খেলাধুলা

অ্যান্টিগায় এ কেমন বাংলাদেশ!

বাংলাদেশ ক্রিকেটের ঘোরতর সমালোচকও হয়তো মানতে চাইবেন না একই টেস্টের পরপর দুই ইনিংসেই বিব্রতকর ব্যাটিং করছে বাংলাদেশ দল। ২০০০ সালে অভিষেক টেস্টের প্রথম ইনিংসে ৪০০ ও পরের ইনিংসে ৯০ রান করার মধ্য দিয়ে চালু হয়েছিল এক অলিখিত রীতি। সেই রীতি অনুসরণ করেই এখনো পর্যন্ত ১৮ বছরে খেলা বেশিরভাগ টেস্টেই প্রথম ইনিংসের ব্যর্থ হলে দ্বিতীয় ইনিংসে ভালো কিংবা প্রথম ইনিংসে সফল হলে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যর্থতার উদাহরণ তৈরি করে এসেছে বাংলাদেশ।

Advertisement

এমন উদাহরণ পেতে খুব বেশি দূরে যেতে হবে না। ২০১৬-১৭ মৌসুমেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সাকিব আল হাসানের ডাবল সেঞ্চুরি (২১৭), মুশফিকুর রহিমের দেড়শত (১৫৯) রানের ইনিংসে ভর করে প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ রান করে। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৬০ রানে অলআউট হয়ে সাত উইকেটের পরাজয় মেনে নিতে হয়। এমন এক ইনিংসের ভালো ব্যাটিং আরেক ইনিংসেই ভুলে যাওয়ার ইতিহাস অনেক আছে বাংলাদেশ দলের। আছে তার উল্টোটাও অর্থাৎ প্রথম ইনিংসের বাজে ব্যাটিং ভুলে দ্বিতীয় ইনিংসে ঘুরে দাঁড়ানো।

কিন্তু অ্যান্টিগার স্যার ভিভ রিচার্ডস স্টেডিয়ামে চলতি টেস্টে যা হল এমন অবস্থার কথা হয়তো বাংলাদেশ দলের চরমতম নিন্দুকও ভাবেননি। প্রথম ইনিংসে নিজেদের ইতিহাসের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহের রেকর্ড গড়ে ৪৩ রানেই অলআউট। দ্বিতীয় ইনিংসেও অঘটন না ঘটলে একশ রানের আগেই শেষ হয়ে টাইগারদের ইনিংস, ৬২ রানেই শেষ ৬ উইকেট। আশঙ্কা প্রথমবারের মতো এক টেস্টের দুই ইনিংসেই শতরানের নিচে অলআউট হওয়ার।

অথচ ক্যারিবীয়ান সফরে এভাবে মুখ থুবড়ে পড়বে বাংলাদেশ, এমনটা ভাবেনি কেউই। এর আগে ২০০৩-০৪, ২০০৯ কিংবা ২০১৪ সালের সফরে টেস্ট কিংবা ওয়ানডে, সবখানেই সমানে লড়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু এবারের সফরের প্রথম দুই দিনেই যা দেখিয়েছে বাংলাদেশ, তাতে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করাটাও যেন নেহায়েত বোকামিই।

Advertisement

টেস্ট ক্রিকেটের আঙিনায় হাঁটি-হাঁটি পা বয়সেও ২০০৪ সালে উইন্ডিজ সফরে এক ম্যাচেই তিন সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন খালেদ মাসুদ পাইলট, হাবিবুল বাশার সুমন ও মোহাম্মদ রফিক। এমনকি দ্বিতীয় ইনিংসে ইনিংস ঘোষণা সম্মানের ড্রও পেয়েছিল বাংলাদেশ। পরের টেস্টেও ব্যাটিং অতোটা ভালো না হলেও হতশ্রী বা বিব্রতকর কোন রেকর্ড হয়নি সেই ম্যাচে।

