সাহরি বরকতময় খাদ্য। মুসলিম উম্মাহর সর্বসম্মতিক্রমে সাহরি খাওয়া মোস্তাহাব। প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাও। কারণ, সাহরিতে বরকত আছে। (বুখারি ও মুসলিম) অন্য হাদিসে সাহরি খাওয়ার তাগিদ দিয়ে প্রিয়নবি বলেছেন, ‘তোমরা সাহরি খাওয়ার অভ্যাস গঠন কর। কারণ সাহরি বরকতময় খাদ্য।’ (মুসনাদে আহমদ, নাসাঈ)
Advertisement
সাহরিতে বরকত থাকার অর্থই হলো সাহরি গ্রহণে রোজাদার সারাদিন সুস্থ ও সবল থাকবে। ইবাদত-বন্দেগিতে আগ্রহের কমতি হবে না। রোজার কষ্ট হালকা হবে। প্রিয়নবির নির্দেশ পালন এবং ইয়াহুদিদের অনুসরণ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যাবে।
হজরত আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমাদের রোজা এবং আহলে কিতাব তথা ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানদের রোজার মধ্যে পার্থক্য হলো সাহরি খাওয়া। (অর্থাৎ মুসলিমরা সাহরি খায় আর ইয়াহুদি ও খ্রিস্টানরা সাহরি খায় না)।’ (মুসলিম, নাসাঈ)
আরও পড়ুন > রোজা অবস্থায় ভুলে কোনো কিছু খেয়ে ফেললে যা করবেন
Advertisement
কি খেলে সাহরি খাওয়া হয়?সাহরি খাওয়া বরকতের, তাই বলে সাহরি খাওয়া নিয়ে বাড়াবাড়ি একদমই ঠিক নয়। বিশাল আয়োজনে পেট ভরে সাহরি গ্রহণের কোনো দিক-নির্দেশনাও নেই। বরং অতিরিক্ত খাবার গ্রহণে ইবাদত-বন্দেগিতে অলসতা চলে আসে। রমজানের কাঙ্ক্ষিত ফল লাভে বঞ্চিত হয় মুমিন মুসলমান।
তাই অল্প-বিস্তর যে কোনো খাবার গ্রহণেই সাহরি খাওয়ার বিধান পালিত হয়ে যাবে। কেউ যদি খেজুর কিংবা এক ঢোক পানি বা দুধ পান করে অথবা ২/১টি বিস্কুট বা এ পরিমাণ সামান্য খাবারও খায়; তাতেও সাহরি খাওয়ার বরকত অর্জিত হয়ে যাবে।
এমনকি এ সামান্য খাবার গ্রহণে দিনভর আল্লাহ তাআলার নির্দেশে রোজা পালন, ইবাদত-বন্দেগি ও তার আনুগত্য করতে শারিরীক শক্তি পাবে। সে বান্দার জন্য ফেরেশতারা আল্লাহর দরবারে সাহরি গ্রহণকারীর জন্য দোয়া করতে থাকবেন।
হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘সাহরি খাওয়ায় বরকত আসে। সুতরাং তোমরা তা (সাহরি) খেতে ছেড়ো না; যদিও তোমরা তাতে এক ঢোক পানিও খাও। কেননা যারা সাহরি খায়, তাদের জন্য আল্লাহ রহমত বর্ষন করেন এবং ফেরেশতারা দোয়া করতে থাকেন।’ (মুসনাদে আহমাদ)
Advertisement
হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহুর বর্ণনায় এসেছে, প্রিয়নবি বলেছেন, ‘মুমিনের শ্রেষ্ঠ সাহরি হলো খেজুর।’
আরও পড়ুন > তারাবিহ নামাজের নিয়ত ও দোয়া
এমন যেন না হয়বিভিন্ন খাবারের মাধ্যমে গলা ভর্তি সাহরি গ্রহণ করে শ্বাস কষ্ট হওয়ার মতো অবস্থা যেন না হয়। যার ফলে দিনের শুরুতে ফজর সালাত আদায়ে কষ্ট হয়ে যায়। ফজর পরবর্তী সময়ে আল্লাহর জিকিরে বসার আগ্রহ ও মনোযোগ হারিয়ে যেন না যায়।
প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মানুষ উদর (পেট) ভর্তি অপেক্ষা আর কোনো নিকৃষ্টতর পাত্র পূর্ণ করে না। আদম সন্তানের জন্য খাদ্য ততটুকুই যথেষ্ট, যতটুকুতে তার পিঠ সোজা করে রাখে।
আর যদি এর চেয়ে বেশি খেতেই হয়, তাহলে সে যেন তার পেটের তিন ভাগের এক ভাগ (খাবার) আহার করে, (পেটের) তিন ভাগের ১ ভাগ (পাণীয়) পান করে এবং বাকি তিন ভাগের এক ভাগ যেন শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য খালি রাখে।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, ইবনে মাজাহ, ইবনে হিব্বান, মুসতাদরেকে হাকেম)
পরিশেষে…কম-বেশি যাই হোক ভোর রাতে সাহরি গ্রহণ অনেক বরকত ও কল্যাণের কাজ। অবহেলা ও অলসতা না করে সাহরি গ্রহণ থেকে বিরত থাকা ঠিক নয়। রোজা শুরুতে সাহরির মাধ্যমে কল্যাণকর কাজ শুরু হলে দিনভর আল্লাহর আনুগত্য ও ইবাদত-বন্দেগিতে বরকত ও কল্যাণ লাভ হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রিয়নবির ঘোষণা অনুযায়ী সাহরি করার তাওফিক দান করুন। পেট ভরে সাহরি থেকে বিরত থেকে হাদিসের নির্দেশনা অনুযায়ী সাহরিতে খাবার গ্রহণের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস