বিনোদন

শ্রমিকদের নিয়ে জনপ্রিয় যতো গান

বিশ্বজুড়ে প্রতি বছর ১ মে পালিত হয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস। শ্রমিক বিপ্লবের ইতিহাসে এই দিনটি বিশ্বে স্মরণীয়। ১৮৮৬ সালে অধিকার আদায়ের সংগ্রামে পুঁজিবাদের প্রাণ কেন্দ্র আমেরিকার শিকাগোর হে মার্কেটের সামনে জড়ো হয় হাজার হাজার শ্রমিক। মালিক শ্রেনির বিরুদ্ধে একসাথে শ্রমিক শ্রেণির এমন জমায়েত যা এর আগে কেউ কখনো কল্পনাও করতে পারেনি।

Advertisement

সেই আন্দোলনে মালিকশ্রেণির আদেশে পুলিশের হামলায় নিহত হয় ১০-১৫ জন শ্রমিক। মালিক শ্রেণির এমন আচরণে শ্রমিকের মৃত্যু আন্দোলনকে আরো বেগবান করে। তাদের প্রবল দাবীর মুখে মালিকপক্ষ শ্রমিকের দাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়। উন্মুক্ত হয় শ্রমিকের অধিকার আদায়ের নন্দিত এক অধ্যায়ের। সেই আন্দোলনে শিকাগো শহরে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া শ্রমিকদের স্মরণ করতে প্রতি বছরের পহেলা মে-তে পালন করা হয় ‘আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস’।

বিশ্বজুড়েই ছড়িয়ে পড়ে এই দিবসের মহাত্ম। দেশে দেশে শ্রমিকেরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য শিকাগোর এই আন্দোলনকে পাথেয় করে নিয়েছে। এই আন্দোলনকে ঘিরে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ভাষায় তৈরি হয়েছে অনেক গান। যা শ্রোতার মনোরঞ্জনের চেয়ে শ্রমিকদের প্রেরণা যুগাতেই বেশি কাজ করেছে। কারণ যেকোনো আন্দোলনেই সংগীত এক বিরাট ভুমিকা রেখেছে সবসময়।

১৮৭১ সালের মার্চ থেকে মে পর্যন্ত প্যারিস নগরী শাসন করেছিল কার্যত প্যারিস কমিউন - সমাজতন্ত্রীদের নিয়ন্ত্রিত নগর পরিষদ। কমিউন প্রতিষ্ঠিত হবার দু মাস পর ভার্সাইয়ের সেনাদলের সাথে রাস্তায় রাস্তায় রক্তাক্ত সংঘর্ষে পরাজিত হয় শ্রমিক অধিকারের এই আন্দোলন। এই সময় ফরাসি কমিউনিস্ট এবং পরিবহন কর্মচারী ইউজিন পোটিয়ে রচনা করেন বিশ্ব শ্রমিক আন্দোলনের গান ‘দ্যা ইন্টারনাসিওনালে'।

Advertisement

এরপর ১৮৮৯ সালে শিকাগোতে ‘হে মার্কেট’ দাঙ্গায় নিহত শ্রমিকদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে, প্যারিসে সমাজতন্ত্রী ও শ্রমিক পার্টি পয়লা মে আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস হিসেবে ঘোষণা করে। এর পরের বছরই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শ্রমিক ধর্মঘট ও বিক্ষোভ হয়। ১৯০৮সালে ইটালিতে সমাজতন্ত্রী আন্দোলন ‘বান্দিয়িএরা রোজা’ বা ‘লাল পতাকা’র প্রতি উৎসর্গ করে কার্লো টুৎসি, লম্বার্ডিয়ান লোক সংগীতের সুরে রচনা করেন একটি গান যা অত্যন্ত জনপ্রিয়তা লাভ করে।

