বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্স জেনারেল হাসপাতালের ঢাকার জুরাইন স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত মাকে ডাক্তার দেখাতে এনেছেন ইয়াসমিন বেগম। সঙ্গে ছয় বছরের মেয়ে তাসনুভা। ইয়াসমিন ডা. জহিরুল ইসলামের কক্ষের সামনে মায়ের কাছে বাচ্চা রেখে পরীক্ষা-নিরীক্ষার কাগজপত্র নিয়ে দৌড়াদৌড়ি করছেন। কিন্তু তাসনুভা কান্নাজুড়ে দিয়েছে। আশপাশের অনেকেই ‘আম্মু কেন কাদছ’, ‘এই যে আঙ্কেল’- বলে তাসনুভার কান্না থামানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু ফল হলো উল্টো, কান্নার বেগ আরও বেড়ে গেল।
Advertisement
তাসনুভার নানী সাহেরা খাতুন বলেন, ‘ফ্ল্যাটে সারাদিন একা একা থাকে। অন্য বাচ্চাদের সঙ্গে মিশে কোথাও একটু খেলবে তার উপায় নেই। এখন বেশি মানুষ দেখলেই কাঁদে, ভয় পায়।’
রাজধানীসহ আলো ঝলমলে শহরগুলোতে এভাবেই বেড়ে উঠছে শিশুরা। শহরে খেলার মাঠ ও খোলা জায়গার অভাব। যেটুকু আছে দখল-দূষণে তাও প্রায় পরিত্যক্ত। মনোবিজ্ঞানী, শিক্ষাবিদ ও নগরবিদরা বলছেন, খেলাধুলা ও নির্মল বিনোদন ছাড়া কোনোভাবেই শিশুদের সুস্থ মানসিক বিকাশ সম্ভব নয়। এসবের অভাবে শিশুরা পূর্ণ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারবে না।
তারা আরও বলছেন, শিশুদের অপূর্ণ মানসিক বিকাশের ফল ইতোমধ্যে আমরা ভোগ করতে শুরু করেছি। কিশোরদেরও ভয়ঙ্কর অপরাধে জড়িয়ে পড়ার খবর প্রায়ই পত্রিকার পাতায় আসছে। বেড়েই চলছে অসহিষ্ণুতা। মানসিক সুস্থ বিকাশের অভাবে তরুণরা জড়িয়ে পড়ছেন জঙ্গিবাদসহ নানা সহিংস কর্মকাণ্ডে।
Advertisement
এ ধারা থেকে উত্তরণের পথ না বের হলে আগামীতে আরও ভয়াবহ সামাজিক বিপর্যয় অপেক্ষা করছে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. কামাল উদ্দিন জাগো নিউজকে বলেন, ‘প্লেটো’র মতে শৈশবকালীন খেলা হচ্ছে পরবর্তী জীবনের জ্ঞানের ভিত্তি। খেলার প্রধান উদ্দেশ্য আনন্দলাভ হলেও শিশুর বিকাশের জন্য খেলা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে সাটনি স্মিথ (১৯৭১) বলেছেন, যে চারটি মূল প্রক্রিয়ায় (অনুকরণ, অনুসন্ধান, পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং গঠন) আমরা পৃথিবী সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করি, শিশুর খেলা সেই চারটি প্রক্রিয়া নিয়েই গঠিত।’
তিনি বলেন, ‘শুধু শারীরিক নয়, একাধারে শিশুর মানসিক, সামাজিক, আবেগিক ও ভাষাগত বিকাশের ক্ষেত্রেও খেলার ভূমিকা স্বীকার না করলেই নয়। খেলার মাধ্যমে শিশুর সৃজনশীলতা, কল্পনাশক্তি, সামাজিক জ্ঞানবোধ, সহযোগিতাপূর্ণ মনোভাব এবং নেতৃত্বগুণ বিকশিত হয়। খেলার মাধ্যমে শিশু তার আত্মকেন্দ্রিক জগত থেকে বেরিয়ে এসে ক্রমেই সামাজিক হয়ে ওঠে। শিশুর মানসিক বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে নৈতিকতার বিকাশও ঘটতে থাকে খেলার মাধ্যমে।’
‘খোলা জায়গা, খেলার মাঠের অভাবে শৈশব-কৈশোরের স্বভাবজাত খেলাধুলায় মেতে উঠতে পারছে না শিশুরা। এতে কোমলমতি শিশুরা মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে। হতাশা, বিষণ্নতা, অবসাদ ও খিটখিটে মেজাজ তাদের সঙ্গী হয়ে দাঁড়াচ্ছে। তাদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে অসহিষ্ণু মনোভাব। শিশুর অপূর্ণ মানসিক বিকাশের প্রকাশ নানাভাবে হতে পারে। মানুষ জঙ্গিবাদে জড়াতে পারে। মাদকাসক্ত হতে পারে, সমাজবিরোধী কাজ লিপ্ত হতে পারে।’
