বিশেষ প্রতিবেদন

সাংগঠনিক নেত্রীর ‘পর্যবেক্ষণে’ ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীরা

ছাত্রলীগের অপেক্ষমাণ কমিটি নিয়ে সংগঠনটির সাবেক নেতাদের আগ্রহ ও কৌশল পর্যবেক্ষণ করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। পাশাপাশি পদপ্রত্যাশীদের বিষয়ে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের কাজও অব্যাহত রেখেছেন। এসব তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে কমিটির রূপরেখা নিজেই চূড়ান্ত করবেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী।

Advertisement

আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একাধিক ঘনিষ্ঠ সূত্র এমন দাবি করেছেন।

সূত্রগুলোর তথ্য মতে, ছাত্রলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের দায়িত্ব আওয়ামী লীগ সভাপতি নিজেই যখন নিয়েছেন তখন এ বিষয়ে সব খোঁজ-খবর তিনি রাখছেন। পাশাপাশি অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে যোগ্য নেতৃত্ব নির্বাচনের জন্য তিনি সময়ক্ষেপণ করছেন।

আরও পড়ুন >> সমঝোতার মাধ্যমে কমিটি, বয়স ২৮ : শেখ হাসিনা

Advertisement

সূত্রগুলোর দাবি, ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের মধ্যে যারা সংগঠনটির অতীত কমিটি এবং আসন্ন কমিটির নেতা কে হচ্ছেন- এসব বিষয়ে আগ্রহী, তাদের সে আগ্রহের কারণ পর্যবেক্ষণ করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। পাশাপাশি বিভিন্ন সংস্থা, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ও নিজস্ব সোর্সের মাধ্যমে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিচ্ছেন তিনি।

কেউ কেউ দাবি করছেন, এ সময়ক্ষেপণের মাধ্যমে ছাত্রলীগের অতি উৎসাহীদের উত্তেজনা প্রশমিত করাতে চান তিনি। পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতৃত্ব নিয়ে আগ্রহীদের আগ্রহের কারণও জানতে চান আওয়ামী লীগ সভাপতি। আওয়ামী লীগের কোনো কোনো নেতা দাবি করেছেন, নেতৃত্ব নির্বাচন করেই ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশীদের ডেকে কমিটি উপহার দেবেন শেখ হাসিনা। সেক্ষেত্রে চলতি সপ্তাহেও এ ঘোষণা আসার সম্ভাবনা দেখছেন আওয়ামী লীগ সভাপতির ঘনিষ্ঠ নেতারা।

তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ছাত্রলীগের পদ পেতে নেতাদের কাছে পদপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ অনেকটাই কমে এসেছে। এ সময়ের মধ্যে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের বিষয়টিও অনেকটা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রী। যথা সময়ে সংগঠনটির কমিটি উপহার দেবেন তিনি।

আরও পড়ুন >> ‘আমিও ছাত্রলীগের কর্মী ছিলাম’

Advertisement

আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা জানিয়েছেন, বিগত সম্মেলনগুলোর চেয়ে এবারের সম্মেলনে কিছু গুণগত পার্থক্য রয়েছে। ছাত্রলীগে মেধাবী, যোগ্য, বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের আদর্শে উজ্জীবিত ও পরিশ্রমী নেতৃত্ব নির্বাচনের পাশাপাশি সংগঠনের ব্যাপ্তি পরিবর্তন সংক্রান্ত বেশকিছু পরামর্শ এসেছে বিভিন্নভাবে। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা সবদিক বিচার-বিশ্লেষণ করে একটি কমিটি উপহার দিতে চান বলেই বিলম্ব হচ্ছে।

পদপ্রত্যাশী ও সদ্য সাবেক কমিটির উপ-গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন শাহাদাত এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আপা সময় নিয়ে কমিটি দিলে বিচক্ষণ ও যোগ্য নেতৃত্বই বের হয়ে আসবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা আপার দেয়া সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত বলে গ্রহণ করব।’

সদ্য সাবেক কমিটির অপর নেতা উপ-আপ্যায়নবিষয়ক সম্পাদক আরিফুজ্জামান আল ইমরান বলেন, আপা যাচাই-বাছাই করে কমিটি দিলে ছাত্রলীগের জন্য যোগ্য নেতৃত্ব বের হয়ে আসবে। এজন্য সময় লাগলেও বিষয়টিকে আমরা সাধুবাদ জানাই। আমরা আপার দেয়া সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। ওনার সিদ্ধান্তকে আমরা চূড়ান্তভাবে গ্রহণ করব।’

সূত্রের দাবি অনুযায়ী, পদপ্রত্যাশীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলবেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। নেতা হিসেবে দায়িত্ব তুলে দেয়ার আগে তাদের রাজনৈতিক মেধা, দক্ষতা, যোগ্যতার পরীক্ষা নিতে এ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন তিনি।

আরও পড়ুন >> ভাগ্যের উন্নয়নের জন্য ক্ষমতা নয় : প্রধানমন্ত্রী

ছাত্রলীগের ২৯তম জাতীয় দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনে সভাপতি পদে ১১১ এবং সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য ২১২ জন প্রার্থী মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেন। চলতি মাসের ১১ ও ১২ তারিখ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। তবে নতুন নেতা নির্বাচন ছাড়াই শেষ হয় সম্মেলন।

এর আগে তিন দফা ভোটের মাধ্যমে সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতা নির্বাচিত হয়। সারাদেশ থেকে আসা কাউন্সিলররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। তবে গত দুবার ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হলেও তাদের নিয়ে নানা সমালোচনা হয়। সর্বশেষ দুবারের কমিটিতে সংগঠনে বাহিরাগতদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে বলেও অভিযোগ ওঠে।

সংগঠনের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ প্রধানমন্ত্রীকে হতাশ করেছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সংগঠনের নেতৃত্ব নির্বাচনে ভোট প্রক্রিয়া বাদ দেয়ার সিদ্ধান্ত জানান শেখ হাসিনা। তিনি সিলেকশনে নেতা বানানোর সিদ্ধান্ত দেন।

এইউএ/এমএআর/এমএস