রাজধানীর আজিমপুরের বাসিন্দা বয়োবৃদ্ধ ওয়াহিদুজ্জামান তার স্ত্রী, ছেলে ও স্কুল পড়ুয়া দুই নাতি-নাতনির পাসপোর্ট নবায়ন করতে গত ১০ এপ্রিল আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেন। নাতি-নাতনিদের আগের পাসপোর্টের ছবি স্কুলে ভর্তি হওয়ার আগে হওয়ায় পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তাদের পরামর্শে নতুন করে ছবি তোলেন। ১ মে পাসপোর্ট ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ দিয়ে স্লিপ দিয়ে মোবাইল ফোনে ম্যাসেজ (ক্ষুদেবার্তা) দিয়ে কনফার্ম করা হবে বলে জানানো হয়। জমা দেয়ার ২ মাস ৯ দিন পর ম্যাসেজে জানানো হয় ওয়াহিদুজ্জামান, তার স্ত্রী ও ছেলের পাসপোর্ট ডেলিভারির জন্য প্রস্তুত আছে। কিন্তু নাতি-নাতনিদের পাসপোর্টের ব্যাপারে কিছুই জানানো হয়নি। আজ (বৃহস্পতিবার) আগারগাঁও পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন ২ মাস ৯ দিন আগে নাতির যে ফিঙ্গার প্রিন্ট নেয়া হয়েছে তাতে ঝামেলা রয়েছে। তবে নাতনির পাসপোর্ট প্রিন্টের অপেক্ষায় রয়েছে। ফিঙ্গার প্রিন্ট ঝামেলা মেটাতে তিনি পাসপোর্ট অফিসের দুই ভবনে পাক্কা দুই ঘণ্টায় ৮/৯ তলা ভবনে দৌড়ঝাঁপ করে পাসপোর্ট অফিসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তার সুপারিশে ফিঙ্গার প্রিন্টের ঝামেলা মেটান। তাকে সপ্তাহ খানেক পর ম্যাসেজ পাঠানো হবে বলে জানানো হয়। এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, ‘কাগজে-কলমে পাসপোর্ট নবায়ন করতে ২১ দিনের কথা বলা হলেও প্রায় সোয়া দুই মাসেও নাতি-নাতনির পাসপোর্ট হাতে পেলাম না। ফিঙ্গার প্রিন্টে সমস্যা রয়েছে- এ তথ্যটি মোবাইল ফোনে ম্যাসেজের মাধ্যমে জানানো হলে আগেই এসে যা করণীয় করতে পারতেন।’
Advertisement
তিনি বলেন, পাসপোর্ট অফিসে আগের মতো দালালের উপদ্রব বহুলাংশে হ্রাস পেলেও পাসপোর্ট অফিসে যান্ত্রিক কারণে ভোগান্তি বেড়েছে। এক্ষেত্রে তাদের আরও দায়িত্বশীল হওয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
আজ সরেজমিন আগারগাঁও পাসপোর্ট অধিদফতরের কেন্দ্রীয় কার্য়ালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, সময়মতো পাসপোর্ট ডেলিভারি না পেয়ে অসংখ্য নারী, পুরুষ ও শিশু পাসপোর্ট অফিসের দোতলা, ছয়তলা ও আটতলাসহ বিভিন্ন ফ্লোরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তারা যোগাযোগ করে জানতে পারছেন আবেদন ফরমে ভুল ও ফিঙ্গার প্রিন্টসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে পাসপোর্ট প্রিন্টে যায়নি। অনেকেই দূর-দূরান্ত থেকে এসে জানতে পারছেন পরবর্তী সপ্তাহে অাবার এসে ভুল সংশোধন করার পর তাদের পাসপোর্ট প্রিন্টের জন্য পাঠানো হবে। প্রিন্ট হয়ে গেলে তবেই মোবাইল ফোনে পাসপোর্ট হয়ে গেছে -এই মর্মে ম্যাসেজ পাঠানো হবে। রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা হনুফা বেগম জানান, তার মোবাইলে পাসপোর্ট হয়ে গেছে -এই মর্মে ম্যাসেজ আসলেও এখানে এসে জানতে পারেন যান্ত্রিক কারণে তার পাসপোর্ট পেতে দুই-তিন ঘণ্টা বিলম্ব হবে। নিরুপায় হনুফা বেগম একটু আগে পাওয়ার জন্য একাধিক কর্মকর্তার কক্ষে যাচ্ছিলেন। তবে যান্ত্রিক ক্রুটি ছাড়া পাসপোর্ট সুষ্ঠু প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিতরণ করতে দেখা গেছে। নির্দিষ্ট কাউন্টারে ডেলিভারি স্লিপ দেখে পাসপোর্ট গ্রহণের জন্য টোকেন নম্বর দেয়া হচ্ছে। কম্পিউটার স্ত্রিনে নম্বর ভেসে আসলে গ্রাহকরা নিজ নিজ পাসপোর্ট গ্রহণ করছেন। যান্ত্রিক ক্রুটির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে পাসপোর্ট অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক সেলিনা বানু বলেন, ‘কিছু কিছু পাসপোর্টে ফিঙ্গার প্রিন্ট ও তথ্য-উপাত্তে গরমিল থাকায় বিলম্ব হচ্ছে। তবে দ্রুত পাসপোর্ট ডেলিভারির সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
এমইউ/এসআর/পিআর
Advertisement