Advertisement
অধ্যাপক কামাল উদ্দিন আরও বলেন, ‘আমরা গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা রাখি কিন্তু শিশুদের খেলার জন্য জায়গা রাখি না। যে দেশের মানুষের কাছে শিশুর চেয়ে গাড়ি অগ্রাধিকার বেশি, সেই দেশ তো ভয়াবহ পরিণতির দিকে যাবে- এটাই স্বাভাবিক। খেলাধুলা না করা ও শিশুদের সুস্থ ধারায় বিকাশের সুযোগ না দেয়ার কারণে এর ভয়াবহ ফল আরও পাঁচ বছর পর আমরা দেখতে পাব।’
বাড়িঘরসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ, গ্যারেজ নির্মাণ, ময়লা-আবর্জনা ফেলাসহ নানাভাবে দখল হওয়ায় রাজধানীতে ক্রমেই দুর্লভ হয়ে উঠছে খেলার মাঠ ও খোলা স্থান।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুযায়ী, ১৯৭০ সালে ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ১৮ লাখ। তখন নগর কর্তৃপক্ষের হাতে অর্ধশতাধিক খেলার মাঠ ছিল। প্রতিটি স্কুল ও মহল্লায় ছিল মাঠ, খোলা জায়গা। কিন্তু এখন ঢাকার জনসংখ্যা দেড় কোটি ছাড়িয়েছে। ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনে মাঠ রয়েছে মাত্র ২৪টি। এখন খোলা জায়গা খুঁজে পাওয়াই দুষ্কর।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) ১৫টি খেলার মাঠ রয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে খেলার মাঠ রয়েছে নয়টি। তালিকায় থাকা মাঠগুলোর মধ্যে কিছু রয়েছে ব্যবহারের অনুপযোগী। দখলের পর যেটুকু আছে তাতে খেলার পরিবেশ নেই, ধুলাবালি ও ময়লা-আবর্জনায় পূর্ণ। রাজধানীর ধূপখোলা ও গোলাপবাগ মাঠ গিয়ে এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে। এছাড়া অভিজাত পাড়ার মাঠগুলো বিধি-নিষেধের বেড়াজালে সাধারণ মানুষকে প্রবেশের ক্ষেত্রে বাধার মুখে পড়তে হয়।
নগরবিদরা জানিয়েছেন, একটি আদর্শ নগরের বাসিন্দাদের জন্য ওই নগরের আয়তনের ২০ থেকে ২৪ শতাংশ স্থান খেলার মাঠ বা খোলা স্থান প্রয়োজন। কিন্তু সেখানে রাজধানী ঢাকার জন্য রয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ জায়গা।
সিটি কর্পোরেশনের মান অনুযায়ী, শিশু-কিশোরদের বিনোদনের জন্য প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে খেলার মাঠ থাকার কথা। অপরদিকে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) নীতিমালা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকার প্রতিটি সেক্টরে একটি করে খেলার মাঠ থাকবে। কিন্তু এসব নিয়মনীতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকেছে।
তবে ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমান প্রেক্ষাপটে নতুন করে মাঠ কিংবা খোলা জায়গা তৈরির কোনো অবস্থা নেই। তবে বিদ্যমান মাঠ ও পার্কগুলো সংস্কার করে ব্যবহার উপযোগীর উদ্যোগ তাদের রয়েছে।
নগর পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক নজরুল ইসলাম জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিশুরা গৃহবন্দি থাকলে নানারকম সমস্যা হতে পারে। শিশুদের স্বাভাবিক চাহিদাই হলো তারা খেলাধুলা করবে, উন্মুক্ত স্থানে দৌড়াদৌড়ি করবে।’