২০০৯ সালের সিরিজটি তো বলতে গেলে বাংলাদেশের ইতিহাসেরই সেরা এওয়ে সিরিজ। সেবার দুই ম্যাচের সিরিজের দুইটিতেই জিতে যায় বাংলাদেশ। দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ঘরের বাইরে ম্যাচ এবং সিরিজ জয়ের রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ। সেই দলে তখনকার প্রথম সারির অনেকেই না থাকলেও, ছিলেন চলতি টেস্টের প্রথম ইনিংসের নায়ক কেমার রোচ, ছিলেন টিনো বেস্টের মতো বুনো পেসার। বেস্ট-রোচকে সামলেই সেবার ২-০ তে হোয়াইটওয়াশ করার স্বাদ পেয়েছিল বাংলাদেশ।

২০১৪ সালের সিরিজে দুই ম্যাচেই হেরে গেলেও চলতি টেস্টে খেলা কেমার রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েলদের সামাল দিয়েই ন্যুনতম প্রতিরোধ গড়েছিলেন তামিম-মুশফিকরা। একটি সেঞ্চুরির সাথে ছয়টি হাফসেঞ্চুরি ও বেশি চল্লিশ ছাড়ানো ইনিংসে চলতি অ্যান্টিগা টেস্টের মতো বাজে অবস্থায় পরেনি বাংলাদেশ। অথচ সেই দলে ছিলেন ক্রিস গেইল, শিবনারায়ান চন্দরপলের মতো ক্রিকেটাররাও।

চার বছর আগের অভিজ্ঞতা কিংবা বর্তমান সময়ে সাদা পোশাকে পাওয়া বেশ কিছু সাফল্যকে পুঁজি করে ভালো কিছুর আশায় ওয়েস্ট ইন্ডিজে পাড়ি জমিয়েছিল বাংলাদেশ। সফরের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচেও দাপুটে ব্যাটিং করে আশার পারদটাও খানিক বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তামিম-মাহমুদউল্লাহরা।

Advertisement

কিন্তু মূল ম্যাচে নেমেই হলো চূড়ান্ত পতন। দুই ইনিংস মিলিয়ে এখনো পর্যন্ত মাত্র ৩৬.৪ ওভার তথা ২২০ বল ব্যাটিং করেছে বাংলাদেশ। এতেই সাজঘরে ফিরেছে ১৬টি উইকেট। আর ২৮ বলের আগে বাকি ৪ উইকেটের পতন ঘটলে ভেঙে যাবে ১২২ বছরের পুরনো রেকর্ড।

১৮৯৬ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টে দুই ইনিংস মিলে মাত্র ২৪৮ বল খেলতে পেরেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। টেস্ট ইতিহাসে এটিই স্বল্পতম বল খেলার রেকর্ড। ম্যাচের তৃতীয় দিনে বাংলাদেশ ২২.৪ ওভারের মধ্যে অলআউট হয়ে গেলেই এই রেকর্ডে নাম লেখাবে সাকিব আল হাসানের দল।

এক ম্যাচের দুই ইনিংস দিয়ে অবশ্যই বাংলাদেশ দলের সবকিছু শেষ হয়ে যায়নি। হয়তো পরের ম্যাচেই হয়তো ঘুরে দাঁড়াবেন সাকিব-তামিমরা। কিন্তু অ্যান্টিগার দুই ইনিংসে যে বাংলাদেশকে দেখা গেল, দলের ব্যাটসম্যানদের যে করুণ চেহারা দেখা গেল, তা দীর্ঘদিন ক্ষত হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে। গত আড়াই-তিন বছরে ভালো ক্রিকেট খেলে নিজেদের যে অবস্থান তৈরি করেছে বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশকে অ্যান্টিগার এই টেস্টে চেনার উপায় নেই মোটেও।

টেস্টের তৃতীয় দিনের শুরুতেই হয়তো শেষ হয়ে যাবে ম্যাচটি, কিংবা অবিশ্বাস্য ব্যাটিংয়ে ঘুরেও দাঁড়াতে পারেন মাহমুদউল্লাহ ও নুরুল হাসান সোহান। তবু কোন কিছু দিয়েই ব্যাখ্যা করা সম্ভব নয় অ্যান্টিগার প্রথম দুইদিনে বাংলাদেশের ভূতুড়ে ব্যাটিং।

এসএএস/পিআর