দেশি বিদেশি বই, শিক্ষকদের গবেষণাপত্র, সাময়িকিসহ ৭০ হাজারেরও বেশি সংগ্রহের সমাহার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি। তবে এতসংখ্যক কালেকশনের পরও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি হাতেগোনা।
Advertisement
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত এক দশকে কয়েকগুন শিক্ষার্থী উপস্থিতি কমে গেছে। আর লাইব্রেরি ব্যবহার না হওয়া ও বই পড়ার অভ্যাস কমে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের চিন্তাশক্তি ও সৃজনশীলতা হারিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষা বিশ্লেষকরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, লাইব্রেরিতে আছে ৩৫ হাজারের অধিক বই, ৪০ হাজারের বেশি গবেষণা পত্রিকা ও সাময়িকি। প্রতিদিন সকাল ৯টা ১৫ মিনিট থেকে রাত ৮টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত খোলা থাকে লাইব্রেরিটি। জার্নাল রুম, রেফারেন্স শাখা ও সাধারণ পাঠকক্ষ এবং বিজ্ঞান পাঠকক্ষ মিলে প্রায় ৭৫০টি আসন আছে লাইব্রেরিতে।
লাইব্রেরির রিডিং রুম রেজিস্ট্রি খাতা সূত্রে জানা যায়, মার্চ মাসে প্রতিদিনের শিক্ষার্থী উপস্থিতির গড় সংখ্যা ১০০-১২০ অথবা তার কম। এ মাসের শুরুর দিকে সেই সংখ্যা একই রকম। এপ্রিল ও মার্চের মধ্যে সর্বোচ্চ শিক্ষার্থী উপস্থিতি ১৩৯ জন।
লাইব্রেরির শিক্ষার্থী রেজিস্ট্রি কর্মকর্তা শাহজাহান আলী ও উপ লাইব্রেরিয়ান গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘আগে প্রতিদিন কমপক্ষে ৬০০ থেকে ৭০০ শিক্ষার্থী উপস্থিত হতেন লাইব্রেরিতে। এমনও সময় আছে রিডিং রুমে জায়গা দিতে পারতাম না। ২০১০ সালের পর থেকে কমে গেছে এই সংখ্যা। এখন সেই রিডিং রুমে শিক্ষার্থী উপস্থিতি ৭০-৮০ জন। কিছু শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকেন, তাদেরকে ডিসকাশন রুমেই পাওয়া যায়।’
Advertisement
সরেজমিনে দেখা যায়, রিডিং রুমের অধিকাংশ চেয়ার খালি পড়ে আছে। হাতে গোনা ১৫ থেকে ২০ জন শিক্ষার্থী বিভিন্ন কোণায় পড়ালেখা করছেন। দুইটি রুমে একই অবস্থা লক্ষ্য করা যায়।
এদিকে বই ধার নেয়ার অবস্থাও খুব নগন্য। এই সংখ্যা গত ২-৩ বছর আগেও ছিল হাজার থেকে বেশি। এখন মাসে ২০০-২৫০ শিক্ষার্থী বই ধার নিয়ে থাকেন বলে জানান গ্রন্থাগারের বই ইস্যু ও ফেরত বিভাগের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম।
এ বিষয়ে আইন বিভাগের শিক্ষার্থী তাহমিদ ওমর ও তার বন্ধুরা বলেন, ‘অনেক পুরাতন বই থাকায় বিষয় ভিত্তিক সিলেবাসের সঙ্গে বইয়ের মিল পাওয়া যায় না। প্রযুক্তির উন্নয়ন, ইন্টারনেটের ব্যবহারে সহজলভ্য হয়েছে ই-বুক, গবেষণাপত্র। তাই ই-বুক, ইন্টারনেট থেকে বইগুলো নিয়ে পড়াশোনা করা হয়। এজন্য বই ধার নেয়া কমিয়ে দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা।
লাইব্রেরি ব্যবহারে অনাগ্রহের কারণ সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয় ইনফরমেশন সায়েন্স অ্যান্ড লাইব্রেরি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. পার্থ বিপ্লব রায় বলেন, শিক্ষার্থীদের পড়ালেখার অভ্যাস দিন দিন কমে যাচ্ছে। এতই কমে যাচ্ছে যে আগামীতে লাইব্রেরিতে শিক্ষার্থীই পাওয়া যাবে কিনা সেই আশঙ্কা আছে। এছাড়া প্রযুক্তির উন্নয়নে নতুন নতুন বই, গবেষণা পেপার পাওয়া যায় বলে এরও একটা প্রভাব পড়েছে।
Advertisement
ফেরদৌস সিদ্দিকী/এফএ/আরআইপি