গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলায় নিহত গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল করিম তার গ্রামের বাড়ি মানিকগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বিশেষায়িত একটি স্কুল। তার স্বপ্ন ছিলো স্কুলটি আবাসিক করার। যেখানে প্রতিবন্ধী শিশুরা খেলবে, গাইবে ও পড়বে। কিন্তু রবিউলের মৃত্যুর পর সেই স্বপ্ন থমকে গেছে। বন্ধু, শুভাকাঙ্খী আর গ্রামবাসীর সহযোগিতায় স্কুলটি কোনো মতে চালু রাখলেও,দুই বছরে পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে পারেননি স্বজনরা।
Advertisement
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলার আটিগ্রাম গ্রামে এই স্কুলটির যাত্রা শুরু হয় ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি। রবিউল যার নাম দিয়েছিলেন ‘বিকনিং লাইট অর্গানাইজেশন অব ম্যানকাইন্ড অ্যান্ড সোসাইটি (ব্লুমস)’মায়ের দান করা ২৬ শতাংশ জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত স্কুলটির বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪১ জন।
রবিউলের স্ত্রী উম্মে সালমা জানান, স্কুলের আবাসিক ব্যবস্থা চালু করার স্বপ্ন দেখতেন রবিউল। হয়তো বেঁচে থাকলে সে স্বপ্ন পূরণও হতো। কিন্তু অর্থাভাবে সেই স্বপ্নপূরণ করা যাচ্ছে না।
তিনি আরও জানান,তার দুই সন্তানের মতোই প্রতিবন্ধী স্কুলের শিক্ষার্থীদের ভালোবাসেন তিনি। ওদের মধ্যে অনেক সুপ্ত প্রতিভা রয়েছে। বিকশিত করার জন্য প্রয়োজন আরও ভালো পরিবেশ।
Advertisement
রবিউলের ছোট ভাই শামসুজ্জামান শামস জানান, ব্লুমস নিয়ে ভাইয়ের অনেক স্বপ্ন ছিলো। ছুটিতে বাড়ি এলেই তিনি স্কুলটিতেই বেশি সময় কাটাতেন। বর্তমানে রবিউলের বন্ধুবান্ধব ও এলাকাবাসীর সহযোগিতায় স্কুলটি চালু রেখেছেন তারা। কিন্তু পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে প্রয়োজন অর্থের। এ জন্য প্রধামন্ত্রীসহ সবার সহযোগিতা কামনা করেছেন তিনি।
এ দিকে রবিউল করিম নিহত হওয়ার পর শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে বেঁচে আছেন তার পরিবার। অভাব-অভিযোগের চেয়ে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গকারী রবিউলকে নিয়ে গর্বিত স্বজনরা।
প্রতিশ্রুতি অনুযায়ি, স্ত্রী উম্মে সালমার জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরি হয়েছে। কিন্তু এখনও চাকুরি স্থায়ী হয়নি রবিউলের ছোট ভাই সামসুজ্জামান শামসের। তার একটি ভালো চাকুরির প্রত্যাশায় আছেন রবিউলের মা।
রবিউলের মা জানান, বাবা মারা যাওয়ার পর রবিউলই ছিলো পরিবারের কর্তা। ছোট ভাইকে খুব ভালোবাসতেন তিনি। কিন্তু তার মৃত্যুর পর সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়। বউয়ের চাকুরি হয়েছে। এখন ছোট ছেলেটার একটা ভালো কিছু হলে শান্তি পেতেন এই মা।
Advertisement
এসি রবিউলের মৃত্যুর একমাস পর জন্ম নেয়া মেয়ে রায়না এখন হাটি হাটি পা পা। ছেলে সাজেদুল করিম দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র।
রবিউল করিমের দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে রোববার দিনব্যাপী নানা কর্মসূচি পালন করছে ব্লুমস ও এলাকাবাসী। এর মধ্যে রয়েছে জঙ্গি বিরোধী মিছিল,শোক র্যালি,স্মরণ সভা, দোয়া মাহফিল, প্রতিবন্ধী শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা। এ সব অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত থাকবেন বলে জানা গেছে।
বি.এম খোরশেদ/আরএ/আরআইপি