ঈদুল ফিতরের পরের দিন রোববার জাতীয় জাদুঘরে প্রবেশের জন্য বিপুল সংখ্যক দর্শনার্থী ভিড় জমিয়েছেন। রাজধানীর শাহবাগে জাদুঘরের সামনে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সারি থাকলেও প্রবেশের ক্ষেত্রে দেখা দেয় চরম বিশৃঙ্খলা।
Advertisement
শনিবার ঈদুল ফিতরের দিন জাতীয় জাদুঘর বন্ধ ছিল। রোববার বিকেল ৩টা থেকে জাদুঘর খুলে দেয়া হয়। প্রিয়জনের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে নগরীর বেশির ভাগ মানুষ গ্রামে চলে গেছে। এই শহরই যাদের স্থায়ী ঠিকানা কিংবা একান্তই কোনো কারণে যারা গ্রামে যেতে পারেননি তাদের বিনোদনের অন্যতম অনুষঙ্গ জাতীয় জাদুঘর।
ঈদুল ফিতরের দ্বিতীয় দিন সুবিধাবঞ্চিত শিশু, প্রতিবন্ধী ও শিক্ষার্থীরা বিনা টিকিটে জাতীয় জাদুঘর পরিদর্শন করতে পারবে বলেও সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
কিন্তু রোববার সকাল থেকেই দর্শনার্থীরা বিভিন্ন স্থান থেকে জাদুঘরের সামনে ভিড় জমাতে থাকেন। জাদুঘরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনকারী সজীব জানান, ‘সকালে ১০টা থেকেই লোক আসতে থাকে। দুপুরের মধ্যে জাদুঘর চত্বর মোটামুটি পূর্ণ হয়ে যায়।’
Advertisement
বেলা আড়াইটার দিকে গিয়ে দেখা যায় জাদুঘর প্রাঙ্গণ লোকে-লোকারণ্য। হাজার হাজার মানুষ জাদুঘরে প্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছেন। দু’টি টিকিট কাউন্টার ঘিরে দুইদিকে দীর্ঘ সারি সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণ দিকের টিকিট কাউন্টারের দর্শনার্থীদের সারি পাবলিক লাইব্রেরির গেট ছাড়িয়ে যায়। শিশু, কিশোর, তরুণ, বৃদ্ধসহ সব বয়সের নারী পুরুষকে প্রচণ্ড গরম উপেক্ষা করে সারিতে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে।
বেলা ৩টা বাজতেই টিকিট কাটা শুরু হতেই বিশৃঙ্খলা শুরু হয়। বিপুল সংখ্যক মানুষ টিকিট কাটার জন্য কাউন্টারগুলোতে হুমড়ি খেয়ে পড়ে। অনেকেই লাইনে না দাঁড়িয়ে আগে টিকিট নিতে কাউন্টারে ঢুকে পড়েন। দর্শনার্থীদের সামলাতে নিরাপত্তা কর্মীদের হিমশিম খেতে হয়।
আবুল হোসেন নামের একজন দর্শনার্থী বলেন, ‘আমি এক ঘণ্টারও বেশি সময় লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। কিন্তু টিকিট কাউন্টারে প্রবেশ করতে পারলাম না, লাইনে না দাঁড়িয়ে অনেকেই ঠেলাঠেলি করে টিকিটি নিয়ে নিচ্ছে। এখানে কোনো শৃঙ্খলা নেই। গরমে আর পারছি না। বাচ্চাদের নিয়ে চলে যাচ্ছি।’
তীব্র গরমে দীর্ঘ সারি ও বিশৃঙ্খলা দেখে জাদুঘরে প্রবেশ না করেই অনেক দর্শনার্থীকে চলে যেতে দেখা গেছে।
Advertisement
যেখানে সাধারণ মানুষ প্রবেশ করতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বিনামূল্যের সুবিধা নিয়ে সুবিধাবঞ্চিত শিশু, প্রতিবন্ধী ও শিক্ষার্থীরাদের প্রবেশ করার অত্যন্ত দুরুহ বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া আবু হানিফ দুই ভাতিজাকে নিয়ে জাদুঘর দর্শনে এসেছেন। সোয়া ৩ টার দিকে তিনি বলেন, ‘জাদুঘর দেখলে বিনোদনের সঙ্গে জ্ঞানলাভও হয়। এজন্য দুই ভাতিজাকে নিয়ে এসেছি। প্রচণ্ড গরমের মধ্যে দুইটা থেকে অপেক্ষা করছি। যে বিশৃঙ্খলা দেখছি, ঢুকতে পারবো কিনা বুঝতে পারছি না।’
নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একজন কর্মী নাম প্রকাশ না করে বলেন, ‘লোকজনকে এতক্ষণ লাইনে দাঁড় করিয়ে ৩টা থেকে টিকিট বিক্রি করার কোনো মানে নেই। যে যখন এসেছে টিকিট দিয়ে দিলেই হতো। প্রবেশ করানো যেতো তিনটা থেকেই। তাহলে এই ঝামেলাটা হতো না। এত মানুষকে কীভাবে সামলাব।’
জাতীয় জাদুঘরের অনসাইট সুপারভাইজার কাজী রুহুল আশফাক জাগো নিউজকে বলেন, ‘আজকে আনুমানিক ১০ হাজার দর্শনার্থী হতে পারে। অ্যাভেরেজে দর্শনার্থী হয় ২ হাজারের মতো। আশা করছি আগামীকাল ১২ হাজারের মতো হতে পারে, কারণ কাল সকাল সাড়ে ১০টা থেকেই দর্শনার্থীরা প্রবেশ করতে পারবেন।’
তিনি বলেন, ‘দর্শনার্থী বেশি থাকলে একটু চাপ থাকে। আমরা সতর্ক আছি। আশা করি বড় কোনো সমস্যা হবে না।’
সুবিধাবঞ্চিত শিশু, প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও শিক্ষার্থীরা তাদের পরিচয়পত্র দেখিয়ে সৌজন্য টিকিট নিয়ে জাদুঘরে প্রবেশ করতে পারবেন বলেও জানান রুহুল আশফাক।
জাতীয় জাদুঘর সাধারণত শনি থেকে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। শুক্রবার খোলা থাকে বিকেল ৩টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত। সাপ্তাহিক বন্ধ বৃহস্পতিবার। টিকিট মূল্য প্রাপ্ত বয়স্ক ২০ টাকা ও ১২ বছরের কম বয়সীদের জন্য ১০ টাকা।
আরএমএম/এসএইচএস/এমএস