তিনি বলেন, ‘নগর পরিকল্পনা বা শহরের ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে শিশুসহ সব বয়সের মানুষের জন্য উন্মুক্ত জায়গা রাখার বিষয়টি অবশ্যই বিবেচনায় নিতে হবে। বিশেষ করে শিশু-কিশোরদের চাহিদার বিষয়টি বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। বিবেচনায় নেয়া হয় কিন্তু কতটুকু বাস্তবায়ন হয় সেটা হচ্ছে কথা। আমাদের পর্যালোচনায় দেখেছি, যেটা নির্ধারিত হয় সেটা বাস্তবায়ন হয় না।’
‘আমাদের নগরে শিশুদের খেলার মাঠ বা খোলা জায়গা খুবই অপ্রতুল ও নগণ্য। যে মানদণ্ড রয়েছে এর কাছাকাছি কিংবা ধারেকাছেও নয়।’
সমস্যা সমাধানে পাড়াভিত্তিক ছোট ছোট মাঠ তৈরির পরামর্শ দিয়ে নজরুল ইসলাম বলেন, ‘কিশোর ও বয়স্ক নারী-পুরুষদের জন্য মহল্লাভিত্তিক মাঠ তৈরি করতে হবে।’
এ নগরবিদ আরও বলেন, ‘এ অবস্থা থেকে উত্তরণ হওয়া সম্ভব এবং উত্তরণ হতেই হবে। তা না হলে জাতির ভবিষ্যৎ নষ্ট হবে। আমরা যেটা করি, দেয়ালে একেবারে পিঠ না ঠেকা পর্যন্ত আমরা সজাগ হই না। যখন সারাদেশ মাদকে ছেয়ে গেছে, তারপর আমরা জেগে উঠলাম। সরকারকেও শিশুবান্ধব হতে হবে এবং সমাজকেও এগিয়ে আসতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘শহরে যেটুকু খেলার মাঠ আছে তাও আবার বড়দের দখলে চলে যায়। মাঠগুলো এখন ফ্র্যাঞ্চাইজ হয়ে গেছে, বিভিন্ন ক্লাবকে দিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব ক্লাবের মেম্বার না হলে মাঠে ঢোকা যাবে না। পথশিশুদের তো সেখানে ঢোকার কথা চিন্তাই করা যায় না।’
‘সবাইকে খেলার সুবিধা দিতে হবে। যারা সুবিধাবঞ্চিত তাদের জন্য আগে ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ তারা তো গাড়িতে করে দূরে কোথাও যেতে পারে না। হাতের কাছেই তাদের মাঠ দিতে হবে। নিম্ন আয়ের এলাকা হলে এলাকার ভেতরেই মাঠ দিতে হবে। এগুলো হচ্ছে নীতিমালা।’
‘শিশুদের খেলাধুলার পথ বন্ধ হওয়ার কুফল এখনই আমরা ভোগ করছি’- এমন মন্তব্য করে নগরবিদ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে। জঙ্গিবাদও আমরা দেখছি।’
তিনি বলেন, ‘এই অস্থিতিশীল অবস্থা সামাজিক-রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে হয়। ভৌত সুযোগ-সুবিধা ও বিনোদনের সুবিধা না থাকলে, অর্থপূর্ণ সময় কাটানোর সুযোগ না থাকলেও হয়। কারণ তাকে কন্ট্রোল করা যায় না। বিকল্প তো থাকতে হবে। প্রথম বিকল্পই হলো তাদের নিরাপদে খেলাধুলার ব্যবস্থা করা।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মনোরোগবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম এম এ সালাউদ্দীন কাউসার জাগো নিউজকে বলেন, ‘শিশুরা খেলাধুলার সুযোগ না পেলে নিজেকে এক্সপোজ করতে পারে না, নিজের ক্ষমতা অ্যাপ্লাই করতে পারে না। সেটা যদি তারা করতে না পারে তবে আমরা যেসব সামাজিক প্রথার মধ্যে বড় হয়েছি, যেগুলো আমরা মানি, তারা সেই ধারায় থাকে না। স্বাভাবিকভাবেই তারা অগ্রহণযোগ্য কাজের দিকে বেশি ঝোঁকে। শিশুদের সঠিক মানসিক বিকাশ না হলে পরিণতিতে মানুষ হিসেবে তার যে কাজ করার ক্ষমতা থাকে এর ব্যবহার হয় না।