এ মুহূর্তে তিনি বাংলাদেশের পেস আক্রমণের আশা ভরসার কেন্দ্রবিন্দু। মাশরাফিবিহীন টি-টোয়েন্টি বোলিংয়ের অন্যতম প্রধান অস্ত্র। ভক্ত, সমর্থকদের ও অনুরাগীদের অনেক প্রিয়। টিম বাংলাদেশ তার ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। ভাবা হচ্ছিলো আফগানদের বল্গাহীন ও আক্রমণাত্মক উইলোবাজি নিয়ন্ত্রণে মোস্তাফিজই হবেন সবচেয়ে কার্যকর অস্ত্র।
Advertisement
কিন্তু কঠিন সত্য হলো, আফগানিস্তানের সাথে তিন ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজে কাটার মাস্টারের সার্ভিসটাই পাবে না বাংলাদেশ। তাকে ছাড়াই দেরাদুনে তিন ম্যাচ খেলতে হবে সাকিব বাহিনীকে। আজ সকালে জাতীয় দলের বহর দেরাদুন যাবার আগে কাল সন্ধ্যার পরে মোস্তাফিজ হঠাৎই টিম ম্যানেজমেন্টকে জানান, ‘আমি হাঁটতে পারছি না। আমার পায়ের অগ্রভাগে (টো‘তে) প্রচন্ড ব্যথা।’
তাৎক্ষণিকভাবে তাকে এক্সরে করতে বলা হয়। এক্সরেতে সমস্যা ধরা পরে। ওদিকে এক্সরে রিপোর্ট পেতে পেতে বেজে যায় রাত ১১টা। তাই জাতীয় দল পরিচালনা, পরিচর্যা ও তত্ত্বাবধায়ক কমিটি ক্রিকেট অপারেশন্স প্রধান আকরাম খান, প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু এবং জাতীয় দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজনসহ সবাই বিস্ময়ে বিমূঢ়, ‘সে কি কথা! এই তো দুদিন আগে (২৬ মে ) শেরে বাংলায় প্র্যাকটিস ম্যাচ খেললো। ফিল্ডিং করলো। কই মোস্তাফিজ তো ফিজিও-ট্রেনার, হেড কোচ, বোলিং কোচ, ম্যানেজার কিংবা টিম ম্যানেজমেন্টের কারো কাছে কোনোরকম অভিযোগ করেনি! দিব্যি সুস্থ মানুষ। হঠাৎ দেরাদুন যাবার আগের রাতে কেন ব্যথার কথা বলা?’
বিষয়টিতে কোনোরকম পেশাদারিত্বের ছোঁয়া নেই। সবাই হতভম্ব! বলা নেই, কওয়া নেই। কোনো প্র্যাকটিস সেশন কিংবা ম্যাচ প্র্যাকটিস ছিল না। জিম কিংবা কোন ফিজিক্যাল এক্সারসাইজ করতে গিয়ে চোট লাগেনি। তাহলে হুট করে কাল রাতে কেন ব্যথায় কঁকিয়ে ওঠা?
Advertisement
তবে কি মোস্তাফিজের পায়ের অগ্রভাগে ব্যথা আগেও ছিল। ফিজিও ও টিম ম্যানেজমেন্ট এবং নির্বাচকরা তা জেনে বুঝেই তাকে দলে নিয়েছেন? নাকি ফিজিও তাকে মনিটর করেননি? আইপিএলে ব্যথা পেয়ে আসা দেশে ফেরার পর মোস্তাফিজকে খুঁটিয়ে দেখেননি বোর্ডের ফিজিও-চিকিৎসকরা?
বোলিং কোচ, হেড কোচ, ম্যানেজার আর প্রধান নির্বাচক; এতগুলো দায়িত্বপূর্ণ পদে বসা থাকা অভিজ্ঞজনরা কি করলেন? তারা কেউ খেয়াল করেননি মোস্তাফিজ আহত, তার পায়ে ব্যথা?
