দেশজুড়ে

গাজীপুরে বঞ্চনার জবাব দেবে ব্যালট

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে নগরীর অনুন্নত ও অবহেলিত পল্লী এলাকায় রয়েছে প্রায় দুই লাখ ভোটার। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে এ বিপুল সংখ্যক ভোটার যেকোনো প্রার্থীর ফলাফল নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। ভোটের চিত্র পাল্টে দিতে পারে তাদের ভোট।

Advertisement

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অনুন্নত ও অবহেলিত বেশ কিছু এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে জানা গেছে, ওই সব এলাকার ভোটাররা মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের ওপর চরম ক্ষুব্ধ। তারা ভোট দিয়ে মেয়র ও কাউন্সিলর নির্বাচিত করলেও এখনো মাটির রাস্তা আর ভাঙাচোরা সড়ক নিয়েই ভুগছেন। তাদের নেই কোনো আবাসিক সুযোগ সুবিধা। নগর বলতে যা বোঝায় তার লেশ শাত্র নেই তাদের এলাকায়।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের এমনই একটি এলাকা বিপ্রবর্থা। এ এলাকার বাসিন্দা মোজাম্মেল হক বলেন, আমাদের এখনো মাটির রাস্তায় হাঁটতে হয়। বিদ্যুৎ থাকে না। গ্যাস নেই। টিলার ওপর নেই কোনো রাস্তাঘাট। অন্যের বাড়ি ও জমির উপর দিয়ে হাঁটাচলা করতে হয়। কেউ রাস্তা দেয় না। সিটি কর্পোরেশনও তেমন কোনো উদ্যোগ নেয়না। আমরা ইউনিয়ন পরিষদ থাকতে যে অবস্থায় ছিলাম নগর হওয়ার ৫ বছর পরও একই অবস্থায় আছি। ভোট এলে প্রার্থীরা মধুর মধুর কথা বলে ভোট চায় আর ভোট গেলে তাদের পাওয়া যায় না। তাই এবারের নির্বাচনে ভেবে চিন্তেই ভোট দেব।

গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সালনা, কাথোরা, মৈশানবাড়ি, বিপ্রবর্থা, জোলারপাড়, কাউলতিয়া, মাস্টারবাড়ি, উত্তর সালনা, তিলারগাতি, কলমেশ্বর, ভিটিপাড়া, বাসন, ইটাহাটা, বোর্ডবাজার, ইছরকান্দি, ইশ্বড্ডা, পূবাইল, মীরের বাজার, হাড়িনাল, কানাইয়া, ধীরাশ্রম, নীলেরপাড়া, কাশিমপুর, ভাদুন, তুরাগ নদী তীরবর্তী এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় এখনো গ্রামের পুরোপুরি আবহ বিরাজ করছে। সন্ধ্যার পর ও রাতে শিয়ালের ডাক শোনা যায় অহরহ। এসব এলাকার সাধারণ মানুষ নগরীর আধুনিক সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত রয়েছে।

Advertisement

উত্তর সালনা এলাকার মো. ফারুক হোসেন বলেন, আমরা নগরীর সুবিধা থেকে বঞ্চিত। রাস্তাঘাট দিয়ে হাঁটা যায় না। আমাদের সন্তানরা বর্ষাকালে অনেক কষ্ট করে যাতায়াত করে। বেশি বৃষ্টি হলে রাস্তার সমস্যার কারণে তারা স্কুলে যেতে পারে না।

নীলেরপাড়া এলাকার সোবহান হোসেন বলেন, আমরা প্রতিবছর বাসা বাড়ির জন্য ট্যাক্স দিচ্ছি। শহরবাসীর খ্যাতি পেলেও বাস করছি অজোপাড়াগাঁয়ে। ন্যূনতম নাগরিক সেবা আমরা পাচ্ছি না। এবার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যে প্রার্থী কাজ করতে পারবে তাকেই নির্বাচিত করব।

এ ব্যাপারে গাজীপুর জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল বলেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন দেশে একটি বৃহৎ সিটি কর্পোরেশন। এ সিটি কর্পোরেশনের ভোটাররা বহু আশা নিয়ে বিএনপি প্রার্থী অধ্যাপক এমএ মান্নানকে নির্বাচিত করেছিল। কিন্তু তিনি সরকারের রোষানলে পড়ে প্রায় আড়াই বছর থেকেছেন দায়িত্বের বাইরে। তার বিরুদ্ধে ৩০টি মিথ্যা মামলা দিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে সরকার।

তিনি বলেন, মান্নান সাহেব কারারুদ্ধ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আর তিনি ১৯৯১ সাল থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মন্ত্রী থাকা অবস্থায় গাজীপুরে ব্যাপক উন্নয়ন করেছেন। সিটি কর্পোরেশনে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করতে পারলে নগরীতে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করতে পারতেন। জনগণের অনেক সমস্যার সমাধান হতো।

Advertisement

এ ব্যাপারে গাজীপুর মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কামরুল আহসান সরকার রাসেল জানান, ইতোমধ্যে আমাদের প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম তার নির্বাচনী ইশতেহারে বলেছেন নগরীর অবহেলিত অঞ্চলগুলোকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উন্নয়নের আওতায় নিয়ে আসবেন। উন্নয়নের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য হবে না। নগরীর প্রত্যেকটি নাগরিক সমান সুযোগ সুবিধা পাবেন। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে আমরা একটি আধুনিক, পরিকল্পিত, গ্রিন ও ক্লিন সিটি গড়ে তুলবো।

আমিনুল ইসলাম/এফএ/এমএস