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) যুগ্ম-সম্পাদক স্থপতি ইকবাল হাবিব বলেন, ‘একটি নগরের আয়তনের কমপক্ষে ২০ থেকে ২৪ শতাংশ খেলার মাঠ বা খোলা জায়গা থাকতে হবে। এই মানের কথা চিন্তা করলে আমাদের অবস্থা খুবই খারাপ। এর কারণ হচ্ছে, আমরা পরিকল্পিতভাবে এগুলো সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে অপারগতা প্রকাশ করেছি। আমরা এখন পর্যন্ত আরেকটা সোহরাওয়ার্দী উদ্যান কিংবা রমনা পার্ক তৈরি করতে পারিনি। এটা প্রমাণ করে আমরা কতটা ভয়াবহ অবস্থার দিকে যাচ্ছি। ব্রিটিশ আমলের ফ্যাসিলিটি নিয়ে চলছি। গুলশান ও উত্তরার যেসব জায়গায় খেলার মাঠ ও পার্ক থাকার কথা ছিল সেগুলোর পরে প্লট বানিয়ে ব্যবসা করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শিশুদের আক্রোশ ও স্বার্থপরতা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং পারস্পরিক সমঝোতা ও সহানুভূতিশীল আচরণ সাংঘাতিকভাবে তিরোহিত হচ্ছে, চলে যাচ্ছে। এখানে বড় একটি ভূমিকা রয়েছে খেলার মাঠের। শিশুরা মাঠে বা খোলা জায়গায় খেলতে গেলে বন্ধুর সখ্যতা হয়, খেলতে খেলতে শিশু সহানুভূতি শেখে।’
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘গ্রামে শিশুরা তাও একটা পুকুরে ঝাঁপ দেয়ার সুযোগ পায়, মাঠে খেলার সুযোগ পায়। কিন্তু শহরে-বন্দরের অবস্থা খারাপ, বস্তি অঞ্চলের অবস্থা আরও খারাপ। এটাই হচ্ছে বিষয়। খেলাধুলা ছাড়া শিশুদের মেধা ও মননের বিকাশ হয় না- এটা পৃথিবীব্যাপী গবেষণায় প্রমাণিত।’
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন বলেন, ‘শারীরিক ও মানসিক সব ধরনের সুস্থতার জন্য শিশুসহ সব বয়সের মানুষের জন্য মাঠের অবদান বিশাল। কিন্তু আমাদের মাঠগুলো দিনদিন কমে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা নেই। মাঠ, উন্মুক্ত স্থান ও জলাশয় রক্ষায় আইন আছে, কিন্তু এর কোনো বাস্তবায়ন নেই।’
তিনি বলেন, ‘সরকার যে কাজ করছে তা টোকেন ও ইনএফিশিয়েন্ট। ঢাকায় মাঠ একেবারে কম ছিল না। পেশিশক্তির মাধ্যমে মাঠগুলো দখল করে নেয়া হয়েছে।’
‘ধানমন্ডির মাঠ উদ্ধারের জন্য আমাদের বড় আন্দোলন ছিল, কিন্তু আমরা যখন দেখলাম সরকার একজন বেআইনি দখলদারকে যে কোনো কারণেই উৎখাত না করার বিষয়ে অনড় তখন আমরা আন্দোলন স্থগিত রেখেছি। আন্দোলন বাদ দেইনি, দেখি প্রধানমন্ত্রী কিছু করেন কিনা? সেই আশায় থাকলাম’ বলেন মতিন।
বাপার সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, ‘খেলাধুলা ও বিনোদন না থাকলে মানুষ জঙ্গিবাদসহ নানা খারাপ কাজে জড়িয়ে যাবে- এটাই স্বাভাবিক, সেটাই আমরা দেখছি। কোনো সুস্থ ধারার মানুষ অসহিষ্ণু আচরণ করবে না, জঙ্গিবাদে জড়াবে না।’
‘শিশুকে অসুস্থ ধারায় নিয়ে যাওয়ার অন্যতম প্রধান উপাদান হচ্ছে তার খেলাধুলার সুযোগ নষ্ট করে দেয়া। নির্মল বিনোদন না থাকলে মানুষ ক্রমান্বয়ে নানা ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তার বিনোদনের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করে’- বলেন আব্দুল মতিন।
ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, মাঠ ও পার্কের উন্নয়নে প্রকল্প নেয়া হয়েছে। চলতি বছরের মধ্যেই মানুষ এর সুফল ভোগ করতে পারবে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা খান মোহাম্মদ বিলাল জাগো নিউজকে বলেন, ‘জল-সবুজের ঢাকা নামে একটি বড় প্রকল্প নিয়েছি আমরা। এই প্রকল্পের একটি অংশ হচ্ছে পার্ক ও খেলার মাঠ উন্নয়ন। প্রকল্পটি নিয়ে ৭০ থেকে ৮০ জন আর্কিটেক্ট কাজ করছে। কাজটা যাতে টেকসই হয় সেজন্য কমিউনিটিকে ইনভলবড করে (স্থানীয়দের সম্পৃক্ত) এটি করছি- তারা কীভাবে এটা ব্যবহার করবে, কীভাবে সংরক্ষণ করবে। সেভাবেই আমরা কাজটা করব। এটাকে ওউন করবে কমিউনিটি। তবে যদি মাঝে মাঝে মেরামত প্রয়োজন হয় সেটা সিটি করপোরেশন করে দেবে।’
‘৩১টি খেলার মাঠ কাম পার্কের কাজ শেষ করে আমরা আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে তা জনগণের ব্যবহারের জন্য খুলে দিতে পারব।’
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘সব বয়সের মানুষের সুস্থতার জন্য খেলার মাঠ ও খোলা জায়গা দরকার। কিন্তু আমাদের এটার অভাব রয়েছে। ঢাকা দক্ষিণের সেরকম জায়গা নেই। যেটুকু আছে পুরোটাই আমরা উন্নয়ন করছি।’
‘ভুয়া কাগজপত্র তৈরি করে অনেকে মাঠ, খোলা জায়গা দখল করে নিয়েছে’- স্বীকার করে খান মোহাম্মদ বিলাল বলেন, ‘এর সঙ্গে অসাধু কিছু কর্মচারীর যোগসাজশও রয়েছে। যখন জমি রেকর্ড হয়, জরিপ হয় তখন দখল সূত্রে সে তার নামে রেকর্ড করে নেয়। ওই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে যখন আপত্তি না আসে যখন আরেকটি রেকর্ড হয়ে যায় তখন তার তো অধিকারই জন্মে যায় যে, রেকর্ডে আমার নাম দুবার এসেছে।’
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেল) তারিক বিন ইউসুফ বলেন, ‘বর্তমান প্রেক্ষাপটে ঢাকায় খেলার মাঠ বাড়ানো কঠিন। খেলার মাঠের মতো আমাদের পার্কের সংখ্যাও কম। তবে যেগুলো আছে সেগুলো নিয়ে কাজ করছি। একটি প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা ২২টি পার্ক ও চারটি খেলার মাঠ ডেভেলপ করছি। এগুলো হবে পার্ক কাম খেলার মাঠ। সব ধরনের শিশু এমনকি প্রতিবন্ধীদের জন্যও এখানে খেলার ব্যবস্থা থাকবে। এখানে মানুষ হাঁটতেও পারবে।’
‘স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে, তারা কীভাবে খেলার মাঠ চায়- সেভাবেই ডিজাইন করছি। কোনো কোনোটির কাজ শুরু হয়ে গেছে, কোনোটির ডিজাইন করা হচ্ছে।’
‘শুধু খেলার জন্য ছয়টি মাঠ সংস্কার করা হচ্ছে’- জানিয়ে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী বলেন, ‘এর মধ্যে মোহাম্মদপুরের জাকির হোসের রোডে মাঠের কাজ শেষ হয়ে গেছে, সলিমুল্লাহ রোডের মাঠের কাজও শেষ হওয়ার পথে। উত্তরাতেও মাঠের কাজ শেষের দিকে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খেলার মাঠের অভাব রয়েছে। কিন্তু সিটি করপোরেশন তো এটা উপলব্ধি করলেই হবে না। জায়গা তো সিটি করপোরেশনের নয়। এগুলো হয় রাজউক থেকে নিতে হচ্ছে, না হয় গণপূর্ত বিভাগ থেকে নিতে হয়।’
ফার্মগেটের পার্কটি গণপূর্তের অধীনে থাকলেও সেটি ইতোমধ্যে ডিএনসিসিকে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে- জানিয়ে তারিক বিন ইউসুফ বলেন, ‘কিন্তু এর আগেই পার্কটি মেট্রোরেলের মালামাল রাখার জন্য দেয়া হয়েছে। এই অবস্থায় পার্কটি সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়া যাচ্ছে না।’
আরএমএম/এমএআর/আরআইপি