ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের মূল ক্যাম্পাসে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ফলপ্রার্থী শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ফল জানতে শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের মধ্যে ছিল ব্যাপক আগ্রহ- উদ্দীপনা। তখনও স্কুলে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশ করা হয়নি।
Advertisement
শিক্ষার্থী অভিভাবদের মধ্যে যখন উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে তখনই বেলা ২টার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফল ঘোষণা করা হয়। সঙ্গে সঙ্গেই উচ্ছ্বাস, আনন্দ আর হৈ-হুল্লোড় জোয়ারে ভেসে উঠে পুরো ভিকারুননিসা ক্যাম্পাস।
উৎকণ্ঠার অবসান ঘটিয়ে তারা মেতে উঠে আনন্দের বন্যায়। শিক্ষার্থীদের দল বাঁধা উল্লাস ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে উঠে স্কুল প্রাঙ্গণ। ঢাক-ঢোল পিটিয়ে নেচে-গেয়ে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে উঠে তারা। শিক্ষার্থীরা নিজেরাই বিগ ড্রাম, টেলো আর স্ট্রিক বাজানোর তালের ধ্বনিতে প্রকম্পিত করে তোলে পুরো স্কুল প্রাঙ্গণ।
যেন দীর্ঘ সাধনা-পরিশ্রমের কাঙ্ক্ষিত ফল পেয়ে উদযাপনে নেমেছে তারা। বিজয় চিহ্ন দেখিয়ে, ছবি আর সেলফি তুলে আনন্দ প্রকাশে ব্যস্ত তারা।
Advertisement
এবারের মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) পরীক্ষায় ভিকারুননিসা থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয় ১ হাজার ৬১২ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে মোট পাশের হার ৯৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ। মোট জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪৪২ জন। এর মধ্যে অকৃতকার্য হয়েছে ২ জন।
প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নাজনীন ফেরদৌস বলেন, ৮৯ দশমিক ৫ শতাংশ জিপিএ ৫ পেয়েছে। বিজ্ঞান ও মানবিক বিভাগে সবাই পাশ করেছে। ব্যবসা শাখায় অকৃতকার্য হয়েছে ২ জন। তিনি বলেন, গতবারের তুলনায় এবার অনেক ভালো করেছে শিক্ষার্থীরা। আমাদের সার্বিক প্রচেষ্টার ফল পেয়েছি।
তখনও স্কুল প্রাঙ্গণে চলছে শিক্ষার্থীদের বাঁধ ভাঙা উল্লাস। আর এই উল্লাসে অংশ নিয়েছে জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থী ফারজানা আক্তার শশি। বলেন, কাঙ্ক্ষিত ফল পেয়েছি নিজের চেষ্টা আর বাবা-মা শিক্ষকদের যত্নে। সব মিলিয়ে আমার পরিশ্রম অনুযায়ী কাঙ্ক্ষিত এবং আশানুরূপ ফল পেয়েছি।
এদিকে শিক্ষার্থীদের এই উল্লাস খুব কাছ দেখে নিজেও উল্লাসিত হচ্ছিলেন জিপিএ ৫ পাওয়া রাইয়ান সানজিনার মা সেলিনা বেগম। তিনি বলেন, আমার মেয়ের ফলাফল নিতে এসেছি স্কুলে। আল্লাহর রহমত এবং মেয়ের চেষ্টা-পরিশ্রমে সে জিপিএ ৫ পেয়েছে। অবশ্যই এর জন্য স্কুল, শিক্ষক-শিক্ষিকার অবদান রয়েছে। প্রতিটি বাবা-মা চান তার সন্তান ভালো ফলাফল করুক, এজন্য আমরাও চেষ্টা করি সন্তানদের ভালো করে পড়ালেখা করাতে। তবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি নীতিবাচক প্রভাব পড়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া বিষয়টি। তাই এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের ব্যাপক সতর্ক থাকা উচিত।
Advertisement
এদিকে রোববার সকালে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের নেতৃত্বে বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ফলাফলের অনুলিপি তুলে দেন।
এবার ১০ শিক্ষা বোর্ডে মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থীর মধ্যে ছাত্র ছিল ১০ লাখ ২২ হাজার ৩২০ জন। পাস করেছে সাত লাখ ৮৪ হাজার ২৪৫ জন। ছাত্রী ছিল ১০ লাখ ৪ হাজার ২৫৪ জন। পাস করেছে সাত লাখ ৯১ হাজার ৮৫৯ জন।
ফলাফলে দেখা যায়, ছাত্রদের পাসের হার ৭৬ দশমিক ৭১ শতাংশ। ছাত্রীদের হার ৭৮ দশমিক ৮৫ শতাংশ। অর্থাৎ ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের পাসের হার ২ দশমিক ১৪ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে, মোট জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ছাত্র ৫৫ হাজার ৭০১ জন। ছাত্রী ৫৪ হাজার ৯২৮ জন। এখানে ছাত্ররা-ছাত্রীদের চেয়ে এগিয়ে।
এএস/এমআরএম/পিআর