জাতীয়

‘এ কেমন দেশ’

‘শিক্ষকদের কাজ সমাজে আলো ছড়ানো। ভবিষ্যতের কান্ডারি, দেশ গড়ার সঠিক মানবসম্পদ কচি-কাঁচা ছাত্র-ছাত্রীর প্রাথমিক ভিত্তি গড়ে দিই আমরা। ছাত্র-ছাত্রীদের সঠিক জ্ঞানদানে যে শিক্ষক-কর্মচারীরা আগুয়ান তারা কেন রাস্তায় নামবেন? এ কেমন দেশ! ভাবতে নিজেরই লজ্জা লাগে, কষ্ট হয়। শিক্ষক হয়েও নিজেদের ন্যায্য অধিকার পাচ্ছি না।’

Advertisement

মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় জাগো নিউজের কাছে এভাবেই আক্ষেপ করে কথাগুলো বলছিলেন কুষ্টিয়া সদর এলাকা থেকে এমপিওভুক্তির দাবিতে আমরণ অনশনে যোগ দেয়া শিক্ষক সাদ আহমেদ।

বংশিতলা শহীদ স্মৃতি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক তিনি। প্রতিষ্ঠানটি ১৯৯৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও এখনও এমপিওভুক্ত হয়নি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে সাতজন শিক্ষক স্বেচ্ছাশ্রম দিয়ে যাচ্ছেন।

দুই কন্যার জনক এ শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের কষ্ট হয়। ভাবলে খারাপ লাগে যে ২৪ দিন ধরে আমরা বৃষ্টিতে ভিজে রোদে-তাপে রাস্তায়। কিন্তু যারা আমাদের দাবি সম্পর্কে জানেন ও পূরণ করবেন তারা বেখেয়ালে। একটা দেশের শিক্ষকসমাজ রাস্তায় থাকলে সে দেশের শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেই। প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়েছি কিন্তু এমপিওভুক্ত হয়নি। যে কারণে আড়াই যুগ থেকে আমরা লাখো শিক্ষক বিনা বেতনে। এভাবে আর কতো দিন।’

Advertisement

তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার পাশের প্রতিষ্ঠান পরে প্রতিষ্ঠিত হলেও এমপিওভুক্তি হয়েছে কিন্তু আমরা সব ধরণের শর্ত পূরণ করেও বেতন-ভাতা পাচ্ছি না।’

স্বীকৃতিপ্রাপ্ত নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিভুক্তির দাবিতে দশম দিনেও চলছে আমরণ অনশন কর্মসূচি। দাবি পূরণে দ্বিতীয় দফায় শুরু করা এ আন্দোলনে সোমবার রাত ১২টা পর্যন্ত ১৮২ শিক্ষক-কর্মচারী অসুস্থ হয়ে পড়েছেন।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীত দিকে অবস্থান নিয়েছেন নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্চারীরা। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শিক্ষকরা কেউ কেউ শুয়ে পড়েছেন। অনশনের কারণে দুর্বল হয়ে পড়ায় অর্ধশতাধিক শিক্ষক-কর্মচারীকে স্যালাইন লাগানো হয়েছে।

তবে হাসপাতাল থেকে আন্দোলনে ফিরেছেন নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদু্ন্নবী ডলার।

Advertisement

আমরণ অনশনে অংশ নেয়া দিনাজপুর হাকিমপুর উপজেলার ছোট ডাঙ্গাপাড়া ইসলামীয়া দাখিল মাদ্রাসার সুপারিনটেন্ট গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘১৯৬৫ সালে আমাদের মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠিত। এবতেদায়ি শাখার শিক্ষকরা বেতন পেলেও ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত দাখিল শাখার শিক্ষক-কর্মচারীবৃন্দ কেউ বেতন পাচ্ছেন না। ১৩ জন শিক্ষক ১৮টি বছর ধরে বেতন ছাড়া কল্পনা করতে পারেন?’

তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর প্রতি আমরা আস্থা রাখতে চাই। শিক্ষক হয়েও যদি আমাদের এ অবস্থায় ফেলে রাখা হয় তবে তা স্পষ্ট করা উচিত। প্রতিশ্রুতি দিয়ে আমাদের ঝুলিয়ে রাখা আরও বেশি কষ্টের।’

নন-এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষক কর্মচারী ফেডারেশনের সভাপতি অধ্যক্ষ গোলাম মাহমুদু্ন্নবী ডলার বলেন, ‘আমাদের ন্যায্য দাবি প্রধানমন্ত্রী মেনে নেয়ায় এর আগের আন্দোলন ইস্তফা দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীরা স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানে ফিরে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের আশাহত করা হয়েছে। বাজেটে আমাদের আশার প্রতিফলন ঘটেনি। তাই বাধ্য হয়েই আমরা ফের আন্দোলনে নেমেছি। আশায় আছি। ন্যায্য দাবি সরকার মেনে নেবে।

অনশনে অংশ নেয়া শিক্ষকরা বলেন, গত ১২ জুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করতে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (স্কুল-কলেজ) এর জনবল কাঠামো ও এমপিও নীতিমালা ২০১৮ জারি করা হয়েছে। এই নীতিমালা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পাঠদান অনুমতি ও স্বীকৃতির সময় আরোপিত শর্তের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। চলতি ২০১৮-১৯ বাজেটে নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দের কোনো সুস্পষ্ট ঘোষণা নেই। যার ফলে নন-এমপিও শিক্ষক কর্মচারীর অত্যন্ত হতাশ ও আশাহত হয়ে পড়েছেন। এ অবস্থায় মহামান্য রাষ্ট্রপতির হস্তক্ষেপে সারাদেশের নন এমপিও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একযোগে এমপিওভুক্তি হলে সকলেই সন্তুষ্ট চিত্তে বাড়ি ফিরে যাবে।

জেইউ/এমবিআর/আরআইপি