের এই অভিযানের তীব্র নিন্দা জানান ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক এই সভাপতি। তিনি বলেন, ‘যখন তখন সাদা পোশাকে নাগরিকদের ঘরে হানা দেয়ার এই সংস্কৃতি একজন নাগরিক হিসেবে আমাকে শঙ্কিত করে। তবে কি গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে যুক্ত থাকলে মানুষকে এভাবে আতঙ্ক নিয়ে রাত কাটাতে হবে?’
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র এ পি এম সুহেল। গত ২৩ মে পুরান ঢাকায় তার ওপর হামলা হয়। সেখান থেকে তাকে আহত অবস্থায় প্রথমে ধূপখোলার আসগর আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
জেইউ/বিএ