অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত জাতীয় সংসদে গতকাল বৃহস্পতিবার ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেট উপস্থাপন করেছেন। এটি দেশের ৪৭তম ও আওয়ামী লীগ সরকারের ১৮তম এবং অর্থমন্ত্রীর দ্বাদশ বাজেট প্রস্তাব। ‘সমৃদ্ধ আগামী পথযাত্রায় বাংলাদেশ’ নাম দিয়ে প্রস্তাবিত বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ লাখ ৬৪ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টায় স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশন শুরু হয়। বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। দেশের ৪৭ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি। ব্যক্তিগতভাবে অর্থমন্ত্রীর ১২তম বাজেট। এর মধ্য দিয়ে টানা দশবার বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী।
Advertisement
চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট ৪ লাখ ২৬৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট ৩ লাখ ৭১ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। অর্থাৎ আগামী বাজেটের আকার সংশোধিত বাজেট থেকে প্রায় ৯৩ হাজার কোটি টাকা বেশি। বাজেটে ব্যয় মেটাতে সরকারি অনুদানসহ আয়ের পরিমাণ ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) আয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা। মোট ঘাটতি ১ লাখ ২১ হাজার ২৪২ কোটি টাকা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে বরাদ্দ ধরা হয়েছে (এডিপি) ১ লাখ ৭৩ হাজার কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ধরা হয় ১ লাখ ৫৩ হাজার ৩৩১ কোটি টাকা। সরকারের অর্থায়নে অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা থেকে ঋণ ধরা হয়েছে ৭১ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা আছে ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা।উন্নয়ন বাজেটের মোট আকার ধরা হয়েছে ১ লাখ ৭৯ হাজার ৬৬৯ কোটি টাকা। প্রস্তাবিত অনুন্নয়ন বাজেটে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ লাখ ৮২ হাজার ৪১৫ কোটি টাকা। ব্যয়ের খাত বাড়লে আয়ের উৎসও বাড়াতে হবে। তবে বাজেট যেন জনসাধারণের জন্য বোঝা না হয়ে তাদের জন্য কল্যাণকর হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
বাজেট কেবল একটি দেশের এক বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাব নয়। একটি রাজনৈতিক সরকারের দর্শন ও অর্থনৈতিক নীতি প্রতিফলিত হয় বাজেটের মধ্য দিয়ে। সেবা থেকে উন্নয়ন, বিভিন্ন খাতে রাষ্ট্রের নাগরিকরা যেসব ক্ষেত্রে যা পেতে চান বা রাষ্ট্র যে সেবা নিশ্চিত করতে চায়, তা এই বাজেটের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হয়। ফলে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ অন্য যে কোনো ধরনের উন্নয়নও নির্ভর করে বাজেটের ওপর।
বাজেট এলে মানুষের মধ্যে যেমন আশার সঞ্চার হয় তেমনি দেখা দেয় দুর্ভাবনাও। জিনিসপত্রের দাম বাড়া থেকে শুরু করে বাড়িভাড়া ও জীবনযাত্রার সার্বিক ব্যয় আরো বাড়লো কিনা এ নিয়ে চিন্তায় থাকেন তারা। এছাড়া করের বোঝা কতোটা চাপলো, বেকারত্ব দূর করা থেকে শুরু করে নাগরিক সুযোগ সুবিধা কতোটা নিশ্চিত হলো-এ বিষয়গুলোও ভাবনায় থাকে। সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী সৃষ্টির প্রয়াস কতোটা থাকছে বা ব্যাংকের সুদের পরিমাণ কমছে কিনা-এসবও ভাবনায় থাকে। পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরাও তাকিয়ে থাকেন বাজেটের দিকে। এক্ষেত্রে কী প্রণোদনা থাকছে সেটিও দেখার বিষয়।
Advertisement
সবদিক মিলিয়ে সরকারের কাজ হচ্ছে জনসাধারণের আর্থ-সামাজিক সকল ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। এজন্য সুশাসন জরুরি। এবারের বাজেটে জনপ্রত্যাশা পূরণ হবে- এমনটিই দেখতে চায় দেশের মানুষ্।
এইচআর/এমএস