আইসল্যান্ডের ফুটবলারদের উচ্চতা গড়ে ৬ ফুটেরও বেশি। এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে লম্বা ফুটবল দলের একটি মনে করা হচ্ছে বিশ্বকাপে নবাগত এই দেশটিকে। নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগে আর্জেন্টাইনরা অকপকে স্বীকার করে নিয়েছিল, আইসল্যান্ডের ফুটবলারদের উচ্চতাকেই সবচেয়ে বেশি ভয় তাদের। অবশেষে সেই শঙ্কাই সত্যি প্রমাণিত হলো। আর্জেন্টিনাকে উচ্চতা দিয়েই রুখে দিলো আইসল্যান্ডিকরা।
Advertisement
আইসল্যান্ডের যে চারজন মূল ডিফেন্ডার, তাদের সবারই উচ্চতা ৬ ফুট ১ ইঞ্চির বেশি। সেখানে আর্জেন্টাইনদের উচ্চতা গড়ে ৫ ফুট ৮ ইঞ্চি। আর্জেন্টিনার চেয়ে অন্তত ৫ থেকে ৬ ইঞ্চি লম্বা আইসল্যান্ডের ফুটবলাররা। একদিকে যেমন দীর্ঘদেহী, অন্যদিকে আর্জেন্টাইনদের চেয়ে লম্বা পা।
এই দুই সুবিধার কারণে মাটি কিংবা আকাশ- কোনো জায়গাকেই সঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারেননি লিওনেল মেসি, সার্জিও আগুয়েরোরা। মেসি যেই না একটি বল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করবেন, তখনই পেছনে থেকে এসে লম্বা পা বাড়িয়ে দিয়ে সেই বলটি নষ্ট করে দিলেন আইসল্যান্ডের কোনো ডিফেন্ডার। পুরো ম্যাচজুড়ে এমন কাণ্ডই ঘটতে দেখা গেছে সবচেয়ে বেশি।
আইসল্যান্ডের এই শারীরিক সুবিধার চেয়েও আর্জেন্টিনার জন্য ভাগ্যও সঙ্গী ছিল না। না হয় পৃথিবীর সবচেয়ে সেরা ফুটবলারটি কেন পেনাল্টি মিস করবেন! কেন, আগেরদিন রোনালদো যে জায়গা থেকে ফ্রি-কিকে স্পেনের জালে বল জড়ালেন, সেই একই জায়গা থেকে মেসি ফ্রি-কিক মিস করবেন? মেরে দেবেনে মানব দেয়ালে!
Advertisement
সত্যি বলতে ভাগ্যটাও সঙ্গী ছিল না আর্জেন্টিনার। স্বাভাবিকভাবেই আইসল্যান্ড যেহেতু দুর্বল দল, সেহেতু তারা রক্ষণাত্মক পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নেমেছে। সে হিসেবে আইসল্যান্ড কোচ এবং খেলোয়াড়দের খেলা দেখে একটা বিষয়ই পরিস্কার হয়ে গেলো, তারা যে করেই হোক, মেসির বাম পায়ের শট নেয়াটা ঠেকানোর ফন্দি নিয়েই মাঠে নেমেছে।
মেসিকে শট নেয়ারই সুযোগ দেয়নি আইসল্যান্ড ডিফেন্ডাররা। তার বাম পা ব্লক করে দেয়ার কাজটি সঠিকভাবেই করতে পেরেছে আইসল্যান্ডিকরা। শেষ পর্যন্ত অগত্যা মেসিকে দেখা গেলো, ডান পায়েও শট নিতে। তাতেও ব্যর্থ হলেন তিনি। শেষ মুহূর্তে (৯০+২ মিনিটে) ডি বক্সের কয়েক গজ সামনে ফ্রি কিক পেয়েছিলেন। সেটিও মেরে দিলেন আকাশে।
১৭ মিনিটে প্রথম বাম পায়ের শট নেয়ার সুযোগ পান মেসি। ম্যাক্সি মেজার পাস থেকে মেসির নেয়া শট ঝাঁপিয়ে পড়ে ফিরিয়ে দেন আইসল্যান্ড গোলরক্ষক হ্যানেস হেল্ডারসন। ৩৯ মিনিটে মেসির চেষ্টাকে ব্লক করে দেন আইসল্যান্ডের ডিফেন্ডাররা। মূলতঃ মেসি বল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার আগেই দেখা যাচ্ছিল আইসল্যান্ডের কোনো ডিফেন্ডারের পা চলে আসছে তার আগে কিংবা বলটা কেড়ে নিচ্ছিল তারা।
শুধু মেসি কেন, সার্জিও আগুয়েরো, নিকোলাস ওতামেন্দি, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়া, লুকাস, বিগলিয়া, এভার বানেগা কিংবা ম্যাক্সি মেজা- কারও চেষ্টাকেই শেষ পর্যন্ত ভালো কোনো পরিণতিতে আনতে দেননি আইসল্যান্ডের দীর্ঘদেহী ডিফেন্ডাররা। শেষ মুহূর্তে গঞ্জালো হিগুয়াইনকে মাঠে নামিয়েও কোনো কাজ হলো না। বরং, আইসল্যান্ডের কঠিন ডিফেন্স ছিড়ে কোনো বল বের হলেও, সেটাকে দক্ষ হাতে ফিরিয়ে দিয়েছেন আইসল্যান্ডের গোলরক্ষক। ক্রস থেকে ভেসে আসা বল অন্য কোনো আর্জেন্টাইন খেলোয়াড়ের কাছে পৌঁছানোর আগেই বাধা দিয়ে দিচ্ছিলেন আইসল্যান্ডিকরা। শেষ পর্যন্ত জয় হলো তাদের উচ্চতারই। আর্জেন্টিনাকে ১-১ গোলে ড্র করতে বাধ্য করলো তারা।
Advertisement
আইএইচএস/