জার্মানি গ্রুপ পর্বেই বিদায়, আর্জেন্টিনাও নেই দ্বিতীয় রাউন্ডে। ব্রাজিলের সামনে সুবর্ণ সুযোগ ছিল বিশ্বকাপে এবার ভালো কিছু করার। কিন্তু কোথায় কী! কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বিদায় নিল হেক্সা মিশনে আসা ব্রাজিল। বিশ্বকাপ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সেমিফাইনালে খেলছে না এই ব্রাজিল-জার্মানি। ব্রাজিলকে কাঁদিয়ে শেষ চারে বেলজিয়াম। টানা ২৪ ম্যাচ অপরাজিত। রেড ডেভিলদের গোল্ডেন জেনারেশন দেখতে পেলো তাদের খেলোয়াড়দের মাহাত্ম।
Advertisement
যে দলটা ৩৯২ দিন আগে সর্বশেষ কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচে পিছিয়ে ছিল সেই দলটার বিপক্ষেই বেলজিয়াম এমন আক্রমণাত্মক খেলা উপহার দেবে কেউ কি কল্পনা করেছিল? কিন্তু কল্পনাকেও হার মানিয়ে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে প্রথমার্ধে ব্রাজিলের জালে দুই গোল দিয়ে ১-২ ব্যবধানে জিতে পরের রাউন্ডে চলে গেল ডি ব্রুয়েন হ্যাজার্ডদের বেলজিয়াম।
ম্যাচের শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলা উপহার দিতে থাকে বেলজিয়াম। রেড ডেভিলদের নয়জন ফুটবলারেরই উচ্চতা ছয় ফুটের উপরে। যেখানে মাঠের খেলার পাশাপাশি উচ্চতার সঙ্গেও খেলতে হয় ব্রাজিলকে।
ম্যাচের ৮ মিনিটেই গোলের সুবর্ণ সুযোগ পেয়েছিল ব্রাজিল। কিন্তু কর্নার থেকে নেয়া নেইমারের শট থিয়াগো সিলভা গোলমুখের একদম সামনে থেকে পা ছোয়ালেও তা গোলবারে লেগে প্রতিহত হয়। এমন গোল মিসের খেসারত দিতে হয় ব্রাজিলকে ১৩ মিনিটে।
Advertisement
কর্নার থেকে ডি ব্রুয়েনের ক্রসে কাসেমিরোর বদলে ব্রাজিল একাদশে সুযোগ পাওয়া ফার্নান্দিনহো আত্মঘাতী গোল করে বসলে দীর্ঘ ৩৯২ দিন পর কোনো ম্যাচে পিছিয়ে পড়লো ব্রাজিল।
২১ মিনিটে আবারও গোলের সুযোগ পেয়েছিল বেলজিয়াম। কিন্তু হ্যাজার্ডের কাছ থেকে ফাঁকা জায়গায় বল পেয়েও লক্ষ্যভ্রষ্ট ক্রস করে মিউনিয়ার। ৩০ মিনিটে ডি বক্সের বাইরে থেকে নেইমারের গোলমুখে শট বেলজিয়ামের রক্ষণভাগের ফুটবলারের পায়ে লেগে প্রতিহত হলে কর্নার পায় ব্রাজিল।
কিন্তু কর্নার থেকে সুবিধা করতে না পেরে উল্টো বিপদে পরে সেলেসাওরা। কাউন্টার এটাক থেকে ফেলাইনি দুর্দান্তভাবে বল দেন লুকাকুকে। মাঝমাঠ থেকে একাই বল টেনে নিয়ে দুজনকে কাঁটিয়ে ডান পাশে ফাঁকায় থাকা ডি ব্রুয়েনের কাছ পাস করলে ডি বক্সের বাইরে থেকে দূর পাল্লার বুলেট শটে গোল করে বেলজিয়ামকে ০-২ ব্যবধানে এগিয়ে দেন এই ম্যান সিটি তারকা।
দুই গোলে পিছিয়ে থেকে ব্রাজিলের অনুপ্রেরণা এই বেলজিয়ামই। কেননা, জাপানের বিপক্ষে ০-২ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেও জিতেছিল বেলজিয়াম। ৩৭ মিনিটে মার্সেলো এবং নেইমারের জোড়া শট রুখে দিয়ে ব্রাজিলকে গোলশূন্য অবস্থায় রাখেন করতোয়া। প্রথমার্ধের বাকি সময় আর কোনো সুযোগ তৈরি করতে না পারলে ০-২ ব্যবধানে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় ব্রাজিল।
Advertisement
দ্বিতীয়ার্ধে একের পর এক আক্রমণ বাড়াতে থাকে ব্রাজিল। উইলিয়ানকে পাল্টে ফিরমিনোকে নামান কোচ তিতে। ৫৩ মিনিটে নেইমার ডিবক্সের ভেতর পড়ে গেলেও রেফারি পেনাল্টি বাঁশি বাজাননি। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, সেটি ডাইভ ছিল।
৫৫ মিনিটে গ্যাব্রিয়েল হেসুসকে ট্যাকেল করে কম্পানি ফেলে দিলে আবারও রেফারি পেনাল্টির সিদ্ধান্ত দেওয়া থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখেন। ৫৮ মিনিটে হেসুসকে পাল্টে ডগলাস কস্তাকে নামাতেই প্রাণ ফিরে ব্রাজিলের আক্রমণ।
৬২ মিনিটে কাউন্টার এটাক থেকে ডি ব্রুয়েন-লুকাকু জুটি আরো একবার কাঁপন ধরিয়ে দিয়েছিল ব্রাজিলের রক্ষণভাগে। ৭৫ মিনিটে পাউলিনহোকে পাল্টে রেনাতো আগুস্তোকে নামান তিতে। ৭৬ মিনিটেই তিনি কোচের কথা রাখেন ব্রাজিলের হয়ে প্রথম গোলটি করে।
ডি বক্সের বাইরে থেকে উঁচু করে দেওয়া কৌতিনহোর পাস থেকে হেড থেকে গোল করে ব্রাজিলের হয়ে এক গোল শোধ দেন আগুস্তো। ব্যবধান কমিয়ে ব্রাজিল যেন আরো আগ্রাসী। ৮৪ মিনিটে বা-পাশ থেকে নেইমার বল নিয়ে ডি বক্সের ভেতর ঢুকে কৌতিনহোকে পাস দিলেও তার নেওয়া শট চলে যায় গোলবারের উপর দিয়ে।
ম্যাচ গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। অতিরিক্ত সময়ের চতুর্থ মিনিটে নেইমারের নেওয়া ডি বক্সের বাইরে থেকে বাকানো শট লাফিয়ে আঙ্গুলের টোকায় কর্নারের মাধ্যমে বাঁচান পুরো ম্যাচে অসাধারণ খেলা বেলজিয়ান গোলরক্ষক করতোয়া। মূলত তখনই শেষ হয়ে যায় ব্রাজিলের ম্যাচে ফিরে আসার কামনা। ১-২ ব্যবধানে হেরে টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয় ২০০২ সালের পর ট্রফি না জেতা দলটি।
আরআর/