দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হল। বাঙালির জীবনে দেখা দিল আরও একটি আবেগঘন মুহূর্ত। একাত্তরে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে স্বাধীন হওয়া বাংলাদেশের মানুষের আনন্দ প্রকাশের এত বড় উপলক্ষ সহসা আসেনা। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ মহাকাশে সফল উড্ডয়নের ফলে বাংলাদেশ প্রবেশ করলো স্যাটেলাইটের যুগে। বিশ্বে মাথা উঁচু করে আকাশে জয়যাত্রা ঘোষণা করলো বাংলাদেশ। এটি নিঃসন্দেহে সাফল্যের বড় এক অধ্যায়। আমরাও যে পারি সেটি-প্রমাণ এর মধ্যে দিয়ে আবারও প্রমাণিত হল।
Advertisement
প্রথম চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার পর দ্বিতীয় দফায় মহাকাশে সফল উড্ডয়ন করে লাল সবুজের পতাকা খচিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার পথে মহাকাশে পদচিহ্ন আঁকল বাংলাদেশ। বাংলাদেশ সময় শুক্রবার দিবাগত রাত ২টা ১৪ মিনিটে বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা অঙ্গরাজ্যের কেপ ক্যানাভেরাল লঞ্চপ্যাড থেকে মহাকাশপানে যাত্রা শুরু করে।
দেশের প্রথম এ কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষেপণের মধ্য দিয়ে টেলিযোগাযোগ ও সম্প্রচারে নতুন যুগের সূচনা হলো। ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’-এর সফল উৎক্ষেপণ উপলক্ষে জনগণকে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। উৎক্ষেপণের পরপরই জাতির উদ্দেশে দেয়া ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এর মাধ্যমে আমরা স্যাটেলাইট ক্লাবের গর্বিত সদস্য হলাম। প্রবেশ করলাম এক নতুন যুগে। তিনি বলেন, জাতির জনকের স্বপ্ন বাস্তবায়নে আরেক ধাপ এগিয়ে গেলাম ‘বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১’ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে। কক্ষপথ বাংলাদেশকে ভাড়া দেয়ায় তিনি রাশিয়াকে ধন্যবাদ জানান।
একটি যোগাযোগ স্যাটেলাইট থেকে তিন ধরনের সেবা পাওয়া যায়- ১. সম্প্রচার, ২. টেলিযোগাযোগ ও ৩. ডাটা কমিউনিকেশনস। দর্শক ও শ্রোতাদের কাছে সরাসরি পৌঁছাতে টেলিভিশন এবং রেডিও স্টেশনগুলো ব্রডকাস্টিং সেবা ব্যবহার করে থাকে। ইন্টারনেট সেবা সরবরাহকারীরা (আইএসপি-ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার) ইন্টারনেট সেবা দিতে স্যাটেলাইট ব্যবহার করেন। সেল ফোন এবং ল্যান্ড ফোন অপারেটররা তাদের সাবস্ক্রাইবারদের সঙ্গে সংযোগ তৈরির জন্য স্যাটেলাইটের টেলিযোগাযোগ সেবা ব্যবহার করতে পারেন। বর্তমানে বাংলাদেশি টিভি চ্যানেলগুলো তাদের সম্প্রচারের জন্য বিদেশি মালিকানাধীন স্যাটেলাইটের ওপরে নির্ভরশীল। বঙ্গবন্ধু-১ স্যালেটলাইট এই বিদেশ নির্ভরতা কমাবে এবং আমাদেরকে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রা সঞ্চয়ে সহায়তা করবে।
Advertisement
স্যাটেলাইটটির নামকরণ করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নামে। ১৯৭৫ সালের ১৪ই জুন সর্বপ্রথম স্যাটেলাইট ভূ-কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে মহাকাশ জগতে প্রবেশ করান। বর্তমান সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সেই ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম যোগাযোগ স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণের মাধ্যমে আরও একটি স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি আরও একটি প্রতিশ্রুতি রক্ষা করলো সরকার।
বাংলাদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ির দেশ বলতো যে হেনরি কিসিঞ্জাররা সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকেই নিজস্ব স্যাটেলাইট উড়ালো বাংলাদেশ। নানা ভাবে উপেক্ষা করা বাংলাদেশ এখন ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। এরইমধ্যে আমরা উন্নয়শীল দেশের তালিকায় প্রবেশ করেছি। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মত বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে অর্থনৈতিক সক্ষমতার পরিচয় দিচ্ছে বাংলাদেশ। এছাড়া মেট্রোরেল, পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের মত বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বাংলাদেশ। মহাকাশে স্যাটেলাইট প্রেরণ সাফল্যের মুকুটে আরও একটি পালক যুক্ত করলো। বাংলাদেশের এই জয়যাত্রা অব্যাহত থাকুক-এটিই কাম্য।
এইচআর/এমএস
Advertisement