কাল গভীর রাতে এ খবর চাওর হবার পর থেকেই চারিদিকে গুঞ্জন। নানা প্রশ্ন। আবার বিপরীতমুখী কথা বার্তাও আছে। প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু আর ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন, ফিজিও-ট্রেনার-বোলিং কোচ তথা টিম ম্যানেজমেন্টের কাজে কোনই গাফিলতি ছিল না। তারা কেউ জানতেনই না যে, মোস্তাফিজের পায়ের সামনের অংশে ব্যথা। সে দেরাদুন যেতেই পারবে না।
বরং আজ সকালে দিল্লিতে বিমানে ওঠার আগে জাগো নিউজের সঙ্গে আলাপে ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন ক্ষোভ ও হতাশার সুরে বলেন, ‘কি আর বলবো? ন্যাশনাল টিমের একজন অপরিহার্য প্লেয়ার। যার ওপর দল অনেকটাই নির্ভরশীল। কোথায় তার নিজের গরজ ও তাগিদ থাকবে, দল ও দেশকে সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দেবার, তার বদলে কতটা দায়িত্বহীন আচরণ দেখেন। কাউকে জানায়ইনি যে তার পায়ের অগ্রভাগে ব্যথা।’
Advertisement
সুজন আরও যোগ করেন, ‘আমার জানামতে সব ঠিকই ছিল। ২৬ মে শেরে বাংলা স্টেডিয়ামের দিবা রাত্রির প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছে মোস্তাফিজ। কোনো সমস্যা দেখিনি। সে কাউকে মুখ ফুটে কিছু বলেওনি। পরের দিন সকালে দল ভারত যাবে। তার আগের দিন সন্ধ্যার পরে বলে আমার পায়ে অসহ্য যন্ত্রণা। আমি যেতে পারবো না। আমার পক্ষে খেলা সম্ভব না। এটা কিছু হলো? জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটারের এমন আচরণ, ভাবা যায়! এ যে রীতিমতো দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা।’
একই অভিযোগ মিনহাজুল আবেদীন নান্নুরও। প্রধান নির্বাচকের ক্ষোভ মাখা সংলাপ, ‘মোস্তাফিজের কোনোরকম ইনজুরি থাকলে সেটা তার আইপিএলের দল মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ফিজিও চিকিৎসকরাই লিখিত জানাতো। এসব ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের ক্রিকেটার যারা আইপিএল খেলতে যায়, আইপিএল শেষে কার কি শারীরিক অবস্থা, কারো কোনো ইনজুরি বা সমস্যা আছে কি না, তা সংশ্লিষ্ট আইপিএল দলের ফিজিওরা লিখিত দেয়।’
‘যাতে করে ওই ক্রিকেটার দেশে ফিরলে তার ক্রিকেট বোর্ড বা টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে সেভাবে কেয়ার নিতে পারে। চিকিৎসা ও রিহ্যাবের দরকার পরলে তা করাতে পারে। কিন্তু আমরা ওসব কিছুই পাইনি। পেলে নিশ্চয়ই কোনো একটা ব্যবস্থা নেয়া হতো। কিন্তু বলা নেই, কওয়া নেই, দেশ ছাড়ার আগের রাতে হঠাৎ ব্যথার কথা বললে কি করে চলবে? এটা কোনো কথা হলো? দুদিন আগে প্র্যাকটিস ম্যাচ খেললো। ফিল্ডিংও করলো। অথচ যাবার আগের রাতে বলে আমার পায়ে ব্যথা! এ কেমন আচরণ?’-বলছিলেন ক্ষুব্ধ নান্নু।
প্রধান নির্বাচকের সোজা সাপটা কথা, ‘এটা রীতিমতো দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলা। পেশাদারিত্বের এতটুকু ছোঁয়া নেই। জাতীয় দলের ক্রিকেটারের কাছ থেকে এমন অপেশাদার আচরণ কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা বিষয়টি খুঁটিয়ে দেখবো।’
তার মানে শেষ মুহূর্তে ইনজুরির কথা জানানো এবং এক্সরেতে পায়ের অগ্রভাগে সমস্যা ধরা পরার কারণে মোস্তাফিজ টিম ম্যানেজমেন্টের জেরার মুখে পড়তে যাচ্ছেন। পরতে যাচ্ছেন না বলে পড়বেন বলাই যুক্তিযুক্ত।
জাতীয় দলের ক্রিকেটার তথা টিম ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব যে কমিটির ওপর সেই ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি চেয়ারম্যান আকরাম খান নিজে মোস্তাফিজের সঙ্গে কথা বলবেন। শুধু কথা বলাই নয়, কেন সে শেষ মুহূর্তে এমন ইনজুরির কথা জানালো, আগে কোনোরকম অভিযোগ তোলেনি কেন, তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।
আজ সকালে জাগো নিউজের সঙ্গে এ বিষয়ে আলাপ প্রসঙ্গে আকরাম খান বলেন, ‘আমি নিজে আজই মোস্তাফিজের সাথে বসবো। বসে তার সঙ্গে কথা বলবো। কেন কি কারণে সে শেষ মুহূর্তে ব্যথার কথা জানালো? আগে টিম ম্যানেজমেন্টকে কেন কিছু জানায়নি? তা খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে ব্যাখ্যা চাইবো।’
আকরাম খান ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে ওঠেন, ‘আইপিএলের ওপর শতভাগ কমিটমেন্ট থাকবে। শতভাগ সিরিয়াসনেস থাকবে আর জাতীয় দলের প্রতি এমন অপেশাদার মানসিকতা! এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা তা সহ্যও করবো না। আমি মোস্তাফিজের কাছে পুরো বিষয়টার সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা চাইবো, দেখি সে কি বলে?’
আকরামের শেষ কথা, ‘আইপিএল খেলে ব্যথা পেয়ে আসবে , জাতীয় দলকে সার্ভিস দিতে পারবে না। আর আমরা মানে ক্রিকেট বোর্ড নিজেদের অর্থায়ন ও গরজে তাদের চিকিৎসা করাবো, এটা কেমন মানসিকতা?’
ভেতরের খবর, অপেশাদার আচরণ ও কর্তব্যে গাফিলতির জন্য মোস্তাফিজের কাছে ব্যাখ্যা চাইবে বোর্ড। যা কি-না শোকজ বা কারণ দর্শানো নোটিশের সামিল। তার যথাযথ জবাব দিতে না পারলে সাসপেন্ড না হলেও অর্থ দণ্ড হয়ে যেতে পারে কাটার মাস্টারের।
এআরবি/এমএমআর/পিআর