এরপর ১৯১৫ সালে অভিবাসী শ্রমিক ও সংগীত রচয়িতা জো হিলকে হত্যার অভিযোগে প্রাণদন্ড দেয়া হয়। হিল অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেন বারবার। মৃত্যুর আগে শ্রমিকদের প্রতি তিনি দিয়েছিলেন বিখ্যাত বাণী ‘শোকতপ্ত হয়ো না, সংগঠিত হও’। আজও তা অম্লান হয়ে আছে। তারই নামে বাঁধা হয়েছে একটি গান যা অমরত্বের দাবি করতে পারে। বহু সংগীতশিল্পী কণ্ঠ দিয়েছেন এই গানে। তার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য প্রবল রাজনীতি সচেতন কিংবদন্তি সংগীত তারকা জোয়ান বেইজ।

বাংলা ভাষায় শ্রমিক দিবসের গানগুলোর মধ্যে বাংলায় সবচেয়ে পরিচিত হেমাঙ্গ বিশ্বাসের কণ্ঠে ‘নাম তার ছিলো জন হেনরি’ গানটি। এটি বাংলাদেশের গণসংগীতশিল্পী ফকির আলমগীরও গেয়ে থাকেন। শ্রমিকের আন্দোলনগুলোতে এই গানটি তুমুল জনপ্রিয়। মুক্তিকামী মানুষের কাছে ‘জন হেনরি’ গানটি দারুণ এক অনুপ্রেরণা। এই জন হেনরিকে নিয়ে গান বেঁধেছেন পশ্চিমবঙ্গের আরেক জীবন্ত কিংবদন্তি গায়ক ও সংগীত পরিচালক কবীর সুমনও। জীবনমুখী আরেক গায়ক নচিকেতাও শ্রমিকদের নিয়ে বেশ কিছু গান।

বাংলাদেশে শ্রমিকদের জন্য গান করে আলাদা জনপ্রিয়তা পেয়েছেন ফকির আলমগীর। তার বিখ্যাত গান ‘ও সখীনা গেছস কী না ভুইল্যা আমারে....’ শ্রমিকদেরকেই উজ্জীবীত করেছে কালে। গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিয়ে নন্দিত ব্যান্ড তারকা জেমস গেয়েছেন তুমুল জনপ্রিয় গান ‘সেলাই দিদিমনি’। মনির খানও গেয়েছেন ‘তোমরা গার্মেন্টস শ্রমিক আমি কণ্ঠ শ্রমিক’ শিরোনামের একটি গান।

Advertisement

কিংবদন্তি গায়ক এন্ড্রু কিশোর তার সুদীর্ঘ ক্যারিয়ারে শ্রমিকদের নিয়ে অনেক গানই গেয়েছেন। কাজী হায়াত পরিচালিত ‘শ্রমিক নেতা’ ছবিতে তার গাওয়া ‘আমরা শ্রমিক, করি মেহনত’ গানটি তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য। অকাল প্রয়াত গায়ক সঞ্জীব চৌধুরী শ্রমিকদের জন্য গেয়েছেন ‘চল বুবাইজান মাডি কাডা চাইয়া রইলি কার পানে’ শিরোনামের জনপ্রিয় একটি গান। ‘শুনেছি তাদের মজুরি এখনো দাওনি’ শিরোনামে একটি গান গেয়েছে জীবনমুখী শিল্পী সায়ান।

এছাড়াও কলকাতার প্রতুল মুখার্জি, পব্ন দাস বাউল, মাহমুদুজ্জামান বাবুসহ আরও বিভিন্ন প্রজন্মের শিল্পী ও অনেক গণসংগীতের দল, ব্যান্ড গানের দলও কণ্ঠে তুলেছে শ্রমিক দিবস ও শ্রমিকদের অধিকার আদায়ের গান। বাংলা চলচ্চিত্রেও শ্রমিকদের গানের বেশ সমৃদ্ধ আর্কাইভ রয়েছে।

এলএ/পিআর